‘প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে...'
‘কে যায় অমৃতধাম যাত্রী’।
‘বাবামশায়’ চলে যাচ্ছেন আগের রাতেই বুঝতে পেরেছিলেন প্রতিমা দেবী। রবীন্দ্রনাথকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন ঈশ্বর শুয়ে রয়েছেন ‘নিদ্রামগন’ হয়ে। রাত ২টো নাগাদ খবর দেওয়া হয়েছিল রানি চন্দকে। এসেই গুরুদেবের পায়ের কাছে বসে ছিলেন রানী চন্দ। ভোর চারটে থেকে প্রিয় মানুষটিকে দেখতে আসতে শুরু করলেন আত্মীয়-স্বজনরা।
সকাল ৭টা নাগাদ রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় শুরু করেন উপাসনা। গাওয়া শুরু হয়েছিল ব্রহ্মসঙ্গীত। ২২ শ্রাবণ দুপুর ১২.১০ মিনিট নাগাদ চলে গেলেন কবিগুরু। ১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ। প্রয়াত হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
দেখুন কবিগুরুর অন্তিম যাত্রার ভিডিয়ো:
প্রবল জনস্রোত উপচে পড়তে শুরু হল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। কবিগুরুর পায়ে রাশি রাশি চাঁপা ফুলে ভরিয়ে দিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা। গুরুদেবের শেষযাত্রার পালঙ্ক নির্মাণ করেন নন্দলাল বসু। সোনালি বুটি দেওয়া সেই চাদর পাতা হয়েছিল সেই পালঙ্কে। ‘রাজার রাজা-র অন্তিমযাত্রা,’ এমনটাই বলেছিলেন নন্দলাল। অসংখ্য জুঁই, বেলের মালায় ঢাকা পড়েছিল সেই পালঙ্ক। ছিল রজনীগন্ধা ও শ্বেতপদ্মও।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ উনিশ শতকে জন্মগ্রহণ করা এক বৃদ্ধের চলে যাওয়া নয়
গরদের পাঞ্জাবি, সাদা বেনারসীর জোড়, রজনীগন্ধার মালা আর কপালে শ্বেতচন্দন। তাঁকে শেষ বারের মতো চাক্ষুষ দেখতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে অনুরাগীদের ঢল নেমেছিল সে দিন শ্রাবণের ধারার মতো। মহানগরের রাজপথে বিশ্বকবির অন্তিমযাত্রায় শামিল হন অগণিত মানুষ।
আরও পড়ুন: অন্তিমযাত্রায় কবি, সেই ২২শে শ্রাবণের কয়েকটি মুহূর্ত
নিমতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল কবির। আসলে তো ‘হে পূর্ণ তব চরণের কাছে, যাহা কিছু সব আছে আছে আছে।’