শ্রীনগরে আধাসেমরিক বাহিনীর টহল।—ছবি এএফপি।
এত ধোঁয়াশা কেন থাকবে? জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনও পদক্ষেপ যদি জরুরি হয়, তা হলে সে পদক্ষেপ সরকার অবশ্যই করবে। কিন্তু কোন বেনজির পদক্ষেপ ঠিক কী কারণে করা হচ্ছে, কী তার লক্ষ্য, এই পদক্ষেপের ফলে কোন সমস্যার সমাধান ঘটবে বা কোন বিপর্যয় আটকানো যাবে— এই সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর তো সরকারের দেওয়া উচিত। গোটা দেশকে উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায়, বিভ্রান্তিতে রেখে কোন সমস্যার সমাধান করতে চাইছে সরকার?
জম্মু-কাশ্মীরে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আধাসামরিক বাহিনীতে প্রায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা উপত্যকা। রোজ লাফিয়ে বাড়ছে মোতায়েন হওয়া জওয়ানের সংখ্যা। প্রথমে শোনা গেল ১০ হাজার, তার পরে জানা গেল ২৮ হাজার, তৃতীয় দফায় খবর এল ৩৫ হাজার— এই বিপুল বাহিনী আচমকা নামানো হয়েছে কাশ্মীরে। মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। পুণ্যার্থী, পর্যটক এবং বাইরের রাজ্য থেকে যাওয়া অন্য সকলকে যত দ্রুত সম্ভব কাশ্মীর ছাড়তে বলা হয়েছে। খবর আসছে যে, নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত, দু’পাশেই প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে ভারী কামানের ধমকও।
এক দিকে নিয়ন্ত্রণরেখায় এই উত্তাপ, অন্য দিকে উপত্যকার অন্দরে নিরাপত্তা বাহিনীর নজিরবিহীন তৎপরতা, প্রায় বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করে মাঝপথেই অমরনাথ দর্শন থামিয়ে দেওয়া— এই রকম ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে দেশ খুব একটা পরিচিত নয়। অশান্তি, রক্তপাত, নিরাপত্তার বাহিনীর সক্রিয়তা, সামরিক অভিযান— জম্মু-কাশ্মীর এ সব নিরন্তর দেখে আসছে দশকের পর দশক ধরে। কিন্তু কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, কোন পদক্ষেপের কী ফল হচ্ছে, সে সব স্পষ্টই বোঝা গিয়েছে এত দিন। এ বার যেন পরিস্থিতি একদম অন্য রকম। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এমন সর্বাত্মক তৎপরতা সরকারের, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং গোয়েন্দা-প্রধানদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফ থেকেও নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ বৈঠকের জন্য তোড়জোড়— ঠিক কী কারণে এত তৎপরতা, কেনই বা তা নিয়ে এত ঢাকঢাক গুড়গুড়, কেন এত গোপনীয়তা, বুঝতে পাড়ছে না ভারতবাসী।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
জাতীয় নিরাপত্তা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কোনও কিছু গোপন রাখার প্রয়োজন পড়তেই পারে। হয়তো সেই কারণেই গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে সাময়িক ভাবে। কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষা করা আর দেশ জুড়ে বিভ্রান্তি ও উৎকণ্ঠার বাণ ডাকিয়ে দেওয়া এক নয়। নিরাপত্তা বাহিনীর যে বিন্যাস আচমকা তৈরি করা হল উপত্যকায়, ভারতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা যে ভাবে আচমকা তৎপর হয়ে উঠলেন, যে ভাবে নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার শুরু হল কামানের গর্জন, তা অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিষয়। অতএব দেশ জুড়ে নানা জল্পনা তৈরি হতে বাধ্য। সরকারের তরফে কোনও রকম আভাস দেওয়া না হলে সে জল্পনা বিভ্রান্তির রূপ নিতেও বাধ্য। মনে রাখা দরকার বিভ্রান্তি কিন্তু কখনওই ইতিবাচক বিষয় নয়। পরিস্থিতি আপৎকালীন না হলে সরকার আচমকা এত তৎপর হত না বলেই ধরে নিচ্ছি। তাই আবার বলছি, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়া কিন্তু আরও বেশি ক্ষতিকর। সরকারের তরফে বিবৃতি আসা উচিত। চলতি পরিস্থিতি সম্পর্কে যে ন্যূনতম পরিমাণ তথ্য দেওয়া এই বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য জরুরি, সে তথ্য অবিলম্বে প্রকাশ করা উচিত।
আরও পড়ুন: অজিত ডোভাল, গুপ্তচর-গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে অমিত শাহ, কাশ্মীর নিয়ে বাড়ছে জল্পনা
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ মেন্টর ইরফান-সহ সাপোর্ট স্টাফদের, বাড়ি ফেরানো হল ক্রিকেটারদেরও