Budget 2020

যাহা হইবার...

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া কী ভাবে সংশোধিত হইবে তাহা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্ন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০০
Share:

ছবি: পিটিআই।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (ভারতের ইতিহাসে দীর্ঘতম এবং অসমাপ্ত) শনিবারের বাজেট বক্তৃতা শেষ করিবার পরে সেনসেক্সের এমন বিপুল পতন ঘটিল কেন? অর্থমন্ত্রীর উত্তর: শেয়ার বাজার এই বাজেটের তাৎপর্য সম্পূর্ণ অনুধাবন করিতে পারে নাই, সোমবার বাজার খুলিলে উন্নততর বোধের পরিচয় মিলিবে। এই জবাব দুইটি সত্যকে ফাঁস করিয়া দেয়। প্রথমত, অর্থমন্ত্রীর বোধ নিতান্তই সীমিত, তাহা না হইলে তিনি জানিতেন, বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সহিত প্রাপ্তির প্রাথমিক সামঞ্জস্যের উপরেই শেয়ার বাজারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে, সেখানেই ওই প্রতিক্রিয়ার একমাত্র তাৎপর্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া কী ভাবে সংশোধিত হইবে তাহা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্ন। এক দশকের ইতিহাসে এ বার সেনসেক্সের রেকর্ড পতন জানাইয়া দেয়: বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দ্বিতীয়ত, তাঁহার আশা— সোমবার বাজার খুলিলে শেয়ারের মূল্য সূচক বাড়িবে, কারণ প্রত্যাশা পূরণ না হইলে সেই সূচক প্রথমে অতিরিক্ত পড়ে, তাহার পরে মূল্যের ‘সংশোধন’ হয়, ইহাই শেয়ার বাজারের ধর্ম। অর্থাৎ, গাড়ি সুড়ঙ্গে ঢুকিয়াছে, এক সময় না এক সময় তাহা নিশ্চয়ই বাহির হইবে, সুড়ঙ্গের শেষে নিশ্চয়ই আলো আছে। বিশ্বাসে মিলায় অঙ্ক। অর্থমন্ত্রী চোখ বুজিয়া গাড়ি চালাইতেছেন।

Advertisement

কেবল শেয়ার বাজার সম্পর্কে নহে, সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতি সম্পর্কেও এই ‘বিশ্বাসী’র মানসিকতা বাজেটে প্রকট। আগামী বছরে জাতীয় আয় (অর্থমূল্যের হিসাবে) ১০ শতাংশ বাড়িবে, এই অনুমানের ভিত্তিতে বাজেটের অঙ্ক কষিয়াছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি বছরের প্রত্যাশিত বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ। আগামী বছরে এতটা উন্নতির ভরসা কোথা হইতে সংগ্রহ করিলেন? তাঁহার জবাব: নানা রকম প্রবণতা দেখিয়া। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তেমনই, বাজেট ধরিয়া লইয়াছে, ২০২০-২১ সালে মোট কর আদায়ের অঙ্ক প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িবে। মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক রকমের জোয়ার আসিলে তবেই এই প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব। অথচ স্বাভাবিক জোয়ারেরও লক্ষণ নাই। তাহা হইলে? উত্তর, আবারও, বিশ্বাস। সাধারণ বিশ্বাস নহে, হালভাঙা পালছেঁড়া তরণির দিশাহীন নাবিকের মরিয়া বিশ্বাস। এই বাজেটের রচয়িতারা আশা করিতেছেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িবে, বাড়িবে নাগরিকদের ভোগব্যয়, তাহার ফলে আয়বৃদ্ধির গতি দ্রুততর হইবে, বাড়তি রাজস্বের আকারে তাহার সুফল কুড়াইবে সরকার— অচ্ছে দিন আসিবে। না আসিলে? যাহা হইবার তাহা হইবে।

এক অর্থে, অর্থমন্ত্রী নাচার। ভারতীয় অর্থনীতিতে মন্দগতির প্রকোপ সর্বব্যাপী, চাহিদা বাড়াইতে না পারিলে এই বদ্ধদশা হইতে মুক্তি নাই। দ্রুত চাহিদা বাড়াইবার জন্য সরকারি ব্যয় বাড়ানো জরুরি। কিন্তু রাজকোষ ঘাটতি এমনিতেই সর্বোচ্চ সীমা ছুঁইয়াছে, ফলে ব্যয় বাড়াইবার পথ বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে হয় উচ্চবিত্তের উপর বাড়তি কর বসাইয়া রাজস্ব বাড়াইতে হয়, নতুবা আইন সংশোধন করিয়া ঘাটতির সীমা বাড়াইবার ঝুঁকি লইতে হয়। ঝুঁকি লইবার সাহস এই সরকারের নাই। আর, তাঁহাদের রাজনীতিতে প্রথম পথটি নিষিদ্ধ— কয়েক মাস আগেই ‘বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে’ তাঁহারা কর্পোরেট কর কমাইয়াছেন! সুতরাং কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বহু ক্ষেত্রেই যথার্থ সরকারি বিনিয়োগ স্তব্ধপ্রায়। তাহাতেও বাজেটের অঙ্ক মিলিবে বলিয়া ভরসা নাই। অতএব বিবিধ গোঁজামিল। ভর্তুকি এবং ঋণের একটি বড় অংশ কার্পেটের নীচে লুকাইবার সঙ্কেত মিলিতেছে। ব্যক্তিগত আয়করের কাঠামো সংস্কারের নামে অস্বাভাবিক জটিলতা ও অনিশ্চয়তার শিকার হইয়াছে। বিলগ্নিকরণের বিপুল প্রত্যাশিত অঙ্ক মিলাইবার জন্য শেষ অবধি এলআইসির শেয়ার বিক্রয়ের পথে হাঁটিতেছে সরকার— মুখে বলিতেছে সংস্কার, আসলে ইহা দেনার দায়ে ঘটিবাটি বিক্রয়। পরিণাম? অর্থমন্ত্রী বিশ্বাসের উপরেই বিশ্বাস রাখিতেছেন। চোখ বুজিয়া।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement