হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিডিও কৌশিক ভট্টাচার্য।
মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের কথা। সরকারি প্রকল্পের টাকা থেকে ‘কাটমানি’ খাওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যে তৈরি হওয়াতেই তিনি অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ক্ষোভ বিশেষ উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা অবাধে নয়ছয় হওয়ার যে প্রবণতার কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে তিনি অত্যন্ত অখুশি বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু নেত্রীর পছন্দ-অপছন্দের খেয়াল কর্মীরা আর রাখছেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ এখন বিস্তর। সন্দেহ বাড়িয়ে তুললেন সন্দেশখালি-২ ব্লকের তৃণমূল কর্মীরা।
খুব বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চেয়েছিলেন সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিডিও। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরি করে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল সরকারি কোষাগার থেকে, কিন্তু কেউ ঘর পাননি— এই রকম অভিযোগ পেয়েছিলেন বিডিও। তার ভিত্তিতেই পদক্ষেপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা বিডিও অফিসে তাণ্ডব চালায়, বেধড়ক মারধর করা হয় বিডিও-কে। দফতরের অন্য কর্মীরাও নিগ্রহের সম্মুখীন হন। তাণ্ডবের প্রমান লোপাট করতে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিগৃহীত, বিধ্বস্ত বিডিও সরাসরি আঙুল তুলে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিডিও-র পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। নিগ্রহের ঘোর নিন্দা করেছেন তিনি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। জ্যোতিপ্রিয়র কাছে দলনেত্রীর বার্তাটা সম্ভবত পরিষ্কার। তাই দলের পঞ্চায়েতী নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা বিপুল আর্থিক দুর্নীতি এবং তার পরে ততোধিক দুঃসাহসী তাণ্ডবের অভিযোগকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা তিনি করেননি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর বার্তা জ্যোতিপ্রিয়দের স্তরটাকে অতিক্রম করে তৃণমূলের অন্য নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছেছে কি না, তা নিয়ে এবার সংশয় তৈরি হচ্ছে।
রাজ্য জুড়ে ক্ষোভের আঁচ রয়েছে, অভ্রান্ত টের পেয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ক্ষোভের কারণ চিহ্নিত করেছেন তিনি। ক্ষোভ সামাল দিতে হলে দুর্নীতি যে এড়িয়ে চলতেই হবে, সে বার্তাও চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা সে বার্তা মেনে চলতে প্রস্তুত কি? সন্দেশখালির ঘটনা তো তেমন বলছে না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ধাক্কা খেয়েছে ঠিকই। কিন্তু লড়াই শেষ হয়ে যায়নি, হাওয়া ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে, বিশ্বাস করছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে সর্বাত্মক লড়াইয়ে যাওয়ার জন্য দলকে প্রস্তুত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী চলবে, আর কী চলবে না, সে বিষয়ে তৃণমূলের সব স্তরকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সন্দেশখালির ঘটনা বলছে, সে বার্তা কাজে আসেনি। দলনেত্রীর বার্তাটা কি পৌঁছয়নি সন্দেশখালি পর্যন্ত? নাকি ‘কাটমানি’র তাড়না এখন নেত্রীর বার্তাকেও অগ্রাহ্য করতে শেখাচ্ছে? সন্দেশখালির ঘটনা যদি বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত হয়, তা হলে অন্য কথা। কিন্তু এই প্রবণতা যদি রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে তৈরি হয়ে থাকে, তা হলে কিন্তু তৃণমূলের জন্য অপেক্ষায় থাকবে আরও কঠিন দিন।