National news

আসল পরীক্ষা কিন্তু আজ থেকে, কৃতকার্য হবেন তো মোদী?

আরও কঠিন একটা পরীক্ষা কিন্তু শুরু হচ্ছে আজ থেকে। বস্তুত, আজ থেকেই আসল পরীক্ষাটার শুরু। মুদ্রারহিতকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর এই প্রথম মাস-পয়লা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৪১
Share:

ফাইল চিত্র।

আরও কঠিন একটা পরীক্ষা কিন্তু শুরু হচ্ছে আজ থেকে। বস্তুত, আজ থেকেই আসল পরীক্ষাটার শুরু। মুদ্রারহিতকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর এই প্রথম মাস-পয়লা। এই দিনে এবং আগামী কয়েকটা দিনে নগদের যে বিপুল চাহিদার মুখে পড়তে চলেছে গোটা দেশ, তা মেটানোর জন্য বা অন্তত সামলানোর জন্য যে প্রস্তুতিটুকু দরকার, ভারত সরকার তা নিয়েছে তো?

Advertisement

যে কোনও মাসের পয়লা তারিখই মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ভারতের মতো যে সব দেশে জনসংখ্যার সিংহভাগেই মধ্যবিত্ত-নিন্মবিত্তের দাপট, সে সব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি তথা বাজারের জন্যও এই তারিখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা গোটা মাস ধরে অত্যাবশ্যক, নিত্যপ্রয়োজনীয়, জরুরি ও কিছুটা কম জরুরি কাজগুলো সামলে এবং সাধ্যসম্মত সাধগুলো মিটিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত জনগোষ্ঠীর ঝুলি যখন শূন্য, বাজার যখন অবসন্ন, ঠিক তখনই বসন্তের দক্ষিণ বাতায়নের মতো হাজির হয় মাস-পয়লা। সেই খোলা জালনাটা দিয়ে এক রাশ নির্মল বাতাস আসে, বিশুদ্ধ প্রাণবায়ু আসে, পরবর্তী এক মাস বেঁচে থাকার রসদ আসে। নাগরিক এবং বাজার পরবর্তী তিরিশটা দিন সে রসদে ভর করেই কাটায়। এ বারের মাস-পয়লা সেই প্রাণবায়ু পর্যাপ্ত পরিমাণে জোগাতে প্রস্তুত তো? অর্থ মন্ত্রক বলছে, প্রস্তুত, রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বলছে। কিন্তু সরকারের এই আশ্বাসবাণীতে সারবত্তা কতখানি, তারই পরীক্ষা আজ থেকে।

৮ নভেম্বর ঘোষিত হয়েছিল মুদ্রারহিতকরণের সিদ্ধান্ত। ঘরে ঘরে তত ক্ষণে গোটা মাসের রসদ মজুত। কিন্তু নগদের হাহাকার হতে পারে আঁচ করে এবং টের পেয়ে নভেম্বর জুড়ে খরচে রাশ টেনেছেন নাগরিক, যথা সম্ভব কাটছাঁট করেছেন বাজেটে। ফল স্বরূপ বাজার আরও অবসন্ন নভেম্বর অন্তে। ডিসেম্বরের মাস-পয়লা তাই আরও গুরুতর গোটা দেশের কাছে।

Advertisement

দেশের ভাল আর দশের ভালর লক্ষ্যেই মুদ্রারহিতকরণ— এ হেন তত্ত্বে বিশ্বাস রেখেই হাসি মুখে গত তিন সপ্তাহ যাবতীয় কাঠিন্য সয়ে নিয়েছে ভারত, যুঝে গিয়েছে নানা অপ্রত্যাশিত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। কিন্তু যুঝতে থাকারও শেষ রয়েছে। ন্যূনতম রসদটুকু না ঢোকে যদি ঘরে, ফি মাস-পয়লার মতো সাংসারিক বন্দোবস্তের চাকাটা যদি নতুন করে ঘুরতে শুরু না করে এ বারে, যদি ব্যবস্থাটাই থমকে দাঁড়ায় দরজায় দরজায়, তা হলে কিন্তু বিপদ রয়েছে। স্তোকবাক্যে, আশ্বাসবাণীতে, দেশের স্বার্থে লড়ার আহ্বানে এত দিন পর্যন্ত অনেক ত্রুটি মার্জনা পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মাস-পয়লার চাহিদা মেটাতে না পারলে আর পরিস্থিতি এতটা সহজ-সরল থাকবে না।

মাস শুরুর গোটা সপ্তাহ জুড়েই অতিরিক্ত নগদের জোগান থাকছে ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে, পর্যাপ্ত নোট ছাপা হয়েছে এবং আরও হচ্ছে, আশঙ্কার কোনও কারণ নেই— আশ্বাস দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। কিন্তু আশ্বাসের সঙ্গে অঙ্ক মোটেই পুরোপুরি মিলছে না। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জানাচ্ছেন, মোট যে মূল্যের মুদ্রা বাতিল হয়েছে, তার সমমূল্যের মুদ্রা ছাপাতে লেগে যাবে সাত মাস। অর্থাৎ তত দিন পর্যন্ত বাজারে পূর্ণ স্বাভাবিকতা ফেরা প্রায় অসম্ভব। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পর্যাপ্ত জোগানের তত্ত্ব তা হলে কীসের ভিত্তিতে? সবই কি সেই কথার কথা? সবই কি এ বারও স্তোকবাক্য?

ছবিটা স্পষ্ট হতে সময় লাগবে না। আজ থেকেই কেটে যাবে কুয়াশা। এ পরীক্ষায় পাশ করা নরেন্দ্র মোদীর জন্য খুব জরুরি। আপাতত কি কৃতকার্য সরকার? উত্তর আসছে শীঘ্রই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement