নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
কাশ্মীরের বিষয়ে যে বিশেষ ভাবে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন, সে ইঙ্গিত বেশ কিছু দিন ধরেই মিলছিল। আমাদের টনক নড়েনি। গোটা দেশ নড়েচড়ে বসল তখন, যখন অশান্তির উপত্যকা আরও কেঁপে উঠল সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর হানায়।
সন্ত্রাস যত বার রক্তাক্ত করেছে আমাদের, তত বারই ঐক্যবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছি আমরা। কেন্দ্র থেকে রাজ্য, শাসক থেকে বিরোধী— বিপদের ক্ষণে কাঁধে কাঁধ মিলেছে প্রত্যেক বার। এ বারও, স্বাভাবিক ভাবেই, প্রত্যাশিত ভাবেই। দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারী থেকে উত্তপ্ত উপত্যকার নেতৃবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রধান বিরোধী পক্ষের নেত্রী— সব কণ্ঠেই সন্ত্রাসের চক্রীদের বিরুদ্ধে দ্বিধাহীন নিন্দার, ঘৃণার স্বর শোনা গিয়েছে। গোটা ভারত যে হাতে হাত রেখে এই দুঃসময় উত্তীর্ণ হবে, সে সঙ্কল্পের বাণীও শোনা গিয়েছে।
প্রশ্ন হল, হাতে হাত রেখে দুঃসময় উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্কল্পটা আরও আগে কেন ধ্বনিত হল না? সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে কোনও আপোস যে থাকতে পারে না, সে নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। ভারতীয় ভূখণ্ডকে বার বার রক্তে ভেজানোর অভিসন্ধিগুলোকে প্রতিহত করতে হবেই এবং তা ঐক্যবদ্ধ ভাবেই করতে হবে, সে নিয়েও সংশয় নেই। কিন্তু উপত্যকা ধূমায়িত হতে শুরু করল যখন থেকে, তখনই কেন হাত হাত রেখে সঙ্কটগুলোকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করলাম না?
উপত্যকার সমস্যা শুধুমাত্র বহিরাগত নয়। অন্দর মহলেও যে জট বিস্তর, সে অনস্বীকার্য। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাশ্মীরের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার যখন করছি, তখন সে অঙ্গীকার শুধু বহিঃশত্রুকে রুখে দেওয়ার দিশায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না। উপত্যকার গভীরে যে সঙ্কট, যে ক্ষোভ, যে উষ্মা, যে অভিমান, তার নিরসনের অঙ্গীকারটাও জরুরি।
উপত্যকার আকাশ জুড়ে অশান্তির নিরন্তর মেঘ আর সীমান্তপার থেকে হানা দেওয়া নাশক অভিসন্ধিকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দেখছি, এমন কিন্তু নয়। ক্ষীণতম যোগসূত্র খোঁজার বাসনাও রাখছি না। কারণ প্রথমটা আমাদের ঘরোয়া বিষয়। পরেরটা বহিরাগত। কিন্তু উপত্যকাকে তার ভূস্বর্গ পরিচয়েই যদি চিনতে চাই, তা হলে উপত্যকার প্রতি আরও আন্তরিক আমাদের হতেই হবে। বহিঃশত্রুর আঘাতে উপত্যকা রক্তাক্ত হতেই যে ভাবে লহমায় ঐক্যবদ্ধ হল গোটা জাতি, ঘরোয়া উদগীরণের দিনগুলোতেও যদি চাপানউতোর ভুলে সেই পথেই হাঁটতে পারতাম আমরা, তা হলে আজকে উপত্যকার আকাশটা হয়তো অন্য রকম হতে পারত।
আসলে কাশ্মীরের বিপদ অনেক রকমের। যদি কাশ্মীরকে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই মনে করি, তা হলে তার সব বিপদ, আমাদের সকলের বিপদ। এই বোধ, এই আন্তরিকতা, এই সংবেদনশীলতা নিয়েই গোটা দেশকে কাশ্মীরের কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে। যদি তা পারি, তা হলে ডাল হ্রদে পারিজাতের প্রতিবিম্ব মোটেই অবাস্তব কল্পনা হবে না।