সাংবাদিকের বিপন্নতা

উদ্বেগ বাড়িয়াছে সাংবাদিকের নিরাপত্তা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লইয়া।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৯
Share:

সত্য বটে, দিন বদলাইয়াছে। পূর্বে সাংবাদিকের প্রতিবেদন দিয়া সরকারের কাজের পরিমাপ করিতেন নাগরিক। এখন সাংবাদিকের অবমাননা মাপিয়া সরকারকে বিচার করিতে হয় তাঁহাদের। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট বক্তৃতা যত অস্পষ্ট ছিল, ততটাই স্পষ্ট হইয়াছে সাংবাদিকের প্রতি তাঁহার মনোভাব। অর্থমন্ত্রকে সাংবাদিকদের প্রবেশে তিনি এমন শর্ত আরোপ করিয়াছেন, যাহা কোনও আত্মসম্মান-সম্পন্ন সাংবাদিক মানিতে পারেন না। তাঁহার নির্দেশ, সাংবাদিকদের মন্ত্রকের বাহিরে একটি ঘরে বসিতে হইবে, কেহ সাক্ষাৎকারের সময় দিলে তবেই সাংবাদিক মন্ত্রকে প্রবেশ করিতে পারিবেন। ইহাতে আহত হইয়া অর্থমন্ত্রীর বার্ষিক নৈশভোজ বয়কট করিয়াছেন শতাধিক সাংবাদিক। সামান্য যে কয়জন উপস্থিত ছিলেন, তাঁহাদেরও অনেকে মন্ত্রকে প্রবেশের উপর শর্ত আরোপ সম্পর্কে তাঁহাদের বিরোধিতা জানাইয়াছেন। মন্ত্রীর বক্তব্য, ইহা শৃঙ্খলারক্ষা, সাংবাদিকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নহে। অসার যুক্তি। সাংবাদিকরা পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত কর্মী, স্বাধীনতার পর হইতে তাঁহারা সরকার-নির্দিষ্ট সকল নিয়ম মানিয়া অর্থমন্ত্রক-সহ নানা মন্ত্রকে কাজ করিয়া আসিতেছেন। তাঁহাদের সেই সুযোগ করিয়া দেওয়া সরকারের কর্তব্য— করুণা নহে। সাংবাদিককে সকল স্তরের সরকারি কর্মীর সহিত প্রকাশ্যে এবং একান্তে কথা বলিতেই হইবে। তাহাতে সমস্যা কোথায়? কোন আধিকারিক কোন সাংবাদিকের সহিত কথা বলিতেছেন, তাহার উপর এত নজরদারির প্রয়োজন কী? নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলি হইতে যাঁহারা সংবাদ সংগ্রহ করেন, সেই সাংবাদিকদের পরিচয় যথাবিধি পরীক্ষা করিয়া তবেই তাঁহাদের সচিত্র পরিচয়পত্র মিলে, যাহা প্রবেশের ছাড়পত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা লইয়া সরকারের এত উদ্বেগ কেন?

Advertisement

উদ্বেগ বাড়িয়াছে সাংবাদিকের নিরাপত্তা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লইয়া। জম্মু ও কাশ্মীরের বহুল প্রচারিত ইংরেজি কাগজ ‘গ্রেটার কাশ্মীর’-এর সম্পাদক ফৈয়াজ় কালুকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতেছেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। দুই দশকের পুরাতন একটি মামলায় গ্রেফতার হইয়াছেন কাশ্মীরের এক উর্দু দৈনিকের সম্পাদক। গ্রেফতার হইয়াছেন অপর এক পত্রিকার সাংবাদিকও। সে রাজ্যে এখন রাষ্ট্রপতি শাসন চলিতেছে। অভিযোগ, অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হইবার পর হইতে আঞ্চলিক রাজনীতির সংবাদ পরিবেশনের বিষয়ে কাশ্মীরের পত্রিকাগুলির স্বাধীনতায় ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করিতেছে রাজ্য সরকার। এক দিকে সামান্য কারণে অথবা অকারণে সাংবাদিকদের গ্রেফতার, পুলিশি জেরা, ভীতি প্রদর্শন, অপর দিকে সংবাদমাধ্যমকে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করিবার হুমকি, এই দুই পদ্ধতি কাজে লাগাইয়া সরকার ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণ করিতেছে সংবাদমাধ্যমকে। অন্যান্য প্রক্রিয়াও বাদ নাই। এই বৎসর বাজেটে বিদেশি নিউজ়প্রিন্টের উপর শুল্ক বাড়াইয়া ১০ শতাংশ করিবার প্রস্তাব করিয়াছে সরকার। ইহাতে বহু মাঝারি ও ক্ষুদ্র সংবাদপত্র বন্ধ হইয়া যাইবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। দেশে সাক্ষরতার বৃদ্ধির সহিত সংবাদপত্রের, বিশেষত ভারতীয় ভাষার পাঠকসংখ্যা ছোট ছোট শহর এবং গ্রামগুলিতে বাড়িতেছে। স্বল্পমূল্যে দৈনিকের অধিক প্রচার কি দেশের জন্য বাঞ্ছনীয় নহে?

সরকারের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানিবার অধিকার গণতন্ত্রে নাগরিকের এক প্রধান অধিকার। সাংবাদিকের কাজ কোনও রূপে প্রতিহত হইলে তাহা ব্যাহত হইতে বাধ্য। সাংবাদিক কেন সরকারি আধিকারিকদের সহিত দেখা করিবেন, কথা বলিবেন, এই প্রশ্নই গণতান্ত্রিক সরকার করিতে পারে না। কিন্তু এ কথা নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বুঝাইবে কে? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়া পাঁচ বৎসর কাটাইয়াছেন। তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকের বিপন্নতা দ্রুত বাড়িতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement