রাজনৈতিক ভাষ্যেও উজ্জ্বল নাটক

কলাকুশলীর প্রতিষ্ঠা রয়েছে নাটকের রাজনৈতিক ভাষ্যেও। তাঁদের রাজনৈতিক নাটক হরিবোল, ফোঁড়া, হিমু, হের হোঁদলদা। কলাকুশলীর নাটক বরাবরই দর্শক আনুকূল্য পেয়ে এসেছে। তাদের সাম্প্রতিক নাটক রবীন্দ্রনাথ আশ্রিত গোরা ও অবনীন্দ্রনাথের নালকও তার ব্যতিক্রম নয়। কিছু ফিল্মি বাতচিত নামে নতুন নাটক করছেন তাঁরা।গরিষ্ঠ সংখ্যক পাণ্ডুলিপিই রচিত কুমারেশ দেবের। কুমারেশ, সুব্রত এবং অর্ণবের পরে নাটক রচনা ও নির্দেশনার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তমোজিৎ রায়ের উপর।

Advertisement

অনিতা দত্ত       

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫১
Share:

ঐতিহ্য: কলাকুশলী। নিজস্ব চিত্র

এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, এখন জলপাইগুড়ি শহরে সংগঠিত দলগুলোর অন্যতম সেরা জলপাইগুড়ি কলাকুশলী। তাদের ধারাবাহিকতাও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৪ সাল থেকে নিরলস ভাবে নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত থেকে শহরকে সব থেকে বেশি নাটক উপহার দিয়েছে এই দল। ৭৭টি প্রযোজনা পাওয়া গিয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। প্রধানত কুমারেশ দেবের সেনাপত্যে মনোজিৎ রায়, সরিত চক্রবর্তী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, রত্না রায় ও শিপ্রা দেব প্রমুখ এক ঝাঁক নাট্য ব্যক্তিত্ব রাজ্যের নানা জেলায়, এমনকি ভিন্ রাজ্যেও মঞ্চস্থ করেছে ‘টিনের তলোয়ার’, ‘সেই মুখ’, ‘সঙের পালা’, ‘সিংহাসন’ প্রভৃতি প্রযোজনা দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। মুলত প্রগতিশীল মতাদর্শে বিশ্বাসী এই নাট্য দল ছাপানো নাটকের চেয়ে নিজস্ব পাণ্ডুলিপিতেই আস্থা রেখেছেন বেশি।

Advertisement

গরিষ্ঠ সংখ্যক পাণ্ডুলিপিই রচিত কুমারেশ দেবের। কুমারেশ, সুব্রত এবং অর্ণবের পরে নাটক রচনা ও নির্দেশনার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তমোজিৎ রায়ের উপর। তাঁর নির্দেশনায় এক ঝাঁক তরুণ তুর্কির নিষ্ঠায় পরিশ্রমে কলাকুশলী বাংলার নাট্য মানচিত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানাধিকার করতে পেরেছে। ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’, ‘শুক’, নানা জাতীয় ও আন্তর্দেশীয় উৎসবে অর্জন করেছে বিশিষ্ট জনের শ্রদ্ধা। শুক নাটকটি জলপাইগুড়ির প্রথম দল হিসেবে ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব ‘ভারত রঙ্গ মহোৎসব’-এ ডিব্রুগড় পর্বে অভিনীত হয়েছে। আমন্ত্রিত হয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবেও।

বড়দের সঙ্গে সঙ্গে ছোটদের নাটকের নিয়মিত চর্চা করে কলাকুশলী। তৈরি হয়েছে ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘বুড়ো আংলা’, ‘ভোকাট্টা’র মতো উচ্চ প্রশংসিত ছোটদের নাটক। ভোকাট্টা উত্তরের একমাত্র ছোটদের দল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা আয়োজিত দিল্লির ছোটদের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে। ‘জশন এ বচপন’-এর দিল্লি উৎসব এবং ত্রিপুরাতেও অভিয়ন করে এসেছেন তাঁরা। আমন্ত্রণ পেয়েছেন আরও দু’টি আন্তর্জাতিক উৎসবে। বেশ কয়েকটি জাতীয় উৎসবেও তাঁদের নাটক অভিনীত হয়েছে।

Advertisement

কলাকুশলীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তাঁরা মঞ্চ নির্মাণ, আলোক পরিকল্পনা, রূপসজ্জা সব কিছুই নিজেরাই করে। সরিত চক্রবর্তীর যোগ্য উত্তরসূরি এ প্রজন্মের অভিজিৎ বসু অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ পরিকল্পনা ও রূপ সজ্জায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন বললে অত্যুক্তি হয় না। আলোক পরিকল্পক হয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন তরুণ অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তেমনই অভিনয়ে শান্তনু খান, রাজীব চক্রবর্তী, করবী গোস্বামী, অপূর্ব সাহা, প্রিয়জিৎ রায়, সুতপা সেনগুপ্ত, তমাগ্নি শীল, পৌলোমী মুখোপাধ্যায়, সৌরদীপা রায়, শুভদীপ সাহা, নীলাঞ্জন গুহ, সৌরভ ও সৌগত ঘোষ প্রমুখ দর্শকদের আশীর্বাদ ধন্য হয়েছেন।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় ভূষিত হয়েছেন পুরস্কারে। যুব স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন প্রিয়জিত রায়, সুতপা সেনগুপ্ত ও তমোজিৎ।

কলাকুশলীর প্রতিষ্ঠা রয়েছে নাটকের রাজনৈতিক ভাষ্যেও। তাদের রাজনৈতিক নাটক হরিবোল, ফোঁড়া, হিমু, হের হোঁদলদা।

কলাকুশলীর নাটক বরাবরই দর্শক আনুকূল্য পেয়ে এসেছে। তাদের সাম্প্রতিক নাটক রবীন্দ্রনাথ আশ্রিত গোরা ও অবনীন্দ্রনাথের নালকও তার ব্যতিক্রম নয়।

নতুন প্রযোজনা ‘কিছু ফিল্মি বাতচিত’। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর গল্প অবলম্বনে তমোজিৎ রচিত ও নির্দেশিত এই নাটকটিতে মূর্ত হয়ে উঠছে নিরীহ এক ছেলের অপরাধী হয়ে ওঠার আখ্যান।

এ মুহূর্তে ছোট বড় মিলে দলের সদস্য সংখ্যা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। তবে সমস্যা একটাই। দলের নিজস্ব মহড়া কক্ষ খুবই ছোট। বর্ষাকালে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। মহড়ার জন্য নির্ভর করতে হয় সদস্যদের ঘর ও ছাদের উপর। এত অসুবিধে সত্ত্বেও তরুণ তুর্কিরা লড়াই করে চলেছেন এক নতুন ভোরের সন্ধানে।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement