ছবি :সংগৃগীত।
নিজেকে এমন হাস্যাস্পদ করে তুললেন কোন বুদ্ধিতে? ন্যায়ের দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছিলেন। কিন্তু ন্যায়ের প্রতীকটিরই অবমাননা ঘটালেন। সুদীপ রায়বর্মন ঠিক কোন ধরনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে চাইলেন? যা করতে চাইলেন, আদৌ তা পারলেন কি?
ত্রিপুরা বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কের বেনজির বিক্ষোভ যে নজিরবিহীন পরিস্থিতির জন্ম দিল, তাতে গোটা দেশই হতচকিত! ভারতে সংসদীয় রীতিনীতির অবমাননা বা উল্লঙ্ঘন এই প্রথম ঘটল, তা নয় অবশ্যই। কিন্তু ত্রিপুরা বিধানসভা যে ঘটনার সাক্ষী হল, তা সংসদীয় ব্যবস্থার পক্ষে মর্যাদাহানিকর হওয়ার পাশাপাশি অর্থহীন এবং দিশাহীনও।
স্পিকারের যে ন্যায়দণ্ডটি ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক দৌড়তে শুরু করলেন, সে ন্যায়দণ্ড আসলে আইনসভার শৃঙ্খলার একটি মূর্ত প্রতীক। সেই প্রতীকটির অবমাননা যে ভাবে ঘটানো হল, তা চরম নৈরাজ্যের বার্তাবহ। সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল স্তম্ভগুলির অন্যতম হল আইনসভা। প্রতিটি স্তম্ভেরই একটি সুনির্দিষ্ট অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রয়েছে। সেই বুনিয়াদি শৃঙ্খলাটি ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা যখন হয়, তখন স্তম্ভটিই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সুদীপ রায়বর্মনের আচরণ সেই আশঙ্কার কথাই মনে করিয়ে দিল।
উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে দীর্ঘ দিনের প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছে। সেই ভাঙনকে কাজে লাগিয়েই ত্রিপুরায় শাসক বামেদের প্রধান প্রতিপক্ষ তথা বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে তৃণমূল দল তৎপর। কিন্তু তার জন্য এ কোন পথ? জনগণের আস্থা অর্জনে উদগ্রীব যাঁরা, সংসদীয় ব্যবস্থার ন্যূনতম শৃঙ্খলায় তাঁদের আস্থা নেই— এমন বার্তাই কি চারিয়ে দিলেন না সুদীপ রায়বর্মন? নিজেকে যে ভাবে হাস্যাস্পদ করে তুললেন, তাতে জনমানসে কি আদৌ কোনও ইতিবাচক বার্তা গেল?
বড় এক লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে ত্রিপুরায় কোমর বাঁধতে শুরু করেছে তৃণমূল। বিপুল রাজনৈতিক উত্থানের আশায় বুক বাঁধছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। এই প্রস্তুতি পর্বে শীর্ষ নেতৃত্বের কি আরও একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত নয়? যে পথে হাঁটলেন বা দৌড়লেন সুদীপ রায়বর্মন, সে পথ ধরে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন তো? নাকি কানাগলিতে শেষ হয়ে যাবে দৌড়? জবাবটা ত্রিপুরার তৃণমূলকেই খুঁজতে হবে।