Kuldeep Singh Sengar

এই বোধোদয় আরও আগে হওয়া জরুরি ছিল

দেরিতে হলেও পদক্ষেপটা শেষ পর্যন্ত হওয়ায় তিল পরিমাণ সত্যি হলেও মিলল।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০০:১৯
Share:

কুলদীপ সেঙ্গারকে বহিষ্কার করল বিজেপি। ফাইল চিত্র।

একটা কাঙ্খিত পদক্ষেপ হল অবশেষে। কুলদীপ সেঙ্গারকে বিজেপি অবশেষে বহিষ্কার করল।

Advertisement

অভিযোগ প্রথম থেকেই অত্যন্ত গুরুতর ছিল কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা কতটা লজ্জাজনক, তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। ওই অভিযোগ ওঠার পরেই কুলদীপ সিঙ্গার সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে যাওয়া উচিত ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। কিন্তু কতটা সন্দিহান তাঁরা ছিলেন, বলা কঠিন। যদি সন্দিহান থাকতেন, যদি অভিযুক্ত বিধায়কের গতিবিধির উপর সতর্ক নজর রাখতেন অথবা রাখতে চাইতেন, তাহলে ধর্ষণের অভিযোগকারী মেয়েটার বাবাকে পুলিশ হেফাজতে মরতে হত না। তার পরেও ধারাবাহিকভাবে একের পর এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে অভিযোগকারিণীর পরিবারকে প্রায় মুছে যাওয়ার মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হত না।

যে পদক্ষেপ বিজেপি করল অভিযুক্ত বিধায়কের বিরুদ্ধে, অনেক আগেই তা করা উচিত ছিল। অনেক দেরি হয়ে গেল। ফলত, অভিযোগকারিনীর পরিবার প্রায় উজাড় হয়ে গেল। সে ক্ষতি আর কোনও মূল্যেই পূরণ করা যাবে না। কিন্তু দেরিতে হলেও পদক্ষেপটা অবশেষে হওয়ায় তিল পরিমাণ হলেও স্বস্তি মিলল।

Advertisement

ম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গোটা দেশের মাথা নত হয়ে গিয়েছিল। ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে এই রকম হাল হবে! গোটা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বন্দোবস্তটা এইরকম করাল চেহারা নেবে! এই আমাদের দেশ, এই আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা! অসীম লজ্জায় মাথা মাটিতে মিশে যাচ্ছিল। রায়বরেলীতে রহস্যজনক দুর্ঘটনাটার পরে সুপ্রিম কোর্ট কঠোর হাতে তদন্তের হাল ধরায় সে লজ্জা কিছুটা হলেও লঘু হল। তার পরে অভিযুক্ত বিধায়ক নিজের দল থেকেও বহিষ্কৃত হওয়ায় মনে হচ্ছে যে, ঘটনাপ্রবাহ এ বার অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে।

যে রাজ্যের ঘটনা, সে রাজ্যে বিপুল গরিষ্ঠতায় আসীন হয়ে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। দেশের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনেও অভূতপূর্ব জনমত পেয়েছে বিজেপি। তাই দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোটার প্রতি জনসাধারণের আস্থা ও ভরসা ধরে রাখার দায় এখন বিজেপির উপরেই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে বিজেপির খুব একটা সুনাম নেই। কুলদীপ সেঙ্গারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছেছে, তাতে পদক্ষেপ করা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়েছিল। বিলম্বে হলেও পদক্ষেপটা তাই হল। কিন্তু দেশের শাসকদল হিসাবে এবং এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে বিজেপিকে মনে রাখতে হবে যে, এইসব ক্ষেত্রে কঠোর সিদ্ধান্ত আরও দ্রুত নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: উন্নাও কাণ্ডে ‘ব্যবস্থা’ বিজেপির, অভিযুক্ত বিধায়ককে দল থেকে বহিষ্কার

এ রাজ্যের জন্যও কিন্তু সত্যটা প্রায় একইরকম। শাসকদলের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি, বরং নানা অযৌতিক তত্ত্ব খাড়া করে সেই সব কুকীর্তিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই সব প্রশ্রয় বা গুরুতর অন্যায়ের সঙ্গে এ সব সহাবস্থান যে সুফল দেয় না, তার প্রমাণ উন্নাও কাণ্ডেই আমরা আরও একবার পেয়ে গেলাম। অতএব, অন্যায়কে অঙ্কুরেই বিনাশ করার সদিচ্ছা থাকা জরুরি। তাকে বিষবৃক্ষে পরিণত হতে দিলে চলবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement