Work from home

কর্মজগৎ

দূরতম প্রান্তে বসিয়া কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখিবার যে নবতম ধারাটি প্রচলিত হইল, তাহাই যে কর্মজগতের ভবিতব্য, মানিতেছেন প্রায় সকলেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

হেঁশেলে ফুটিতে থাকা ডালের বাটির অনতিদূরেই শোভা পাইতেছে ল্যাপটপ। অনলাইন ক্লাসের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শিক্ষিকা। কখনও দেখা যাইতেছে, অনলাইন মিটিং চলাকালীন সদ্যোজাতের মুখে দুধের বোতল ধরিয়াছেন বাবা, কখনও মিটিংয়ের ফাঁকে বাসন মাজিতেছেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। লকডাউনের কারণে এবংবিধ চিত্র সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে বিরল নহে। কখনও তাহাতে ধরা পড়ে ব্যঙ্গের সুর, কখনও নিছক কৌতুক। কিন্তু একটি বার্তা স্পষ্ট— গত এক বৎসরে এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের আগমন কাজের জগৎটিকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করিয়াছে। এমন নহে যে, শুধুমাত্র কাজের স্থানটি পরিবর্তিত হইয়াছে। বাস্তবে, সাধারণ মানুষ নিজ জীবিকা লইয়া, কর্মক্ষেত্র লইয়া যে ভাবে ভাবিতে অভ্যস্ত, সেই ভাবনাতেই বিরাট এক পরিবর্তন আসিয়াছে। এবং এই পরিবর্তন অচিরেই মুছিবার নহে, তাহা স্থায়ী, হয়তো বা চিরস্থায়ী।

Advertisement

দূরতম প্রান্তে বসিয়া কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখিবার যে নবতম ধারাটি প্রচলিত হইল, তাহাই যে কর্মজগতের ভবিতব্য, মানিতেছেন প্রায় সকলেই। টুইটার, ফেসবুকের ন্যায় বৃহদাকার প্রতিষ্ঠানগুলি ঘোষণা করিয়াছে, তাহারা সম্পূর্ণ ভাবেই এই পথে হাঁটিবে। গবেষকরা দেখাইতেছেন, বিশ্বের কর্মশক্তির প্রায় ২০ শতাংশের পক্ষেই গৃহ হইতে কাজ করা সম্ভব। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে হয়তো কখনওই তাঁহাদের নিজ কর্মক্ষেত্রটিতে পা রাখিবার প্রয়োজন পড়িবে না। সকালে কর্মক্ষেত্রে যাইবার ব্যস্ততা, গণপরিবহণ সময়ে না পাইবার বিরক্তি, যানজটের আতঙ্ক আর কখনও তাঁহাদের স্পর্শ করিবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁহার একান্ত নিজস্ব সম্পর্কটিরও সমাপ্তি ঘটিবে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক তো শুধু বেতনের বিনিময়ে কর্ম প্রদানই নহে। তাহা আরও বিস্তৃত, আরও গভীর। সেই সম্পর্ক সহকর্মীদের সঙ্গে, কাজের ক্ষুদ্র পরিসরটুকুর সঙ্গে, এমনকি কম্পিউটারটিরও সঙ্গে। সেই সম্পর্ক ছিঁড়িল। কিন্তু তাহাতে যে আকাশ ভাঙিয়া পড়িল, এমনও নহে। বরং গবেষণায় দেখা গিয়াছে, অনেকেই জানাইয়াছেন, এই নূতন ব্যবস্থা তাঁহাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করিয়াছে। গৃহ সান্নিধ্যে, যাতায়াতের উদ্বেগ মুক্ত হইয়া তাঁহারা বাড়তি উদ্যমটুকু নিজ কর্মে নিয়োগ করিতে পারিতেছেন। সর্বোপরি, কর্মক্ষেত্রের সময়ের বাহিরে কেহ নূতন কিছু শিখিতেছেন, কেহ ক্ষুদ্র ব্যবসায় হাত পাকাইতেছেন, কেহ নিজ শখ মিটাইতেছেন।

কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। নূতন এই ধারায় লক্ষ রাখিতে হইবে, কর্মীর কাজের সময়টি যেন অ-নির্দিষ্ট না হইয়া পড়ে। গৃহ হইতে কাজ— অতএব চব্বিশ ঘণ্টাই কর্মী নিজ কর্মজগতে নিমগ্ন থাকিবেন— এমন মানসিকতা পরিত্যাজ্য। ভারসাম্য বজায় রাখিবার দায়িত্ব কর্মীর পাশাপাশি সংস্থারও বটে। গৃহ হইতে জীবিকা সামলাইবার সুযোগ সকলের সমান থাকে না। শুধুমাত্র সুযোগের অভাবে তাঁহারা যাহাতে পিছাইয়া না পড়েন, দেখিতে হইবে সেই বিষয়টিও। ভারতের ন্যায় দেশে অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই সেই বিভাজন স্পষ্ট। পরিকাঠামো গড়িয়া তুলিবার ক্ষেত্রেও ভারত বহু পিছাইয়া আছে। সুতরাং, প্রতিকূলতা বিস্তর। দ্রুত তাহার সমাধানও প্রয়োজন। আগামী দিনগুলি অনিশ্চিত। নিঃসন্দেহে যাঁহারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানাইয়া লইবেন, তাঁহারাই টিকিয়া থাকিবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement