সীতারামের হাত ধরে কোন পথে এগোবে সিপিএম

ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর সিপিএম নেতারা এত কথা বললেও বলছেন না যে, আসুন, একটা মুক্তচিন্তার আবহ তৈরি করা যাক। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালভয়াবহ বিপর্যয়ের পর সিপিএম নেতারা এত কথা বললেও বলছেন না যে, আসুন, একটা মুক্তচিন্তার আবহ তৈরি করা যাক। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share:

প্রকাশ কারাট সরে গেলেন।

Advertisement

সিপিএমের নতুন সাধারণ সম্পাদক হলেন সীতারাম ইয়েচুরি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সীতারাম কি পারবেন এ বার এই দেশে এক নতুন বাম দলের নতুন ভবিষ্যৎ রচনা করতে? কাজটা সহজ নয়, শুধুমাত্র কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন দলের চরিত্র বদলে দিতে পারে না। এর জন্য চাই এক সম্পূর্ণ নতুন ভাবনা। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। কমিউনিজম ফসিল হয়ে যাচ্ছে এমন কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা ভুল ভাবছেন এমনটাই প্রমাণ করতে হবে। জানাতে হবে, কমিউনিস্ট পার্টি জুরাসিক পার্কের ডাইনোসরের মতো অবলুপ্ত নয়। বরং গোটা পৃথিবী জুড়ে বামপন্থা নব কলেবরে তার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাচ্ছে। ক্যারিবিয়ান সমুদ্রতীরবর্তী বহু রাষ্ট্রে নব নব রূপে ফিরে আসছে সাম্যবাদ। লাতিন আমেরিকার বামপন্থা নিয়ে গবেষণা চলছে অনেক।

বাম দলগুলির ভিতর এ দেশের সবচেয়ে বড় দল হল সিপিএম। সিপিআই বয়সে প্রবীণতর হলেও সাংগঠনিক শক্তি সিপিএমের চেয়ে কম। ফরওয়ার্ড ব্লক বা আরএসপি-র সাংগঠনিক শক্তি আরও কম। বিপর্যয়ের পরও সিপিএম নামক দলটির সবচেয়ে বড় সাংগঠনিক শক্তির অবকাশ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেই। ’৭৭ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে প্রায় ৩৪ বছর ধরে শাসক দল ছিল সিপিএম। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪ বছরের এই বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। স্বভাবতই শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই বাম রাজনীতিতে এক চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই বিষম বিপর্যয়ের পর এ বার ভারতীয় বামপন্থা কোন পথে এগোবে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

Advertisement

সীতারাম দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সত্যি সত্যিই কি ভাবনাচিন্তার মন্থন হবে? না কি যে ভাবে যে পথে এত দিন চলেছেন ভারতীয় কমিউনিস্টরা ঠিক সে ভাবেই চলবেন? দলের ব্যর্থতার মূল্যায়ণ করতে গিয়ে মতাদর্শগত ভিত্তি নিয়েও কি সত্যি সত্যিই কোনও খোলামেলা বিতর্ক হবে?

পুঁজিবাদী সমাজের সঙ্কট বাস্তবতা। এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বহু প্রান্তে সমাজতন্ত্রের আদর্শগত প্রাসঙ্গিকতা বহু ক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে এ-ও সত্য। এরিক হবসবমের মতো ঐতিহাসিকও নিজেকে স্বঘোষিত মাকর্সবাদী তাত্ত্বিক বলে পরিচয় দিতেন। তিনিও বলেছিলেন, পুঁজিবাদী সঙ্কটে পুঁজিবাদী উদারবাদী তাত্ত্বিকেরাই সমাজতন্ত্রের উপাদান সমাজতন্ত্রীদের চেয়েও বেশি করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করছেন।

লাতিন আমেরিকা গ্রীস, এমনকী, রাশিয়াতেও কমিউনিস্টরা আবার আগের তুলনায় বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন। ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট মুভমেন্ট’ দেখেও এ দেশের বহু কমিউনিস্ট উৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মূল প্রশ্নটা অন্য। পৃথিবীর অন্য প্রান্তগুলিতে মাকর্সবাদ নিয়ে যে রকম খোলামেলা আলোচনা হচ্ছে, তারিক আলির ‘পাইরেসি অফ ক্যারিবিয়ান’ গ্রন্থে যে সব নমুনার কথা বলা হয়েছে সে সব উপাদান নিয়ে ভারতীয় কমিউনিস্টরা ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার উপযোগী করে বামপন্থার গবেষণা করছেন কোথায়?

কলেজ জীবনের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। সে সময়ে কলকাতা শহরের বহু ছাত্রছাত্রীর মতো আমিও মাকর্সবাদের প্রতি মতাদর্শগত ভাবে বিশেষ আকৃষ্ট হয়েছিলাম। রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম, কিন্তু সে সময়ে রাজ্যে শাসক দল সিপিএম। ছাত্র সংগঠন এসএফআই। বিপ্লবের স্বপ্ন অনুপ্রেরণা ছিল। কিন্তু ক্রমশ বুঝলাম দাদাতন্ত্রের ও দলতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে অধ্যাপক প্যানেলে নিজের নাম ঢোকানোটাই ছিল অনেকের আসল লক্ষ্য। সে সময়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনা প্রবেশের ঘটনা আমাদের কোমল মাকর্সবাদী সত্তায় তীব্র আঘাত হেনেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশাল ছাত্র সংগঠন অ্যাবসা এবং ডিএসও-রা তখন জোরদার প্রচার অভিযান শুরু করেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের নয়া সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে। সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ নামক শব্দটি তখন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এমন একটা সময়ে ’৮২-’৮৩ সালে আমরা কতিপয় ছাত্র মিলে একটি নতুন পত্রিকা করেছিলাম। যার নাম ছিল ‘অন্য চোখে’। আমরা ঘোষণা করেছিলাম, মাকর্সবাদের সমস্ত ধারা নিয়েই আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে চাই। সিপিএম মাকর্স-এঙ্গেলস- লেনিন – স্টালিন ও পরবর্তীকালে মাও। এ ছাড়া অন্য কোনও ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করতে সে সময়ে উৎসাহী ছিল না। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতি বিজ্ঞানের স্নাতক স্তরেই মাকর্সবাদ নামক বিষয়টি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করে। তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু আমরা দুর্বল ক্ষীণ কণ্ঠে বলতে শুরু করি যে কেন আমরা প্লেকনভ, এমনকী, বুখারিনের মতামতও পড়ব না? কেন গ্রামশ্চি ও ট্রটস্কিকে জানব না? কেনও ইউরোকমিউনিজম পড়ব না? তখনই প্রথম টের পেলাম, সিপিএম নেতারা এত বেশি লেনিন ও স্তালিনবাদী ছিলেন যে খোলা মনে ট্রটস্কি বা গ্রামশ্চিকে নিয়ে লেখাজোকাতেও তাঁরা বেশ অসন্তুষ্ট হচ্ছেন।

রাজনৈতিক দলের এই যে প্রাতিষ্ঠানিক মতাদর্শের ঘেরাটোপ, এই যে ডু’স অ্যান্ড ডোন্টস— এটাই বড় ভয়ঙ্কর। মুক্তচিন্তার অবকাশ আজ সিপিএমে আদৌ আছে? আজও কিন্তু সেই একই অর্ডার বা শৃঙ্খলার নামে কঠোর অনুশাসন দেখতে পাচ্ছি। এডওয়ার্ড বোনো তাঁর ল্যাটেরাল থিংকিং-এর চিন্তার দর্শন বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন যে জ্ঞানের জগতে দু’ধরনের মানসিকতা হয়। একটি হল ‘ওয়াটার লজিক’ আর অন্যটা ‘রক লজিক’। সক্রেটিস অ্যারিস্টটলকেও অবশ্য ‘রক লজিক’-এর গোষ্ঠীভুক্ত করেন। তাঁর মনে হয়েছিল এই গ্রিক দার্শনিকরাও যথেষ্ট নমনীয় ছিলেন না। ‘ওয়াটার লজিক’ মানেই হল ‘লেট আস এগ্রি টু ডিসএগ্রি’। সেটাই হল সভ্যতার মস্ত বড় অবদান। ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে সেই বহুত্ববাদ আছে। আকবরের দীন-ই-ইলাহি অথবা আরও অতীতে অশোকের কনফেডারেশন।

আজ এত বছর পরে সিপিএম নেতাদের মধ্যে সেই মানসিকতাই কি দেখতে পাচ্ছি না? সেই কলেজ জীবনে প্লেখানভ বা গ্রামশ্চি পড়ার জন্য কমিউনিস্ট দাদারা বিরক্ত হয়েছিলেন। আর আজ, এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর সিপিএম নেতারা এত কথা বললেও এ কথা বলছেন না যে, আসুন, একটা মুক্তচিন্তার আবহ তৈরি করা যাক। ‘কারাভান’ পত্রিকায় রামচন্দ্র গুহর সঙ্গে প্রকাশ কারাটের বিতর্ক পড়েছিলাম। দু’জনের বক্তব্য পড়েই আমি হতাশ হয়েছিলাম। কারণ, কারাট মনে করছেন যে রাম গুহ লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন তাই তাঁর মনে এই সব প্রশ্ন জাগছে। আবার রাম গুহ মনে করেন যে কারাট এক জন স্তালিনপন্থী চিন্তাবিদ। সেই কারণে তাঁর ভাবনাচিন্তাও এই ‘অর্ডার’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্তালিনকে এক স্বৈরাচারী শাসক বলে মনে করেন রাম গুহ, এর ফলে কারাটের চিন্তার মধ্যে অচলায়তন আছে আর কারাটও তাঁকে আসলে ‘রক লজিক’ আক্রান্ত বলে মনে করছেন। কিছু মাকর্সবাদী শব্দজব্দে তিনিও রাম গুহকে আক্রমণ করছেন। দু’জনের ক্ষেত্রেই খোলামেলা আলোচনার অবকাশ নেই বললেই চলে।

তা হলে কলেজ জীবনে যে প্রশ্ন নিছক ছাত্র-জিজ্ঞাসা থেকে আমরা উদযাপন করেছিলাম, আজও সেই একই ভাবনা প্রাসঙ্গিক। প্রাজ্ঞ ভারতীয় চিন্তাবিদরাও এ কথা বলছেন। এরিক হবসবম নিজে কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ভাবনা দ্বারা আক্রান্ত নন। সেই হবসবম কী বলছেন? তাঁর সম্ভবত শেষ বইটিতে গ্রামশ্চিকে নিয়ে তিনি একটি পৃথক প্রবন্ধ লেখেন। তাতে কিন্তু লেখেন যে আজও গ্রামশ্চি কেন ও কী ভাবে কতখানি প্রাসঙ্গিক? গ্রামশ্চি নিছক ইতালির এক কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন এমন নয়। তিনি ইউরোকমিউনিস্ট হিসেবে তাঁকে চিহ্নিত করতেও রাজি ছিলেন না। হবসবমও বলেছেন, গোটা দুনিয়ার মাকর্সবাদের বিকাশের ক্ষেত্রে গ্রামশ্চির ভূমিকা অনেকখানি।

হবসবম আরও বলেন যে, গ্রামশ্চি হয়তো তাঁর রচনায় অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করেননি, কিন্তু রাজনীতির বিষয়ে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সত্যি কথা বলতে, হবসবম মনে করিয়ে দেন যে ‘হেজেমনি’ শব্দটিও কিন্তু সমাজতত্ত্বে গ্রামশ্চির অবদান। যাঁরা গ্রামশ্চির ভক্ত নন, বরং মনে করেন গ্রামশ্চির মধ্যে এক ধরনের বুর্জোয়া বিচ্যুতি দেখা দিয়েছিল, তাঁরাও কিন্তু হেজেমনি শব্দটিকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছেন।

এখানে ভারতীয় কমিউনিস্টদের ভারত-বোধ খুব বড় একটি প্রশ্ন। সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়। আমি দেখেছি সীতারাম নিজে খুব ভারতীয়। নেহরুবাদী বহুত্ববাদ তাঁর খুব প্রিয় বিষয়। মোগল ও ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের পরিবর্তনের ধারা তাঁর পড়ার প্রিয় বিষয়। বিশ্ব সাম্যবাদের পতন বার্লিন দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে হয়েছে বলে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ১৯১৭ সালে বলশেভিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা হচ্ছে তা-ই তাসের ঘরের মতো লুটিয়ে পড়ছে কেন? ১৯৪৯ সালে চিনে যে বিপ্লব হচ্ছে আর আজ সেই চিনের সমাজতন্ত্রকে সমাজতন্ত্র বলা হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ আজও ভারতের বামপন্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ। এত বছর বাম শাসনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের মাকর্সবাদ নিয়েও পৃথক ভাবে আলোচনার সুযোগ আছে। শোভন দত্তগুপ্ত বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার ফলে এক ধরনের কেরানি কমিউনিজম গড়ে উঠেছে। একে বলা হয় গভার্নমেন্টালিজম। ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও দলতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের স্ববিরোধ নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। জ্যোতিবাবুর সময়েও আমরা বলতাম, এ রাজ্যের উন্নয়নের প্রধান সমস্যা হল শিল্প বনাম ট্রেড ইউনিয়নের সংঘাত। এ এক ধরনের স্ববিরোধ। ধর্মঘট ও ‘নেহি চলেগা’ স্লোগান উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে এসেও এই সংঘাতের ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ থাকতে দেখছি।

প্রশ্ন একটাই, অতঃকিম? সীতারামের হাত ধরে কোন পথে এগোবে তা হলে সিপিএম?

গত বারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএমের এক প্রবীণ বিচক্ষণ নেতা আমাকে বলেছিলেন, কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা বিরোধী দলে আসার পরেও সেটাই হতে পারে না যেটা ষাটের দশকে বিরোধী দল হিসেবে ছিল। কারণ, সময় বদলে গিয়েছে। বিরোধী দলের ভূমিকাটাও বদলে গিয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলি পর্যন্ত এখন অনেক বেশি সৃজনমূলক। শিল্পকে ধ্বংস করে দেওয়া ট্রেড ইউনিয়নিজম এখন অগ্রাধিকার নয়। বরং শিল্প পরিবেশ গড়ে তোলাটা ট্রেড ইউনিয়নেরও অন্যতম কাজ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সিপিএমের আচরণে কি সেই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে? উল্টে যে ভাবে বনধের রাজনীতি হচ্ছে, তাতে তো মনে হচ্ছে সিপিএম এখনও আছে সিপিএমেই। সিপিএম নেতাদেরও মনে হচ্ছে, এই নেতিবাচক আন্দোলনটিই বোধহয় পশ্চিমবঙ্গে খায় বেশি। এই নেতিবাচক আন্দোলন করে একদা সিপিএম ক্ষমতায় এসেছিল। আবার সেই আন্দোলনের মাধ্যমে বামপন্থী স্টাইলে মমতা ক্ষমতায় এসেছেন। একে বলা হয়েছিল কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাজনীতি। সিপিএমের এখন সেই পথে এগোনো উচিত কি না, সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে নতুন সিপিএম তৈরি করতে হলে এই প্রশ্নের জবাবটিও দলকে দিতে হবে।

সব শেষ বিষয়টি হল যে, বাম দলকে তার শিকড়টি ভারতীয় দর্শনের মধ্যেই খুঁজতে হবে। চিন যদি বলতে পারে, তারা চিনা বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজতন্ত্র করবে, তা হলে আমরা কেন বলতে পারি না, আমরা ভারতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভারতীয় দল চালাব? সরোজ মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীতে আছে, যে দিন কমিউনিস্ট পার্টির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে গেল, সে দিন কলকাতায় পার্টি কমিউনে ছিল খুশির দিন। কাকাবাবু সকলকে মাংস রান্না করে খাওয়ালেন। কিন্তু সে দিন কাকাবাবু দলীয় নেতাদের বলেছিলেন, নতুন সাইনবোর্ড লাগানো হবে। নতুন লেটারহেড তৈরি করা হবে। কেননা দল এখন আর নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, নতুন দলের নাম যেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি না লেখা হয়। লিখতে হবে মার্কর্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। ব্র্যাকেটে লেখা থাকবে কমিন টার্নের ভারতীয় শাখা। তার মানে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট পার্টির ভারতীয় শাখা হিসেবে প্রথম থেকেই পার্টিটা তৈরি হয়েছিল। ভারতীয়ত্বের ভিত্তিতে নয়। এমনকী, মেরঠ ষড়যন্ত্র মামলায় কমিউনিস্ট পার্টির অধিকাংশ নেতা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির উপর স্তালিনের নিয়ন্ত্রণ আরও না কি বেড়ে যায়। এটাও একটি গবেষণার বিষয়।

অতএব, সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে সিপিএম কি পারবে এই সব পুরনো বিচ্যুতি থেকে এক নতুন বামপন্থী আশা জাগিয়ে তুলতে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement