Coronavirus in West Bengal

রাখিবে কে

প্রস্তাবিত বৈঠকটি ছিল ভার্চুয়াল। বিষয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা ঘিরিয়া অনিশ্চয়তা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

ছবি পিটিআই।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের এখনও কিছু দেরি আছে, রাজ্যপাল মহাশয় এখনই অত উতলা হইবেন না— মন্তব্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মন্তব্যটি মনোযোগ আকর্ষণ করে, কেননা সরাসরি রাজ্যপালের কাজকর্মকে বিজেপির দলীয় নির্বাচন-যুদ্ধের সহিত যুক্ত করিয়া মুখ্যমন্ত্রী ইতিপূর্বে কিছু বলিয়াছেন বলিয়া জানা নাই। তাঁহার তির্যকতা অপ্রত্যাশিত নহে, অযৌক্তিকও নহে। বাস্তবিক, রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ইতিমধ্যেই এক ঐতিহাসিকতা অর্জন করিয়া ফেলিয়াছেন। যে ভাবে তিনি প্রকাশ্যত এবং স্পষ্টত রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় নিজেকে নিযুক্ত করিয়াছেন, ভারতের বিবিধ রাজনীতি-কলঙ্কিত রাজ্যপালদের তালিকাতেও তাহা একেবারে প্রথম সারিতে স্থান পাইবার দাবি রাখে। অনেক সময় অপ্রয়োজনেও সেই বিরোধিতা তিনি জারি রাখেন, খানিকটা যেন বিরুদ্ধ আবহাওয়াটি টিকাইয়া রাখিবার জন্যই। নিন্দুকেরা যখন বলেন, রাজ্যপাল মহাশয়ই পশ্চিমবঙ্গের সর্বাগ্রগণ্য বিরোধী নেতা, তাঁহাদের দোষ দেওয়া কঠিন। সম্প্রতি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের বৈঠকে ডাকিয়া এমনই এক অবাঞ্ছিত বিতর্কের সূচনা করিলেন তিনি। শিক্ষাঙ্গনের সঙ্কটের সুযোগ লইয়া রাজনীতির জল ঘোলা করিতে চাহিলেন। দেখা গেল, পরীক্ষাসূচি, পড়াশোনার নির্ঘণ্ট, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ ইত্যাদি ছাপাইয়া রাজ্যের তৃণমূল-শাসিত সরকার এক দিকে, অন্য দিকটির সম্মুখভাগে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন স্বয়ং রাজ্যপাল মহাশয়।

Advertisement

প্রস্তাবিত বৈঠকটি ছিল ভার্চুয়াল। বিষয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা ঘিরিয়া অনিশ্চয়তা। প্রশ্ন হইল, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় চিঠি/বার্তা না পাঠাইয়া এমন কোনও বৈঠক রাজ্যপাল ডাকিতে পারেন কি? বিশেষত এমন এক বিষয়ে যেখানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রক ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে একটি নীতি স্থির করিতে ব্যস্ত? এ বারের বিষয়টি এমনই যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আলাদা কোনও সিদ্ধান্ত লইবার কথা নহে। বিশ্বজোড়া সঙ্কটের মধ্যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মানিয়া চলিতেই তাঁহারা স্বীকৃত। রাজ্য সরকার কিছু দিন আগেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়াছিল, তাহার পর আসিল পরিবর্তিত কেন্দ্রীয় ঘোষণা। এমতাবস্থায় রাজ্যপাল আচার্য হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের সহিত বৈঠক করিতেই পারেন, কিন্তু তাহা হইতে রাজ্য সরকারকে বাদ দিবার এক্তিয়ার কিংবা যুক্তি কি তাঁহার আছে? প্রসঙ্গত, শিক্ষা রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়, সেখানে রাজ্য সরকারের দায়ই মুখ্য। রাজ্যপাল ধনখড় বলিয়াছেন, এই রাজ্যে নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির ‘খাঁচাবন্দি’ করিয়া রাখা হইতেছে। তাঁহার অভিযোগ অন্য ক্ষেত্রে সত্য কি না তাহা ভিন্ন প্রশ্ন, অন্তত এই বৈঠকের ক্ষেত্রে তাহা প্রযোজ্য নহে। এখানে রাজনীতি নহে, পদ্ধতির প্রশ্নই উঠিতেছে। বরং কেহ সেই পদ্ধতি ভাঙিয়া অগ্রসর হইতে চাহিলে নিয়মভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে রাজনীতি করিবার অভিযোগ আনা যাইতে পারে।

উপাচার্যরা, এক জন ব্যতিরেকে, কেহই বৈঠকে যোগ দেন নাই। ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ রাজ্যপাল উপাচার্যদের পরবর্তী যে চিঠি দিয়াছেন, তাহাতে হুমকির সুর স্পষ্ট— সুতরাং উপাচার্যরাও অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিধি-অনুযায়ী কাজ করিতে চাহিবার জন্য তাঁহাদের শাস্তি দিবার হুমকি দেওয়া ঠিক সভ্য গণতান্ত্রিক প্রশাসনের মধ্যে পড়ে না। এবং এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত: ছাত্রস্বার্থ। সত্যই সঙ্কটের সুরাহা চাহিলে সব পক্ষেরই মুখোমুখি বসিবার কথা: উচ্চশিক্ষা মন্ত্রকের তো বটেই। কিন্তু রাজনীতি যেখানে মারিতে বদ্ধপরিকর, ছাত্রসমাজের মঙ্গল কিংবা স্বার্থ রাখিবে কে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement