আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। ফাইল চিত্র।
আরও একটা দিন কেটে গেল, স্বাস্থ্য সঙ্কটের সমাধান সূত্র মিলল না। রাজ্য প্রশাসনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে অব্যাহত থাকল আন্দোলন ও ইস্তফার ঢেউ। অসংযমী উপায়ে চিকিত্সক-আন্দোলনের মোকাবিলা হলে কী পরিণতি হয়, আপামর মানুষ সেটা এখন টের পাচ্ছেন।
অথচ এখন সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসা আবশ্যক হয়ে পড়েছে, এ কথা বললে কমই বলা হয়। অসংখ্য সাধারণ দরিদ্র মানুষ, যাঁরা সরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল থাকেন, বস্তুত তা ছাড়া অন্য কোনও উপায় তাঁদের কাছে থাকে না। পড়ছেন গভীর সঙ্কটে। জুনিয়র ডাক্তাররা যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, যুক্তি ও আবেগ দুই দিয়েই বিচার করলে সমাধান সূত্র যে খুব অধরা লাগে তাও নয়। তাঁরা নিরাপত্তা চান, এনআরএস-এর হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চান, এবং সর্বোপরি চান যথাযথ পরিকাঠামো। এবং, এই প্রতিশ্রুতিগুলো রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরএস হাসপাতালে এসে আন্দোলনকারীদের সামনে ঘোষণা করুন, এই তাঁদের দাবি। দাবির প্রথমাংশ নিয়ে সরকারের মধ্যেও দ্বিমত নেই। বস্তুত প্রশাসনের তরফ থেকে ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘোষণাও করা হয়েছে। তা হলে বাকিরইল একমাত্র একটি শর্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরএসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করবেন অথবা করবেন না তার উপর। অর্থাত্ রাজ্যের এই মুহূর্তের যাবতীয় সঙ্কট মোচনের পথ রয়েছে দু’ভাবে— হয় জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের দাবির প্রশ্নে অনড় অবস্থান থেকে সরে আসুন অথবা মুখ্যমন্ত্রী তিনিও তাঁর অবস্থান থেকে সরে এনআরএস হাসপাতালে যান। দুই পক্ষই এখনও পর্যন্ত অনমনীয়। সঙ্কট ক্রমাগত আরও গভীর হয়েই চলেছে।
কোনও একটা পক্ষকে নমনীয় হতে হবে। এক দিকে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, অন্য দিকে রয়েছেন তাঁর সন্তানতুল্য জুনিয়র ডাক্তাররা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি একবার ভেবে দেখবেন, ঈষত্ নমনীয়তা দেখালে দ্রুত সমস্ত সঙ্কটের নিরসন সম্ভব? এটা ঠিক, আন্দোলনকারীদের একাংশের ব্যবহারে মুখ্যমন্ত্রী অসম্মানিত হয়েছেন। কিন্তু এ রাজ্যের অসংখ্য সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ছাত্র-যৌবনের আবেগকে সম্মান জানিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন থেকে উঠে আসা এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি পারবেন না তাঁর সম্মান-অসম্মানের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে রাখতে হবে চাবিকাঠি তাঁরই হাতে। এই রাজ্যের সাধারণ মানুষ তাঁরই হাতে সুখ-দুঃখ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি তুলে দিয়েছেন। আজ এমন সঙ্কটের দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেরিয়ে আসুন নবান্নের বৃত্ত থেকে, এসে দাঁড়ান এনআরএস চত্বরে, মুখোমুখি হন আন্দোলনকারীদের। এবং দেখুন চিচিং ফাঁকের মন্ত্র তাঁরই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে, বেরিয়ে আসছে শত সঙ্কট মোচনের মন্ত্র।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
অন্যথায়, তাঁর দিকে প্রশ্নের আঙুল উঠবে। আঙুল তুলবে ইতিহাস।