অবজ্ঞা করতে পারছেন না কেন?

এ রাজ্যের ভোটেও যে সাম্প্রদায়িকতার রং লেগে যাওয়া সম্ভব, তা তো এ বারের ভোটের ফলই প্রমাণ করে দিয়েছে। 

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০০:৪৩
Share:

ক্রুদ্ধ: ভাটপাড়ায় তাঁর গাড়ি ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠার পরেই রাস্তায় নেমে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেড়ে যান ভিড়ের দিকে। ধমক দিতে থাকেন পুলিশকর্তাদেরও। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

আবার সেই একই ছবি তৈরি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি শুনে আবার মেজাজ হারালেন। এবং যত তীব্র হল তাঁর প্রতিক্রিয়া, ততই নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল পরিস্থিতি।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রান্তে প্রথম বার তৈরি হয়েছিল এই দৃশ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় যাওয়ার পথের ধারে জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়েছিলেন কয়েক জন। গাড়ি থামিয়ে ঝটিতি নেমে পড়েছিলেন মমতা, তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপও হয়েছিল। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিল্পাঞ্চলে যা ঘটল, তা আরও বড় আকার নিল। একাধিক বার উঠল স্লোগান, একাধিক বার গাড়ি থামিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে নামলেন মমতা।
এ ভাবে প্রতিক্রিয়া আপনি কেন দেখাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? জয় শ্রী রাম বলা তো কোনও অপরাধ নয়! এ রাজ্যের ভোটেও যে সাম্প্রদায়িকতার রং লেগে যাওয়া সম্ভব, তা তো এ বারের ভোটের ফলই প্রমাণ করে দিয়েছে। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী যদি বার বার জয় শ্রী রাম-কে গালাগালি বলে উল্লেখ করেন, তা হলে একাংশের মধ্যে যে অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, সে কথা কি আপনি বুঝতে পারছেন না?

Advertisement

আরও পড়ুন: সামনে আয় দেখি, কত বড় বিজেপির বাচ্চা: মমতা

নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন কলকাতায় রোড শো করতে এসেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাঁর রোড শোয়ের যাত্রাপথের ধার থেকে 'গো ব্যাক' স্লোগান উঠেছিল এবং আমরা দেখেছিলাম, বিজেপি কর্মীরা রোড শো ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন স্লোগানদাতাদের উপরে। ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা হয়েছিল। স্লোগান দেওয়া বা অমিত শাহকে গো ব্যাক বলাও গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই ওই আক্রমণকে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে আক্রমণ হিসেবেই দেখা হয়েছিল। এখন যদি জয় শ্রী রাম শুনে বার বার এ ভাবে মেজাজ হারান মমতা, তা হলেও ওই একই সমালোচনা হবে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বাতাবরণ বাংলায় নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে দিয়েছে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেই। এ বার প্রাদেশিকতার ভিত্তিতে আরও এক ধরনের বিভাজন তৈরি হতে দেওয়া কিন্তু খুব একটা স্বাস্থ্যকর হবে না। রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সে কথা তো মাথায় রাখতেই হবে।

যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় দেখলেই স্লোগান দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন, তাঁরা যে খুব মহান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করছেন, তা কিন্তু নয়। গণতান্ত্রিক অধিকারের বাইরে গিয়ে হয়ত কিছু করছেন না, কিন্তু খুব অনুসরণীয় রাজনৈতিক রুচির পরিচয়ও তাঁরা দিচ্ছেন না। অতএব এঁদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারত অবজ্ঞা। কারা স্লোগান দিলেন, কী স্লোগান দিলেন, পাত্তাই দেওয়ার প্রয়োজন নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি গুরুত্ব না দিলেই এই স্লোগানদাতাদের উৎসাহে ভাটা পড়বে। তিনি গুরুত্ব না দিলেই জয় শ্রী রাম স্লোগানকে কেন্দ্র করে খবর হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়া বন্ধ হবে। অবজ্ঞাই যেখানে নিমেষে সমাধান করতে পারে সব সমস্যার, সেখানে এতটা সময় ব্যয় করার কোনও কারণ রয়েছে কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement