উমর ফৈয়াজ। ছবি: সংগ্রহ।
হিংসার উৎসব শুরু হয়েছে যেন! কাশ্মীরকে মৃত্যু-রক্তপাত-নৈরাজ্যের উপত্যকায় বদলে দেওয়ার বীভৎস চেষ্টা শুরু হয়েছে। এই হিংসা, এই রক্তপাত, এই মৃত্যু নাকি ভূমিপুত্রদের স্বার্থে। বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসবাদীদের দাবি অন্তত তেমনই। বাইশের তরুণ উমর ফৈয়াজ কি তা হলে জম্মু-কাশ্মীরের ভূমিপুত্র ছিলেন না? নাকি জঙ্গিরা জানত না যে উমর উপত্যকারই সন্তান?
সদ্য যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। চিকিৎসক হিসেবে। নিজের রাজ্যেই কাজ করছিলেন। ছুটি পেয়েছিলেন প্রথম বার। কিন্তু চিরন্তন ছুটি হয়ে গেল উমর ফৈয়াজের। সামাজিক অনুষ্ঠানের আসর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তরুণ চিকিৎসককে খুন করল জঙ্গিরা, দেহ ফেলে গেল দূরের কোন এক রাস্তার মোড়ে। আপরাধ কী ছিল উমরের? জবাব মেলে না, জবাব দেওয়ার দায় কারও নেই। ভূমিপুত্রদের স্বার্থ রক্ষার লড়াইতে ভূমিপুত্রকেই খুন করতে হয় কেন, সে ব্যাখ্যা দেওয়ারও কেউ নেই।
উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। দীর্ঘ দিন ধরেই নানা প্রশ্ন উঠছে, উত্তরের খোঁজ চলছে, মুক্ত পরিসরেই সে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। কিন্তু এ বার একটু অন্যতর প্রশ্ন তোলার প্রয়োজনটাও অনুভূত হচ্ছে। অপরিসীম হিংসা আর নিরন্তর হানাহানি সম্বল করে কোন মহান গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব? খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
গণতন্ত্রে গণআন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই, মানতেই হবে। দাবি আদায়ের জন্য অনেক সময়ই আমাদের লড়তে হয়, আন্দোলনে সামিল হতে হয়, এও মানতে হবে। কিন্তু আন্দোলনকে দায়িত্বশীলও হতে হয়। মনে রাখতে হয়, আন্দোলন ইতিবাচক লক্ষ্যে পৌঁছনোর হাতিয়ার, ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্য সাধনের নয়। বর্বর হামলাকারীদের কাছে এই আপ্তবাক্য অর্থহীন হতেই পারে। কিন্তু তাতে সত্য লঘু হয় না, ধ্বংসযজ্ঞ সভ্যতার অনুমোদনও পায় না। অতএব, জম্মু-কাশ্মীরে শুরু হওয়া হিংসার এই উৎসবকে গণআন্দোলন নামে ডাকা যায় না।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইন্ধনেই উপত্যকা অশান্ত, আরও অশান্ত। একাধিক বার বলেছে ভারত। পাকিস্তান স্বীকার করুক বা না করুক, ভারত একাধিক বার অকাট্য প্রমাণ তুলে ধরেছে। সুতরাং উপত্যকায় চলতে থাকা এই অশান্তির শিকড় কোথায়, তা কোনও মহলের কাছেই আর তেমন অজানা নয়। কিন্তু কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলার কাজটা ভারতকে একাই যে করতে হবে, সে নিয়েও কোনও সংশয় থাকা উচিত নয়। কী ভাবে উপত্যকা থেকে সন্ত্রাসের মূলোচ্ছেদ করা যাবে? এক এবং এক মাত্র উত্তর হল— জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে। সে কাজ খুব কঠিনও কিন্তু নয়। উপত্যকাবাসীর একাংশ হয়তো বিভ্রান্ত আজ। কিন্তু তাঁরা সর্বাংশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে নন। যদি পক্ষে থাকতেন সাধারণ মানুষ, মারণাস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর পক্ষে হাঁটতে হত না এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। সরকার আলোচনায় উদ্যোগী হলেই পরিস্থিতির চাকা ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব উপত্যকায়। ইতিহাস সাক্ষী, হিমালয় সাক্ষী, আলোচনাতেই চাকা ঘুরে গিয়েছিল আগেও। এ বারও সে পথ ধরেই গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব। চাই শুধু সদিচ্ছা। রক্তপাত আর নয়, উপত্যকাকে ফের ভূস্বর্গ রূপেই দেখতে উদগ্রীব আপামর ভারত। সিদ্ধান্ত এ বার সরকারকেই নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকেও।