PM Modi

Indian Economy: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আগাম সমৃদ্ধির যে উজ্জ্বল ছবি দেখাচ্ছেন, তার নিশ্চয়তা কতটুকু

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের মতো সক্রিয় সরকার এর আগে কখনও আসেনি। গত ছ’মাসে এই সক্রিয়তার প্রমাণ প্রকৃতই দৃশ্যমান।

Advertisement

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২১ ১২:৫৫
Share:

বৈরী পরিস্থিতিতে সরকারের স্থৈর্যের প্রশংসাও না করে পারা যায় না। আইনি প্রক্রিয়াকে নিজের স্বার্থে সুচারু ভাবে ব্যবহার করায় সংবাদ শিরোনাম থেকে ‘পেগাসাস-কাণ্ড’ সরে গিয়েছে।

উৎসবের মরসুম। চারদিকে খুশি খুশি ভাব। এবং অন্য দিকে উজ্জীবিত শেয়ার বাজার থেকে সুসংবাদ অর্থনীতির বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। রফতানির জগতের নিরবচ্ছিন্ন উন্নতি, কর তথা রাজস্বের আঙিনায় উচ্ছ্বসিত ঢেউ, শিল্পোৎপাদনে আশাব্যঞ্জক পরিসংখ্যান, মুদ্রাস্ফীতির হ্রাস, ব্যাঙ্কের ক্ষতিকারক ঋণের বোঝা ক্রমে হাল্কা হয়ে যাওয়া, ‘ইউনিকর্ন’ (যে সব ব্যক্তিগত মালিকানাধীন স্টার্ট-আপ ব্যবসা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমান স্পর্শ করেছে)-এর তুল্যমূল্য বিচারে কর্পোরেট জগতে লভ্যাংশের বিপুল বৃদ্ধি ইত্যাদি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এ বছর এবং আগামী বছর দুই অঙ্কের বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করতে উৎসাহিত করেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যে বৃদ্ধির হার দ্রুততর হবে, সে কথাও তিনি বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের মতো সক্রিয় সরকার এর আগে কখনও আসেনি। গত ছ’মাসে এই সক্রিয়তার প্রমাণ প্রকৃতই দৃশ্যমান। ঘোষণার প্রবল প্রবাহ (গতি শক্তি, এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রয়, টেলিকম পুনরুদ্ধার, বৈদ্যুতিক যানবাহনের স্বপক্ষে প্রচার, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পর্কে উচ্চাশা প্রদর্শনকারী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, রেট্রোস্পেক্টিভ করের অর্থাৎ কোনও সংস্থার উপর তার পণ্য, পরিষেবা বা চুক্তির উপরে চাপানো সরকারি কর, যা সেই কর সংক্রান্ত আইন প্রয়োগের আগেকার সময় থেকে ধার্য করা হয়, তেমন করের বাতিলকরণ এবং বাছাই করা কিছু শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন-নির্ভর সহায়তা প্রদানের ক্রমবর্ধমান তালিকা) এবং সেই সঙ্গে কৃতিত্বের কিছু বোলবোলাও, যেমন সরকারি সহায়তায় তিন কোটি গৃহ নির্মাণের দাবি। এ সমস্ত কিছুই মনমোহন সিংহ সরকারের দ্বিতীয় দফার মাঝামাঝি সময়ে পক্ষাঘাত প্রাপ্তির বিপরীতে জাজ্বল্যমান।

সরকারের যাবতীয় উদ্যোগই যে সাফল্য পাবে, এমন কোনও কথা নেই। বিশেষত, সেই সরকারের নীতি নির্ধারণের জায়গায় যদি নিরন্তর দুর্বলতা থাকে এবং তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঊর্ধ্বগতি যদি ২০২০-র নিচু মানের নিরিখে পেশ করে ঝলমলে করে দেখানো হয়।

Advertisement

এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, টিকাকরণের প্রকল্প সত্যিই সফল।

সুতরাং, তাদের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার দেখাচ্ছে, ভারত ২০২১ এবং ২০২২ নাগাদ পুনরায় দ্রুততম গতিছন্দের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। কিন্তু এর আগের দু’টি বছরকে যদি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয় এবং যদি দেখা যায় যে, চার বছরের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)-এর গড় ৩.৭ শতাংশের বেশি দাঁড়াবে না (যেখানে বিশ্বের জিডিপি-র গড় ২.৬ শতাংশ), তবে ছবিটি খুব আশাব্যঞ্জক দাঁড়াচ্ছে কি? একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ উন্নত অর্থনীতিকে তার গতিজাড্যে খানিক পিছনে ফেলে রাখবে, সেটি স্বাভাবিক। গত এক দশকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, চিন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের ছবি ভারতের থেকে উজ্জ্বল। তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স এবং দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চ আয়স্তর সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও এই যাত্রায় সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে।

এ সব সত্ত্বেও এর মধ্যে মেজাজগত কিছু প্রত্যক্ষ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা তার নিজের বৃদ্ধির গতিজাড্য নিজেই তৈরি করতে সমর্থ। এটা ততক্ষণই সম্ভব, যতক্ষণ জনগণ ভোক্তা হিসেবে খরচ করতে এবং সংস্থাগুলি বিনিয়োগ করতে উৎসাহী। এবং যতক্ষণ সরকারের উদ্দীপক ঘোষণাসমূহ গত এপ্রিল-মে মাসের বিভিন্ন গোলমেলে ছবিকে দৃশ্যমানতার বাইরে সরিয়ে রাখে। যেমন হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের আকাল অথবা নদীতীরে অগভীর কবর থেকে মৃতদেহ বেরিয়ে পড়ার ছবি। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, টিকাকরণের প্রকল্প সত্যিই সফল। যদিও তৃতীয় কোভিড তরঙ্গের আগমনের সম্ভাবনা এখনও রয়েছে, তবু এ কথা বলাই যায় যে, তা আগের দু’টি তরঙ্গের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াবে না।

এক দশক আগেকার সূচকগুলি এদের চাইতে আশাব্যঞ্জক ছিল। কিন্তু তারা বেশিদিন টিকে থাকেনি।

বৈরী পরিস্থিতিতে সরকারের স্থৈর্যের প্রশংসাও না করে পারা যায় না। আইনি প্রক্রিয়াকে নিজের স্বার্থে সুচারু ভাবে ব্যবহার করায় সংবাদ শিরোনাম থেকে ‘পেগাসাস-কাণ্ড’ সরে গিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনাও পাল্টা দোষারোপের কল্যাণে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। অথবা মাও-সুলভ প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নচিহ্নগুলিকে কল্যাণমূলক পদক্ষেপের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে (জীবিকার নিরাপত্তা, নিশ্চিত আয় ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য গৃহীত ‘আয়রন রাইস বোওল’ নীতি)। লাদাখের বিস্তীর্ণ ভূভাগে চিন যতই গেড়ে বসুক না কেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কিন্তু দাবি করে গিয়েছেন, কোনও দেশ ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করার সাহস দেখাতে পারবে না। সত্যি বলতে, এই সব তথ্য একেবারেই অবান্তর। কখনও কখনও এদের নিতান্তই চেপে যাওয়া হয় (যেমন সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রাপ্ত উপভোক্তাদের সংখ্যায় ব্যাপক ধস, যা দারিদ্র বৃদ্ধির দিকেই ইঙ্গিত করে)। অথবা এই সব তথ্যকে নেহাতই তাচ্ছিল্য করে সরিয়ে রাখা হয় (যেমন বেকারত্বের পরিসংখ্যান)। এ সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যেই ‘দুঃসংবাদ’ বেরিয়ে আসে এবং জানায়, সব কিছু কিন্তু ঠিক নেই। যেমন বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকায় ভারতের অবস্থান মোটেই সুবিধের নয়।

Advertisement

এমত পরিস্থিতিতে মোদ্দা প্রশ্ন এই, দেশের নিরবচ্ছিন্ন এবং দ্রুত আর্থিক সমৃদ্ধি বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর আশাবাদের পিছনে কি কোনও নিশ্চয়তার আশ্বাস রয়েছে? সরকারি প্রকল্পগুলি থেকে খানিক গতি আসবে বলে অনুমান করা যায়। কিন্তু ক্ষুদ্রতর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলি থেকে উঠে আসা পরিসংখ্যানগুলি কিন্তু মোটেও খুব উজ্জ্বল ছবি দেখায় না। ২০২১-এ অর্থনীতির সব ক্ষেত্র মিলিয়ে আশা করা হয়েছে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে দাঁড়াবে ২৯.৭ শতাংশ। এক দশক আগে যা ছিল ৩৯.৬ শতাংশ। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের তহবিল-ঘাটতির যৌথ পরিমাণ ২০১১-এর ৮.৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৩ শতাংশ। ঋণ এবং জিডিপি-র মধ্যে অনুপাত ৬৮.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে মাত্র ৯০.৬ শতাংশ হয়েছে।

এক দশক আগেকার সূচকগুলি এদের চাইতে আশাব্যঞ্জক ছিল। কিন্তু তারা বেশিদিন টিকে থাকেনি। বৃদ্ধির গতি অবশ্যই হ্রাস পেয়েছে। যদি আজকের এই আশাবাদ আর উদ্যম বজায় থাকে, তবে কেউ এর বিপরীত কিছু ঘটবে বলে আশা করলেও করতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement