পুরসভার স্কুলে শিক্ষক সংগৃহীত ছবি
পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি এবং সরকারি/ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি ছাড়াও অন্য অনেক স্কুলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়। এর মধ্যে কলকাতা পুরসভার স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ অন্যতম। সরকারি ক্ষেত্রে যেমন স্কুল সার্ভিস কমিশন বা পর্ষদ এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে, তেমনিই পুরসভার স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কলকাতা পুরসভার দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভা চালিত মোট স্কুলের সংখ্যা হল ২৬৩ টি। যার মধ্যে বাংলা, হিন্দি, উর্দু মাধ্যম, আবার বাংলা ও উর্দু মিশ্র মাধ্যম, হিন্দি ও উর্দু মিশ্র মাধ্যমের স্কুলও রয়েছে। এই স্কুলগুলি ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই রয়েছে। বর্তমানে স্কুলগুলিতে ৩২৮ জন বাংলা মাধ্যমের শিক্ষক,১০০ জন হিন্দি মাধ্যমের শিক্ষক, ১১১ জন উর্দু মাধ্যমের শিক্ষক, বাংলা-উর্দু মিশ্র মাধ্যমের ১৮ জন শিক্ষক, হিন্দি-উর্দু মিশ্র মাধ্যমের ১২ জন শিক্ষক, ৬ জন সঙ্গীতের শিক্ষক ও কারুশিল্পের ৭ জন শিক্ষক রয়েছে।
যে হেতু, পুরসভার লক্ষ্যই হল সকলের কাছে শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়া, সেই জন্য পুরসভাচালিত স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়া হয়। এ ছাড়া, মিড্-ডে-মিলের ব্যবস্থাও রয়েছে। এমনকি, স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রীদের থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয় না পুরসভার স্কুলগুলিতে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা পুরসভার শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ভর্তি হতে পারে। প্রায় ১০২ টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র কলকাতা পুরসভার দ্বারা পরিচালিত হয়।
কলকাতা পুরসভার শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি চুক্তিভিত্তিক ও দীঘমেয়াদি দুই-ই হয়। সমস্ত বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাই এই স্কুলগুলিতে নিয়োগ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০-র মার্চ-এপ্রিল মাসে হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার আয়োজন করেছিল কলকাতা পুরসভা। নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার উপর নির্ভর করেই এই নিয়োগ হয়।
সমস্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত এক ধরনের যোগ্যতার মাপকাঠি ধার্য হয়, সেগুলি হল—
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
চাকরিপ্রার্থীদের পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিল বা তার সমতুল কোনও বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করতে হবে বা তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষায় এনসিটিই স্বীকৃত দু'বছরের ডিপ্লোমা থাকতে হবে।
অথবা
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিল বা তার সমতুল কোনও বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করতে হবে এবং চার বছরের বিএলএড ডিগ্রি থাকতে হবে।
অথবা
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিল বা তার সমতুল কোনও বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করতে হবে এবং স্পেশাল এডুকেশন বা এডুকেশনে দু'বছরের ডিপ্লোমা থাকতে হবে।
অথবা
স্নাতক ও প্রাথমিক শিক্ষায় দু'বছরের ডিপ্লোমা থাকতে হবে।
অথবা
এ ছাড়া, যে বিষয়ে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন জানাতে চান, চাকরিপ্রার্থীদের উচ্চমাধ্যমিকে সেই বিষয়টি থাকতে হবে এবং স্নাতক বা সমতুল ডিগ্রির ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিই মূল বিষয় হতে হবে।
বয়ঃসীমা
এই পদগুলিতে আবেদন জানাতে গেলে সাধারণ ভাবে চাকরিপ্রার্থীদের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর ও সর্বোচ্চ বয়স ৪০ বছর ধার্য করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে এসসি/ এসটি/ বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ক্ষেত্রে ৫ বছর এবং ওবিসিদের ক্ষেত্রে ৩ বছর বয়সের ছাড় দেওয়া হয়।
আবেদন জানানোর জন্য বরাদ্দ অর্থ
একই ভাবে, এই পদগুলিতে আবেদন জানাতে গেলে আবেদনের জন্য বরাদ্দ মূল্যে অনগ্রসর প্রার্থীদের বেশ কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। তবে, আবেদনমূল্য এক বার জমা হয়ে গেলে তা আর পরীক্ষার্থীরা ফেরত পাবেন না।
নিয়োগ পদ্ধতি
চাকরিপ্রার্থীদের এই পদে নিয়োগের জন্য একটি লিখিত পরীক্ষা ও তার পরের ধাপে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় বা রাজ্যস্তরের টেট পরীক্ষা পাশ করলেই বসতে পারবেন।
বেতন
এই পদগুলিতে ২০১৯ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রোপার ষষ্ঠ বেতনক্রম অনুযায়ী আনুমানিক ২৫৯২৪ টাকা বেতন দেওয়া হয় যার মধ্যে বাড়িভাড়াবাবদ ভাতা, চিকিৎসার জন্য ভাতা ও মহার্ঘভাতাকেও ধরা হয়।
উপরোক্ত সমস্ত তথ্যই পরিবর্তন সাপেক্ষ। নতুন কোন কোন বিষয় এই চাকরির ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে, তা জানতে পরীক্ষার্থীদের কলকাতা পুরসভার পোর্টাল-https://www.mscwb.org/home/emp_notice-এ গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। পরীক্ষার আগে বাকি সময়সূচি ও পরীক্ষার সিলেবাসের বিজ্ঞপ্তিও এই পোর্টালেই পেয়ে যাবেন পরীক্ষার্থীরা। তাই, সরকারি স্কুলে নিয়োগ না হওয়ায় আফসোস না করে পুরসভার অধীনস্থ স্কুলগুলিতে হবু শিক্ষক-শিক্ষিকারা আবেদন জানাতেই পারেন।