White Supremacy

কিসের নির্বাচন

রাজনীতির রং-নির্বিশেষে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচনের সহিত সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের সহাবস্থান মনে করাইয়া দেয়, গণতন্ত্রের শরীর ভাল নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০১:১১
Share:

ছবি: এএফপি।

নির্বাচন ঘিরিয়া আমেরিকায় হিংসাত্মক ঘটনা অব্যাহত রহিল গত কিছু দিন। দলীয় সমাবেশ মাত্রেই সংঘর্ষের ভিত্তিভূমি হইবার কথা নহে, কিন্তু গত কিছু কাল ধরিয়াই ট্রাম্প-সমর্থকদের জমায়েত হইয়া দাঁড়াইয়াছিল উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ-আশ্রয়ী হিংসাস্থল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন নির্বাচনের সহিত দেশে নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র কিনিতে ঢল নামিবার সম্পর্ক থাকিবার কথা নহে, কিন্তু তাহাই দেখা গেল আমেরিকায়, বাধাবন্ধহীন। আমেরিকায় নাগরিকের অস্ত্র কিনিবার অধিকার আছে, কিন্তু কিনিবার পূর্বে পুলিশ ক্রেতার পূর্ব ইতিহাস লইয়া খোঁজখবর করিয়া থাকে। হিসাব অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি নব্বই লক্ষ আমেরিকান নাগরিকের ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’-এর পর দেখা গিয়াছে, মোট ক্রেতার ৪০ শতাংশই আগ্নেয়াস্ত্র কিনিতেছেন প্রথম বার। বহু নাগরিকের বক্তব্য, নির্বাচন-আবহে গৃহযুদ্ধ বাধিবার ভয়ে তাঁহারা শঙ্কিত। ভোট নিতান্ত রাজনৈতিক ব্যাপার, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্য হইতে রাষ্ট্রপ্রধান বাছিবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, কিন্তু তাহার ফল দাঁড়াইতেছে এই।

Advertisement

ভারতে বসিয়া দেখিয়াশুনিয়া মনে হইতে পারে, ইহা আর নূতন কী। নির্বাচন হইবে আর রাজনৈতিক বা সামাজিক হিংসার ঘটনা ঘটিবে না, তাহাই তো অস্বাভাবিক। এই ধারণার মূলে রহিয়াছে গণতন্ত্রের ব্যর্থতাকে প্রকারান্তরে স্বীকার করিয়া লওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হইবে না, বরং কারচুপি, বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন ও প্রয়োজনে শারীরিক হিংসার মাত্রাছাড়া ব্যবহার হইবে— এমত ব্যর্থতা। বলা হইবে যে নাগরিকেরা নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়া নির্বাচিত করিতে পারেন, কিন্তু কার্যকালে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াইয়া দিয়া নাগরিককে ঘরে বসিয়া থাকিতে বা একমাত্র বিশেষ প্রার্থীকেই ভোট দিতে বাধ্য করা হইবে— এহেন অন্যায়। বহু মত ও বহু পথকে, কিংবা মতাদর্শ ও পছন্দমাফিক নিজ নিজ মত ও পথকে সমর্থন করিবার মুক্ত আবহ সুনিশ্চিত না করিলে যে নির্বাচন প্রক্রিয়াও সুষ্ঠু হইতে পারে না, নাগরিক হইতে রাজনীতিক সকলেই তাহা জানেন। তথাপি ভারতে প্রতিটি নির্বাচনে নিয়ম করিয়া হিংসার অনিয়ম সাধিত হয়। দুই বছর আগে এই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট মনে পড়িতে পারে, ৩৪ শতাংশেরও বেশি আসনে বিরোধী দল প্রার্থীই দিতে পারে নাই, শাসক দল অবলীলায় জয়ী হইয়াছিল। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে উন্নয়ন নহে, নিয়ামক হইয়া দাঁড়াইয়াছিল বিভেদের রাজনীতি, এক মুজফ্ফরনগরেই হিংসার ঘটনা বাড়িয়াছিল পাঁচ গুণ। রাজনীতির রং-নির্বিশেষে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচনের সহিত সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের সহাবস্থান মনে করাইয়া দেয়, গণতন্ত্রের শরীর ভাল নাই।

আমেরিকা ও ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিস্তর তফাত, জনমানস ও মূল্যবোধের মানদণ্ডও পরস্পর তুলনীয় নহে। কিন্তু বুঝিতে হইবে, নির্বাচনকে ঘিরিয়া যে কোনও হিংসার ঘটনা, এমনকি প্ররোচনাও গণতন্ত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে হতবল এবং সার্বিক ভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই অগণতান্ত্রিক করিয়া তুলে। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব করিতে গেলে আগে নাগরিককে মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস লইতে দিতে হয়। সেই মুক্তি না থাকিলে কাহারই-বা ভোট, কে-ই বা নেতা, কিসেরই-বা নির্বাচন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement