ছবি পিটিআই।
অসুখ-পরিবৃত অচেনা পরিবেশে থাকিতে কেহই পছন্দ করেন না। হাসপাতাল হইতে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। অপছন্দের মাত্রা অধিক হইলে রোগীর মানসিক বিপর্যয় ঘটিতে পারে। কোভিড-১৯’এ এই সঙ্কট অধিক, কেননা এই রোগ সংক্রামক, প্রতিষেধক অজ্ঞাত— অতএব, এই অসুখে রোগীর কাহারও সহিত সাক্ষাৎ করাও বিপজ্জনক হইতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গুরুতর অসুস্থ না হইলে স্বগৃহে থাকিয়াই করোনা-সন্দেহভাজনের চিকিৎসার যে ব্যবস্থা ঘোষণা করিয়াছে নবান্ন, তাহা অযৌক্তিক নহে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও অনুরূপ পরামর্শ দিয়াছে। ইহার ফলে সরকারি পরিকাঠামোর উপর চাপ কমিবার সহিত করোনা-সন্দেহভাজনের উপর মানসিক চাপ বহুলাংশে লাঘব হইবার আশা। প্রসঙ্গত, রোগী ও পরিজনের দেখা হইবার উপায় নাই বলিয়া কোনও কোনও কোভিড হাসপাতাল ‘ভার্চুয়াল ভিজ়িটিং আওয়ার’ বরাদ্দ করিয়াছে। এই সময় হাসপাতাল কর্মীরা ভিডিয়ো কল-এর মাধ্যমে রোগী ও পরিজনের বাক্যালাপের সুযোগ করিয়া দিতেছেন। রোগীদের স্বস্তি দেখিয়া অনুমান করা যায়, সামান্য সময়ের এই সংযোগও তাঁহাদের মনোবল বাড়াইবার সহায়ক হইতেছে। বস্তুত, রোগীকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া চিকিৎসার সমান জরুরি। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে মানসিক স্বাস্থ্য তথা চিকিৎসার সহায়ক।
তবে, সেই সূত্রেই একটি ভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। এই সরকারই তাহা হইলে কেন হাসপাতালের কোভিড রোগীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে? সংক্রামক ওয়ার্ডে রোগীর পরিজনের প্রবেশাধিকার নাই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল ফোন। হাসপাতাল পরিসরে তাহার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হইলে রোগীর ওপর মানসিক চাপ বহুলাংশে বাড়িবে। নবান্ন জানাইয়াছে, মোবাইল হইতে করোনাভাইরাস ছড়াইবার আশঙ্কা হইতেই এই নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এই যুক্তির সপক্ষে অদ্যাবধি কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ মেলে নাই। বরং সংক্রমণ চিহ্নিত করিতে মোবাইল ফোন অ্যাপের সহায়তা গ্রহণ করিবার কথা ভাবিতেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও বারংবার ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ আরও ব্যবহারের কথা বলিতেছেন।
নবান্নের কর্তাদের নিকট এই কথাগুলি অজ্ঞাত, মনে করিবার কারণ নাই। বরং, সরকারি কোভিড হাসপাতালের বেহাল ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসিবার পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ হইতে সংশয় জন্মাইতে পারে, ভবিষ্যতে পরিকাঠামোগত অশান্তি এড়াইতেই কি এই নিষেধাজ্ঞা? এমনিতেই এই সংক্রামক রোগের কথা জানাজানি হইলে সামাজিক ভাবে কোণঠাসা হইয়া পড়িবার আশঙ্কায় বহু মানুষ তাহা গোপন করিতেছেন। চিকিৎসাকেন্দ্রে থাকাকালীন পরিজনের সহিত সংযোগ সূত্রটি যদি ছিন্ন করিবার নিদান দেওয়া হয়, হাসপাতালগুলি যদি অ-নিরাপদ বলিয়া জনমানসে একটি ধারণা জন্মে, তবে ভীতি আরও বাড়িবে— রোগ লুকাইবার প্রবণতাও। সে ক্ষেত্রে হাজার লকডাউনেও অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা যাইবে না। তাই, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যটিই স্মরণ করা জরুরি— কড়াকড়ি হউক, বাড়াবাড়ি নহে। হাসপাতালে প্রবেশের সময় রোগীর হাত হইতে ফোন কাড়িয়া লওয়া সর্বার্থেই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে না কি?