শিকড় ধরে নাড়া না দিলে এ সমাজ নিজেকে বদলাবে না

শিকড়ে যদি বিষ থাকে, তা বলে মহীরূহ যতই তুঙ্গস্পর্শী হোক আর তার শিখর-পুচ্ছ যতই নয়নাভিরাম হোক, ফলটা বিষাক্তই হয়। জাতিগত বিভেদ বা বর্ণাশ্রমগত বৈষম্যের বিষ আমাদের সমাজের শিকড়ে রয়েছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৪:২৭
Share:

এই ভাবে বিষিয়ে দেওয়া হয়েছে জল।

শিকড়ে যদি বিষ থাকে, তা বলে মহীরূহ যতই তুঙ্গস্পর্শী হোক আর তার শিখর-পুচ্ছ যতই নয়নাভিরাম হোক, ফলটা বিষাক্তই হয়। জাতিগত বিভেদ বা বর্ণাশ্রমগত বৈষম্যের বিষ আমাদের সমাজের শিকড়ে রয়েছে। তাই বিদ্বেষ-বিরোধী বার্তা যে স্তর থেকেই আসুক না কেন, আমরা নিজেদের শুধরে নিতে পারি না। প্রবল শুখা মরশুমে তৃষ্ণার জলটা বিষিয়ে দিতেও আমরা পিছপা হই না।

Advertisement

মধ্যপ্রদেশের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। দলিত পরিবার, অতএব বিবাহে বা আনন্দ অনুষ্ঠানে ব্যান্ড বাজানোর অধিকার নেই। নিদান ছিল তথাকথিত উচ্চবর্ণের। নিদান উড়িয়ে বিবাহ বাসর মেতে উঠেছিল ব্যান্ডের তালেই। অভাবনীয় ফল হল, দলিত গ্রামের ব্যবহার্য পানীয় জলের কুয়ো কেরসিনের গন্ধে ম ম করে উঠল। অর্থাৎ, বিষবৃক্ষে বিষই ফলল।

দেশের সরকার ভিআইপি সংস্কৃতির অবলুপ্তি ঘটাতে সচেষ্ট হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রোজ লালবাতি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বার্তা দিচ্ছেন, সাম্প্রতিকতম বেতার-বার্তায়ও প্রধানমন্ত্রীর একই আহ্বান— আর ভিআইপি নয়, এ বার ইপিআই বলতে শিখুন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শিখুন। কাদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান রাখছেন প্রধানমন্ত্রী? ব্যক্তিকে ব্যক্তিই ভাবতে শেখেনি যে দেশের সমাজ, সেই দেশকে বলছেন সব ব্যক্তিকে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে? ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাধীনতা তথা মর্যাদা তো অনেক বড় বিষয়, ব্যক্তির ব্যান্ড বাজানোর স্বাধীনতা রয়েছে বলেই মনে করে না যে দেশের সমাজ, সেই দেশকে প্রধানমন্ত্রী ভিআইপি-র বদলে ইপিআই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত করে তুলতে চান? কষ্টকল্পনা হয়ে যাচ্ছে না কি?

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ সাধু, সংশয় নেই। কিন্তু যে অসাধুতা শতকের পর শতক ধরে বাসা বেঁধে রয়েছে আমাদের ভাবনা চিন্তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সেই অসাধুতার বিসর্জন না ঘটা পর্যন্ত মুক্তি নেই। শুধু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে বা সরকারি উদ্যোগে কিন্তু সামাজিক ব্যধিগুলোর নিরাময় ঘটবে না। ব্যধিতে আক্রান্ত যাঁরা, তাঁদের মধ্যেই নিরাময়ের তাগিদটা অনুভূত হতে হবে। পদক্ষেপটা সেই লক্ষ্যেই হওয়া দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement