India

দুইয়ে দুইয়ে এক

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির দিক হইতে ঘটনাটির গুরুত্ব অনেক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৩
Share:

ছবি পিটিআই।

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে গত মঙ্গলবার যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হইল, তাহার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হইবার সম্ভাবনা। বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট বা বিইসিএ (বেকা) স্বাক্ষরের পর দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও বিদেশ দফতরের মন্ত্রীরা ২+২ বৈঠকে সেই অর্থে এক দীর্ঘ প্রস্তুতিপর্বের সুসমাপন দাবি করিতে পারেন। বাস্তবিক, আমেরিকার দৃষ্টিতে, বেকা হইল তাহার মিত্র দেশগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলির অন্যতম, এমন বলা চলিতে পারে। ইতিপূর্বে স্বাক্ষরিত লজিস্টিক্স এক্সচেঞ্জ মেমোরান্ডাম অব এগ্রিমেন্ট এবং কমিউনিকেশনস কমপ্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে এই ত্রয়ীকে সঙ্গত ভাবেই বলা যাইতে পারে আমেরিকার সহিত দৃঢ় প্রতিরক্ষা-মিত্রতার ভিত্তিভূমি। এই ভিত্তিভূমি ভারতের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। মিসাইল ও ড্রোন প্রযুক্তির যাথার্থ্যতা বাড়াইতে আমেরিকান তথ্য-সহায়তার গুরুত্ব অনেক, সন্দেহ নাই। দুই দেশের এয়ারফোর্সের মধ্যে সংযোগসাধন ইহার ফলে সম্ভব হইবে। জিপিএস যে ভাবে গাড়িকে পথপ্রদর্শন করে, ইহাও সেই ভাবে যুদ্ধবিমান চালনা করিবে। স্যাটেলাইট ইমেজ-এর সহিত এরোনটিক্যাল ডেটা, টোপোগ্রাফিক্যাল ডেটা, এই সবের দিক দিয়াও আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিকতার একটি বোঝাপড়া তৈরি হইল।

Advertisement

এই চুক্তি আকস্মিক নহে। যদিও ২০১৬ সালের পর হইতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গৃহীত হইয়াছে, এবং গত ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়ে চুক্তি স্বাক্ষরের বন্দোবস্ত হইয়াছে, প্রকৃতপক্ষে এই বোঝাপড়ার ইতিহাস আরও পিছনে। নাইন-ইলেভন-এর পর যখন আমেরিকাকে ভারত হাত খুলিয়া লজিস্টিক্স সহায়তা প্রান করে, এবং ইউপিএ সরকারের আমলে দুই দেশের মিত্রতা চুক্তি তৈরি হয়, তখন হইতেই এই পরবর্তী চুক্তিগুলির ভূমি প্রস্তুত হইতেছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই প্রতিরক্ষা মিত্রতার প্রয়োজন ও অভিমুখ ইতিমধ্যে পরিবর্তিত হইয়াছে। একবিংশ শতকের গোড়ায় ইহার লক্ষ্য ছিল পশ্চিম এশিয়া। আর এখন, চিন। স্বভাবতই ভারত আমেরিকা দুই দেশেরই আগ্রহ এ বিষয়ে প্রবল, এবং বিপন্নতাবোধ গভীর। আমেরিকা ও ভারত— দুই দেশেরই প্রধান মাথাব্যথা এখন চিন।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির দিক হইতে ঘটনাটির গুরুত্ব অনেক। চিনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা পরিসর, ও কূটনৈতিক দাবার চাল ঠেকাইতে হইলে আমেরিকার সহিত গাঁটছড়া বাঁধা ব্যতীত ভারতের গত্যন্তর নাই। ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চিন সাগর অঞ্চলে চিনকে রুখিতে হইলেও ভারতের সহায়তা প্রার্থনা ভিন্ন আমেরিকা বেশি দূর আগাইতে পারিবে না। তবে ভারতের পক্ষে, কূটনীতি ছাড়়াও এই ঘটনার একটি রাজনৈতিক মূল্য আছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁহার শাসনকালে বিদেশনীতির দিক দিয়া খুব কিছু সাফল্য অর্জন করিতে পারেননি। বরং চিনের নিকট ভারতকে উপর্যুপরি ম্লান হইতে হইয়াছে। এই বারের ভারত-আমেরিকা প্রতিরক্ষা বোঝাপড়ায় যে সফলতার সন্ধান মিলিল, তাহা কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই একটি বড় খবর। ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রসন্ন বোধ করিতে পারেন। চিনের কিছু উদ্বেগ তিনি ও তাঁহারা তৈরি করিতে পারিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement