ডিজিটাল ও আর্থিক শিক্ষায় তরুণীদের ক্ষমতায়ন সংগৃহীত ছবি
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার অল্পবয়সি মেয়েরা পারিবারিক বাজেট সামলানো ও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে রীতিমতো পারদর্শী হয়ে উঠছে। এই উন্নতির জন্য রাজ্য সরকার ও ইউনিসেফের অর্থনৈতিক ও ডিজিটাল শিক্ষার যৌথ উদ্যোগের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
পুরুলিয়ার কাশীপুর ডোবাপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে সতেরো বছরের মোনালিসা লোহার সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, এখন সে-ই তার ৪ সদস্যের পরিবারের খরচপাতি হিসাব করে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করে। এ ছাড়া, তার গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাকে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম করতেও সে সাহায্য করে। 'কন্যাশ্রী প্লাস' প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ইউনিসেফের এই যৌথ উদ্যোগ তরুণীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রুখতেই নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজ্যের অন্যতম অনগ্রসর জেলা পুরুলিয়ায় একশোরও বেশি তরুণীকে কী ভাবে পারিবারিক বাজেটের পরিকল্পনা করতে হয়, কী ভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় ও কী ভাবেই বা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে হয়, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও, তরুণীদের পিন ,ওটিপি ও সিভিভি নম্বরের মতো গোপন তথ্য কাউকে না জানানোর কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ইউনিসেফ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ার,জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান ও কলকাতার প্রকল্পগুলিতে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তাও করেছে।
মোনালিসা জানিয়েছে, ইউনিসেফের প্রশিক্ষকরা তাদের মাসিক বাজেট পরিকল্পনা ও অর্থসঞ্চয় করার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সে আরও জানিয়েছে যে, সে তার বাবা-মাকে বুঝিয়েছে,তাদের পারিবারিক খরচ মাসিক আয়ের চেয়ে কোনও ভাবেই বেশি হওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া, খাবার, জামাকাপড়, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডার ও অর্থ সঞ্চয়ের মতো বিভিন্ন ভাগে মাসিক বাজেটটি ভাগ করা উচিত বলেও সে তার বাড়ির লোককে বুঝিয়েছে।
মোনালিসা জানিয়েছে, এই আর্থিক ও ডিজিটাল শিক্ষা তাকে ও তার বন্ধুদের ভীষণ ভাবেই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা দেওয়া ও তোলা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। এমনকি, প্রতারণার জন্যে কোনও স্প্যাম কল এলে যে কোনও গোপন তথ্য যে জানানো যাবে না, সে সম্পর্কে সে তার বাবা-মাকেও সচেতন করেছে বলে জানিয়েছে। মোনালিসা ছাড়াও, শর্মিষ্ঠা মাহাতো, সুষুমা মাহাতো, সুরভী মাহাতো, মৌসুমী মণ্ডল, পূর্ণিমা মণ্ডল-সহ ঝালদা জেলা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের অন্যান্য ছাত্রীরাও ব্যাঙ্কিং ও অন্যান্য আর্থিক বিষয়ে একই রকম সচেতনতা লাভ করেছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের নগদ অর্থ হস্তান্তরণের পাশাপাশি সংযোগব্যবস্থা স্থাপন করে ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে লিঙ্গসমতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে বলেও আধিকারিকরা জানিয়েছেন। এই জন্য নতুন এই প্রকল্পকে 'কন্যাশ্রী প্লাস' প্রকল্প বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা আধিকারিক স্বপ্নদীপা বিশ্বাস জানিয়েছেন,এই বহুমুখী প্রকল্পটি কিশোরী মেয়েদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেই পরিকল্পিত হয়েছে। এ ছাড়াও, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সরকারি ক্ষেত্রে শিক্ষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আচরণগত বিষয়েও নজর দেওয়া হচ্ছে । তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পটি কিশোরীদের আর্থিক ও ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে রাজ্যে বাল্যবিবাহের হার অনেকাংশে কমিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছে।