ফাইল চিত্র
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনী ফলাফলের পর মায়াবতী কেমন আছেন, কী ভাবিতেছেন? রাজনৈতিক যোগবিয়োগের অঙ্কে যে এই বার তিনি বড় রকমের ভুল করিয়া বসিয়াছেন, এই কথা কি তিনি মানিতেছেন? মায়াবতী চির কালই ভারতীয় রাজনীতিতে দর কষাকষির খেলায় দক্ষ বলিয়া খ্যাত কিংবা কুখ্যাত। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁহার সেই খেলার পরিসরটি তিনি নিজেই খানিকটা ছোট করিয়া ফেলিলেন। বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সহিত জোট বাঁধিবার ব্যাপারে এতখানি জিদ না রাখিলেই আখেরে তাঁহার সুবিধা হইত, বিধানসভা ভোটে নিজের দলিত ভিত্তিটিও তাহাতে মার খাইত না, সামনের লোকসভা ভোটেও আরও বেশি গুরুত্বের সহিত তাঁহাকে গ্রহণ করা হইত। বিশেষত ছত্তীসগঢ়ে অজিত জোগীর সহিত সন্ধিস্থাপন তাঁহার একটি বিরাট হিসাবের ভুল। সম্ভবত প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ও পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী অজিত জোগী ও তিনি উভয়েই ভাবিয়াছিলেন যে অনেকখানি সাফল্য পকেটে পুরিয়া ‘কিং-মেকার’ হিসাবে সেই রাজ্যে আবির্ভূত হইবেন— হয়তো বা কর্নাটকের কুমারস্বামীর ন্যায় জোগী মহাশয় নিজেই মুখ্যমন্ত্রীর আসনখানি অলঙ্কৃত করিবেন। কিন্তু ভবি ভুলিল না। জনজাতি-দলিত অধ্যুষিত রাজ্যটিতে যে কেবল বিজেপি ধুইয়া মুছিয়া গিয়া কংগ্রেসের প্রবল উত্থান ঘটিল, তাহাই নয়, মায়াবতী-জোগী জোটও কোনও রকম সুবিধা করিতে পারিল না। মায়াবতীর প্রাপ্ত আসন এক হইতে দুই হইল ঠিকই, কিন্তু তাঁহার প্রাপ্ত ভোট শতাংশ ২০১৩ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধ শতাংশ কমিল। মধ্যপ্রদেশেও ২৩০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মায়াবতীর বিএসপি মাত্র দুইটি পাইল। প্রাপ্ত ভোট শতাংশও ২০১৩ সালের তুলনায় দেড় শতাংশ কমিল। একমাত্র রাজস্থানেই বহুজন সমাজ পার্টি কিছুটা ভোট বাড়াইতে সক্ষম হইল।
পরিস্থিতি দেখিয়া শুনিয়া মায়াবতী ঘোষণা করিতে বাধ্য হইলেন যে, ভ্রান্তি বিভ্রান্তি দূর হটুক, তিনি কংগ্রেসের সহিতই আছেন। বিজেপিকে হারানোই তাঁহার প্রধান লক্ষ্য, সুতরাং মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে তিনি সরাসরি কংগ্রেসকে সমর্থন করিতে আগাইয়া আসিবেন। গত্যন্তর ছিল না। প্রাপ্ত ভোট শতাংশ কমিবার অর্থ পরিষ্কার: যাহা তাঁহার নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক হইবার কথা, সেই দলিত সমাজেও কংগ্রেস তাঁহার ভোট কাটিয়া লইয়াছে। ভোট-উত্তর জোট তৈরি ছাড়াও এই বিষয়টি নিশ্চয় মায়াবতীকে পৃথক ভাবে উদ্বিগ্ন রাখিয়াছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই তথ্যটি তাঁহার নিকট গুরুত্বপূর্ণ হইবার কথা।
এত সবের মধ্যে রুপালি রেখা একটিই। যে হেতু মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কংগ্রেসের জয় নেহাত ছোট ব্যবধানে, লোকসভার আগে কংগ্রেসের পক্ষেও আত্মম্ভরী হইবার সুযোগ কম। আর, তেলঙ্গানার দৃষ্টান্ত তো আছেই, যেখানে রাজ্যভিত্তিক আঞ্চলিক পার্টির কাছে কংগ্রেসকে সমূহ পরাভব স্বীকার করিতে হইয়াছে। সব মিলাইয়া আগামী দিনগুলিতে কংগ্রেসের পক্ষে সঙ্গত কাজ হইবে, আঞ্চলিক ও আইডেন্টিটি-ভিত্তিক দলগুলির জন্য নিজের দরজা যত দূর সম্ভব খুলিয়া রাখা। রাহুল গাঁধী যে ভাবে মধ্য ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয়ের পরও দলের প্রতিক্রিয়াকে নিচু তারে বাঁধিয়া রাখিতে সমর্থ হইয়াছেন, তাহা হইতে আন্দাজ করা যায়, যে মহাগঠবন্ধনে মায়াবতী জল ঢালিয়া দিয়াছিলেন বলিয়া আগে মনে হইয়াছিল, কংগ্রেস আবার তাহাতে সর্বশক্তি দিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িবে। এবং সম্ভবত, পূর্বের তুলনায় আর একটু সৌহার্দমুখী মায়াবতীকে পাইবে, নেত্রী হয়তো শেষ পর্যন্ত বুঝিতে বাধ্য হইয়াছেন যে, নিজের দিনগুলি সোনার খাঁচা হইতে এক বার নির্গত হইবার পর ভারতীয় রাজনীতিতে ফিরিয়া আসিতে চাহিলে স্পর্ধা বস্তুটি পরিহার করাই বুদ্ধির কাজ।