India Economy

খরচই সমাধান

সাধারণ পরিস্থিতিতে সরকার যদি বাজার হইতে ঋণগ্রহণ করে, তবে শিল্পক্ষেত্রের মুশকিল, তাহাদের জন্য যথেষ্ট টাকা পড়িয়া থাকে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share:

ছবি পিটিআই।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টও জানাইল, বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ কমিতে চলিয়াছে। ব্যাঙ্কের মতে, আনলক পর্ব শুরু হইবার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে গতির সঞ্চার হইতেছিল, বিভিন্ন রাজ্য ফের লকডাউনের পথে হাঁটায় তাহা বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে তাহার প্রভাব পড়িবে। কথাটি ভুল নহে, কিন্তু ইহা ভিন্ন রাজ্যগুলির নিকটও উপায়ান্তর নাই। ফলে, এই বাস্তবকে মানিয়া লইয়াই ভবিষ্যতের পথসন্ধান করিতে হইবে। ব্যাঙ্কের রিপোর্টে অনুমান করা হইয়াছে, যে হেতু রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ক্রমবর্ধমান, অতএব অদূর ভবিষ্যতে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ কমিবে। বস্তুত, ব্যাঙ্ক রিপোর্ট পেশ করিবার পরে পরেই অর্থমন্ত্রী জানাইলেন, সরকারের হাত ফাঁকা— অতএব রাজ্যগুলিকে জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইবে না। সে বিষয়ে আলোচনা অন্যত্র, কিন্তু এ ক্ষণে প্রশ্ন উঠিবে, বাজারে চাহিদার অভাব যেখানে এতই স্পষ্ট, সেখানে সরকার ব্যয়ে রাশ টানিলে অর্থব্যবস্থার পুনরুত্থানের কী হইবে? মে মাসে ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজে কুড়ি লক্ষ কোটি টাকা সংস্থানের কথা বলা হইলেও প্রকৃত প্রস্তাবে সেই ব্যয় যে চার লক্ষ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করে নাই, বিবিধ হিসাবে তাহা স্পষ্ট। অর্থশাস্ত্রীরা জানাইয়াছিলেন, জিডিপি-র অন্তত পাঁচ শতাংশ, অর্থাৎ দশ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের ব্যবস্থা না হইলে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হইবেই। সেই ভবিষ্যদ্বাণী অভ্রান্ত প্রমাণিত হইতেছে। পক্ষকাল পূর্বে ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন যে, এই মুহূর্তে বাজারে টাকা ঢালা ভিন্ন নিস্তারের আর পথ নাই। তিনি বলিয়াছেন, প্রয়োজনে টাকা ছাপাইয়াও খরচ করিতে হইবে। টাকা ছাপানোর পরামর্শটি কত দূর গ্রহণযোগ্য, তাহা ভিন্ন তর্ক, কিন্তু মানুষের হাতে টাকা না জোগাইলে অর্থব্যবস্থা যে ঘুরিয়া দাঁড়াইতে পারিবে না, তাহা স্পষ্ট।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকার গোড়া হইতেই ঋণের অস্ত্রে পরিস্থিতির মোকাবিলা করিতে চাহিয়াছে। সুদের হার কমাইয়া, সুদে ভর্তুকি দিয়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করিয়া আশা করিয়াছে, লগ্নি হইবে। সেই আশার মধ্যে একটি সুবিধাবাদ স্পষ্ট ছিল— তাহাতে রাজকোষ হইতে খরচ না করিয়াও ত্রাণের ব্যবস্থা করিবার ভানটি বজায় রাখা যায়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটি বুঝাইয়া দিয়াছে, অদূর ভবিষ্যতে আর সুদের হার কমিবে না। তাহার যথেষ্ট কারণও আছে— খুচরা বাজারে মূল্যস্ফীতির হার স্বস্তিজনক জায়গায় নাই। অতএব, টাকা খরচ করা ভিন্ন সরকারের হাতে আর উপায় নাই।

টাকা জোগাইবে কে? সাধারণ পরিস্থিতিতে সরকার যদি বাজার হইতে ঋণগ্রহণ করে, তবে শিল্পক্ষেত্রের মুশকিল, তাহাদের জন্য যথেষ্ট টাকা পড়িয়া থাকে না। পরিভাষায় যাহাকে বলা হয় ক্রাউডিং আউট। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি ক্ষেত্র ঋণ লইতে অনিচ্ছুক। সুতরাং, সরকার বাজারের নগদ ব্যবহার করিতে পারে। এবং, সেই টাকা খরচ করিবার ক্ষেত্রে একটিই লক্ষ্য হওয়া বিধেয়— যে পথে খরচ করিলে সর্বাপেক্ষা দ্রুত বাজারে চাহিদা বাড়িবে, এই মুহূর্তে তাহাই একমাত্র পথ। পরিকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কার, অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে এই কাজগুলি যতই গুরুত্বপূর্ণ হউক না কেন, আপাতত সেগুলি দ্বিতীয় সারিতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement