Editorial News

শোষণ নয়, প্রকৃতিকে রক্ষা করাই হোক শপথ

প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়, এ কথা আমরা জানি তো? এক বার ঘুরে দাঁড়াব, ফিরে তাকাব নিজেদের দিকে? এক বার সঙ্কল্প নেব? প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই হবে আমাদের সভ্যতার আগামী দিনের স্বপ্ন? 

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

মাউন্ট এভারেস্টে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। ছবি: এএফপি।

চমকে গেলাম আমরা, যখন দেখলাম মাউন্ট এভারেস্ট আরও একটা শিখরস্পর্শী রেকর্ডের দাবিদার হয়ে উঠল। সেই রেকর্ড কলঙ্কের। সেই রেকর্ড সভ্যতার অবমাননার। সেই রেকর্ড মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতাকে আরও একটু খাটো করে দেয়। এই লজ্জা রাখব কোথায়!

Advertisement

মাউন্ট এভারেস্ট এখন আবর্জনার স্তূপ। প্রতি বছর অনেক বেশি সংখ্যক পর্বতারোহী এভারেস্টে উঠছেন, আর এর সঙ্গেই সমান তালে বাড়ছে আবর্জনার পরিমাণ। পরিবেশবিদদের মতে, বাতিল হওয়া পর্বতারোহণের যন্ত্রাংশ থেকে মানুষের বর্জ্য— ক্রমাগত জমা হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে। এভারেস্টের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, সাগরমাথা দূষণ নিয়ন্ত্রক কমিটি (এসপিসিসি)-র প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নেপাল থেকে একটি দল এভারেস্টে উঠেছিলেন। তাঁরা ফিরেছিলেন ২৫ টন কৃত্রিম বর্জ্য এবং ১৫ টন মানুষের বর্জ্য নিয়ে। গত দু’মাসে মোট আট টনেরও বেশি বর্জ্য উদ্ধার হয়েছে এভারেস্ট থেকে।

এতগুলো বছর পর, অতএব আমরা বুঝতে শিখলাম এভারেস্টের শিখরকে চুম্বনে উদ্যত হইনি আমরা, বিরাট অভ্রংলিহ চূড়াকে শ্রদ্ধা জানানোর অভিপ্রায় ছিল না আমাদের। প্রেম নয়, আবেগ নয়, শ্রদ্ধা নয়, ভালবাসা নয়, প্রণতি নয়— আসলে আমরা নিতান্ত নগণ্য মানুষ, আমারই অহংকে স্পর্ধার জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, পদদলিত করতে চেয়েছিলাম ওই বিরাটকে। আমার অ্যাডভেঞ্চার স্পৃহা, আমার ‘ডর কে আগে জিত হ্যায়’ অহং, আমার জিগীষা ক্রমাগত আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল এভারেস্টের শিখরে, আমাজনের গভীর জঙ্গলে, সমুদ্রের গভীর স্তরে, প্রকৃতির অপার রহস্যের প্রতিটি কেন্দ্রস্থলে। পৌঁছেছি আমরা প্রতিটি জায়গায়, মানব সভ্যতার বিজয়কেতন-সহ। সভ্যতার ঘোষণা এবং অসভ্যতার হুঙ্কার সমেত।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

নিতান্ত অর্বাচীন এই আমরা কি এক বারও ভেবে দেখব প্রকৃতির সম্ভাব্য প্রতিশোধের বিধ্বংসী রূপের কথা? প্রকৃতির প্রতিটি বিন্দু, প্রতিটি কণা যে সযত্নে লালন করে আসছে আমাদের, সেই ভাবনা থেকে কত দূরে সরে গেলে তবেই মাউন্ট এভারেস্টকে আবর্জনার স্তূপে পরিণত করতে পারি আমরা! থমকে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে এ বার। সময় হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে ‘সভ্যতার’ লেনদেনের হিসাব বুঝে নেওয়ার। এই যে সম্প্রতি তীব্র গরমে ক্রমাগত কষ্ট পেতে থাকছি আমি-আপনি, এর সঙ্গে কোথাও মাউন্ট এভারেস্টের জঞ্জালের সম্পর্ক রয়েছে কি না, সেটা বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে এখন। ঠিক যতটা ঠিক যে ভাবে অত্যাচার করছি আমরা প্রকৃতি উপর, ঠিক ততটা ঠিক সে ভাবেই ‘অভিশাপ’ নেমে আসছে আমাদের উপর।

আরও পড়ুন
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আবর্জনার স্তূপ কোনটা জানেন? মাউন্ট এভারেস্ট

প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়, এ কথা আমরা জানি তো? এক বার ঘুরে দাঁড়াব, ফিরে তাকাব নিজেদের দিকে? এক বার সঙ্কল্প নেব? প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই হবে আমাদের সভ্যতার আগামী দিনের স্বপ্ন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement