সম্পাদকীয় ১

ক্ষমা করিবেন প্রভু

সংস্কার কাহাকে বলে, তাহার দৃষ্টান্ত স্থাপন করিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। জানাইয়া দিলেন, অতঃপর রেল আর কেন্দ্রীয় সরকারের কুক্ষিগত থাকিবে না। সরকার পরিকাঠামো গড়িয়া দিবে, তাহার রক্ষণাবেক্ষণ করিবে। কিন্তু, রেল-চলাচল হইতে যাত্রী পরিষেবা, সবই বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়া হইতেছে। রেল মন্ত্রক এখনই উঠিয়া যাইতেছে না বটে, কিন্তু তাহার আয়তন ও গুরুত্ব কার্যত বৈপ্লবিক হারে ছাঁটিয়া দিলেন প্রভু।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১২
Share:

সংস্কার কাহাকে বলে, তাহার দৃষ্টান্ত স্থাপন করিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। জানাইয়া দিলেন, অতঃপর রেল আর কেন্দ্রীয় সরকারের কুক্ষিগত থাকিবে না। সরকার পরিকাঠামো গড়িয়া দিবে, তাহার রক্ষণাবেক্ষণ করিবে। কিন্তু, রেল-চলাচল হইতে যাত্রী পরিষেবা, সবই বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়া হইতেছে। রেল মন্ত্রক এখনই উঠিয়া যাইতেছে না বটে, কিন্তু তাহার আয়তন ও গুরুত্ব কার্যত বৈপ্লবিক হারে ছাঁটিয়া দিলেন প্রভু। ভাষণে যখন তিনি নিজেকে দধীচির সহিত তুলনা করিয়া বলিলেন, আপন মন্ত্রকের হাড় তিনি ভবিষ্যতের উন্নয়নের বজ্র নির্মাণের কাজে উৎসর্গ করিয়া দিলেন, তাঁহার কথার যাথার্থ্য লইয়া কোনও সংশয় থাকিল না। অতঃপর বেসরকারি সংস্থাগুলি দেশের সব রেলপথে গাড়ি চালাইবার অধিকারী হইবে। টিকিটের দাম নির্ধারিত হইবে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে। মন্ত্রিবর দরিদ্র মানুষের কথা ভোলেন নাই। প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে তাঁহারা ট্রেনযাত্রার ভর্তুকি পাইবেন। বেসরকারি রেল সংস্থাগুলির উপর নজরদারি করিবে এক নূতন সংস্থা। তাহার গঠন হইবে ট্রাই অথবা সেবি-র অনুরূপ। প্রভু জানাইয়াছেন, রেল-চলাচলের গুরুদায়িত্ব হইতে সরিয়া আসিয়া সরকার অধিকতর জরুরি কাজগুলির দিকে নজর দিতে পারিবে।

Advertisement

রেলের পরিকাঠামোর ভার সরকারের হাতেই থাকিল, কিন্তু তাহাতেও আমূল সংস্কার করিলেন সুরেশ প্রভু। জানাইলেন, অতঃপর কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা নহে, ছয়টি কেন্দ্রীয় নিগম এই কাঠামোর তত্ত্বাবধান করিবে। দেশের সমগ্র রেলপথকে কয়েকটি অঞ্চলে পুনর্গঠিত করা হইবে, এবং প্রতিটি অঞ্চলের পরিকাঠামোর দায়িত্বের জন্য সংস্থাগুলি সরকারের নিকট দরপত্র জমা করিবে। যে সংস্থা সর্বোচ্চ দর দিবে, অঞ্চল তাহার হইবে। সেই অঞ্চলের রেল-পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করিবে সংস্থাটি। যে সংস্থাগুলি ট্রেন চালাইবে, তাহাদের নিকট হইতে পরিকাঠামো-বাবদ অর্থ আদায় করিবার অধিকারও তাহাদের হাতেই থাকিবে। রাজস্ব ভিন্ন অন্য যে পথে অর্থোপার্জন সম্ভব, সেগুলি বাছিয়া লইবার স্বাধীনতাও পরিকাঠামো সংস্থাগুলির থাকিবে। পরিকাঠামোগত ত্রুটি থাকিলে নজরদারি সংস্থা কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করিবে। এক দিকে রেল চলাচলের ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়া এবং অন্য দিকে পরিকাঠামো নির্মাণের ভারটি রাষ্ট্রের হাতে রাখিয়াও তাহাকে মন্ত্রকের আওতায় না ফেলিয়া পৃথক নিগম তৈরি করিয়া দেওয়ার জোড়া সিদ্ধান্ত যে ভারতীয় রেলকে সম্পূর্ণ নূতন স্তরে লইয়া যাইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। এত দিন যাত্রী পরিষেবার মান উন্নত করা, রেলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, রেলকে লাভজনক করিয়া তুলিবার যে পথ রেলমন্ত্রীরা খুঁজিয়া ফিরিতেন, সুরেশ প্রভু তাহার সন্ধান পাইয়াছেন। ভারতীয় অর্থনীতির ইতিহাসে তিনি গুরুত্বে ১৯৯১ সালের মনমোহন সিংহের সমান হইলেন।

— না, রেলমন্ত্রী সংসদে যে বাজেটটি পেশ করিলেন, তাহাতে এই কথাগুলির কোনওটিই নাই। রেল বাজেট মানেই যে কিছু অর্থহীন কথার ফোয়ারা, প্রভু সেই ধারাটিকে নিষ্ঠাভরে বজায় রাখিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর গুণকীর্তন করিয়াছেন, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘স্বচ্ছ ভারত’ ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-কে একই লাইনে ফেলিয়া ট্রেন চালাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু, গত বাজেটে রেলওয়ে ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের কথা ঘোষণা করিবার পর এক বৎসর কাটিয়া গেলেও কিছু হইল না কেন, বলেন নাই। রেলভাড়াকে বাজারের চাহিদার সহিত মিলাইয়া দেওয়ার প্রস্তাবটির কী হইল, তাহাতেও রেলমন্ত্রী নীরব। যে কাজগুলি বাজার অতি সহজে পারে, সেগুলি করিবার দুর্দম চেষ্টাই তাঁহার বাজেটের মূল সুর। সংস্কার যে তাঁহাদের কল্পনারও অতীত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement