Children

দয়ার বিপদ

আশ্চর্য এই যে, শিশুর এমন লাঞ্ছনা দেখিয়াও পুলিশ নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০০:১২
Share:

বেআইনি কাজ এমনই অজস্র ঘটে যে সেইগুলি অনেকের গা-সহা হইয়া গিয়াছে। কিন্তু কাজটি যদি অমানবিক হয়, যদি তাহাতে শিশুদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ বিঘ্নিত হয়, তবে তাহা এক মুহূর্তও সহ্য করা উচিত নহে। শিশুদের কাজে লাগাইয়া যাহারা শহরের রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি চালাইতেছে, তাহাদের কঠোর শাস্তি প্রয়োজন। এই অপরাধ সম্পূর্ণ বন্ধ করিতে হইবে। শিশুদের লইয়া ভিক্ষা-সহ নানা অপরাধ-ব্যবসা চলিতেছে, তাহাদের ভাড়া দেওয়া হইতেছে, এ সংবাদ নূতন নহে। দৈনিক কী দরে শিশুদের ভিক্ষার জন্য ব্যবহার করিতে ভাড়া দেওয়া হয়, কত শিশু এই ভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহাও অজানা নহে। কাজটি অপরাধ। এমনকি, মাতাপিতাও শিশুকে ভিক্ষার জন্য ব্যবহার করিতে পারে না। শিশু-ভিখারির প্রতি দয়া দেখাইতে অনেকে অভ্যস্ত। তাঁহাদের ভাবিতে হইবে, এই করুণার পরিণাম কী হইতে পারে। ভিক্ষারত নাবালিকা ধর্ষিতা হইতেছে, ভিক্ষায় ব্যবহৃত শিশুকে শান্ত রাখিতে ইঞ্জেকশনে অচেতন করা হইতেছে। ভিখারির কঠোর জীবন সহিবার তাগিদে নেশা ধরিতেছে শিশুরা। ধনীর ‘দয়া’ প্রকারান্তরে দরিদ্র, অসহায় শিশুর শোষণকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করিতেছে। যাহার প্রতি এই দয়া প্রদর্শন, তাহারই ক্ষতিবৃদ্ধি হইতেছে।।

Advertisement

আশ্চর্য এই যে, শিশুর এমন লাঞ্ছনা দেখিয়াও পুলিশ নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয়। নিবারণের কোনও চেষ্টা কাহারও নজরে আসে নাই। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে, প্রতি বৎসর চল্লিশ হাজার শিশু অপহৃত হয়, তাহাদের দশ হাজার নিখোঁজই থাকিয়া যায়। যে সকল অপরাধমূলক কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হয়, তাহার অন্যতম ভিক্ষাবৃত্তি। অতএব শিশু-ভিখারি, অথবা তাহার সঙ্গী ‘মা’ বা ‘দিদি’-র প্রসারিত হাতে অর্থ তুলিয়া দিলে হিতে বিপরীত ঘটে। শিশুর হিত চাহিলে তাহার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করিতে হইবে।

তাহার উপায় কী? পরিবার শিশুর দায়িত্ব লইতে অক্ষম হইলে নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর শিশুর দায়িত্ব গ্রহণ করিয়া তাহাকে সরকারি হোমে স্থান দেয়। রাস্তায় শিশুদের ভিক্ষা করিতে, বা ভিক্ষায় ব্যবহৃত হইতে দেখিলে ট্রাফিক পুলিশ অথবা টহলরত পুলিশ কেন সরকার-নির্দিষ্ট আধিকারিক বা স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সে বিষয়ে জানাইতে পারে না? শিশুদের দিয়া ভিক্ষা করাইবার অপরাধটি, চরিত্রগত ভাবেই, লোকচক্ষুর অন্তরালে করা সম্ভব নহে। অতএব, যদি যথেষ্ট সচেতনতা থাকে, যদি বিভিন্ন স্তরে কার্যকর প্রতিষ্ঠান থাকে, তবে এই অপরাধ সংঘটিত হইতে দেখিলে তাহার প্রতিকারও সম্ভব। সহমর্মিতা ও মানবিকতার সহিত শিশু-ভিখারির পুনর্বাসন করিতে হইবে। যাহারা শিশুদের লইয়া ব্যবসা করিতেছে, তাহাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও প্রয়োজন। তৎসহ, নাগরিক সমাজে প্রচার চালাইয়া পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাইতে হইবে, যাহাতে তাঁহারাও শিশু-ভিখারিদের উদ্ধারে সহায়তা করিতে পারেন। ইহা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, ভারতে সর্বাধিক ভিখারি রহিয়াছে কলিকাতায়। আন্দাজ হয়, শিশু-ভিখারিও এ রাজ্যেই সর্বাধিক। তাহাদের সংখ্যা কত, পুনর্বাসনের জন্য কী করিতে হইবে, এখনই তাহার সমীক্ষা প্রয়োজন। শিশু অধিকার কমিশনকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হইতে হইবে। এই অনাচার যে সম্পূর্ণ অসহ্য, তাহা স্পষ্ট করা জরুরি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement