সম্পাদকীয় ২
Piyush Goyal

সবার উপরে

অ্যামাজ়নের প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী হঠাৎ বিরূপ কেন? সম্প্রতি জানা গিয়াছে, কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া দুই বৃহৎ ই-রিটেল সংস্থা অ্যামাজ়ন ও ফ্লিপকার্টের বিপণন পন্থা বিষয়ে অনুসন্ধান করিবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

পীযূষ গয়াল

বিনিয়োগের খোঁজে হন্যে হইতেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক বণিকসভা হইতে অন্য বণিকসভায় আবেদন জানাইতেছেন ভারতের বাজারে টাকা ঢালিবার জন্য। তাঁহার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ টের পান নাই। অথবা ভাবিয়াছেন, ঔদ্ধত্যের অস্ত্রেই তিনি বিনিয়োগের সোনার হরিণ শিকার করিয়া আনিবেন, প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রান্তে বিছাইয়া দিবেন। অ্যামাজ়নের শীর্ষকর্তা জেফ বেজ়োস ভারতের বাজারে আরও একশত কোটি ডলার লগ্নি করিবার কথা বলিয়াছিলেন। এই কঠিন সময়ে এ-হেন অঙ্কের বিদেশি লগ্নি— লাল কার্পেট না হউক, স্মিতহাস্যে তাহাকে স্বাগত জানানোই বাণিজ্যমন্ত্রীর কর্তব্য ছিল। শ্রীগয়াল বলিলেন, ডলার লগ্নি করিয়া অ্যামাজ়ন ভারতকে কৃতার্থ করিতেছে না— তাহাদের ব্যবসায় যদি লোকসান হয়, তবে সেই ঘাটতি পোষাইবার জন্য টাকাও তাহাদেরই ঢালিতে হইবে, ইহা আর আশ্চর্য কী। বাণিজ্যমন্ত্রীর বচনামৃতে অ্যামাজ়নের লগ্নিপ্রস্তাব হাওয়ায় মিলাইয়া যাইবে কি না, তাহা পরের প্রশ্ন— দেশ-বিদেশের বণিকমহলের প্রতিক্রিয়াটি লক্ষণীয়। এই জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করিবার ঝুঁকি কতখানি, রাহুল বজাজ-কাণ্ডের পর তাহা প্রশ্নাতীত। শিল্পমহলে অনেকেই জনান্তিকে বলিতেছেন, সরকার যদি এ-হেন মনোভাব পোষণ করে, তবে ভারতে লগ্নি করিবার পূর্বে আরও ভাবিতে হইবে। মন্ত্রিপ্রবরের মন্তব্যটি, অতএব, শুধু অ্যামাজ়নের ক্ষেত্রেই তাৎপর্যপূর্ণ নহে, তাহা সামগ্রিক ভাবে শিল্পমহলের দিকে ধাবিত হইয়াছে। শ্রীগয়াল কার্যত বুঝাইয়া দিয়াছেন, সরকার শিল্পক্ষেত্রে লগ্নি চাহে বটে, কিন্তু লগ্নিকারীদের প্রতি তাহার সহমর্মিতা নাই। দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি টালমাটাল। এই অবস্থায় শিল্পমহল যদি সরকারের সমর্থন বিষয়ে অনিশ্চিত হইয়া পড়ে, তবে লগ্নির কী হইবে, বুঝিয়া লওয়া সম্ভব।

Advertisement

অ্যামাজ়নের প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী হঠাৎ বিরূপ কেন? সম্প্রতি জানা গিয়াছে, কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া দুই বৃহৎ ই-রিটেল সংস্থা অ্যামাজ়ন ও ফ্লিপকার্টের বিপণন পন্থা বিষয়ে অনুসন্ধান করিবে। অভিযোগ, এই দুইটি সংস্থা বিভিন্ন পণ্যের উপর যে বিপুল ছাড় দেয়, তাহা প্রতিযোগিতার শর্ত লঙ্ঘন করিতেছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্ধত প্রতিক্রিয়ার পিছনে এই অভিযোগের ভূমিকা নাই, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন। সংস্থা দুইটি বহু ক্ষেত্রেই প্রভূত ছাড় দেয়, তাহা সত্য— কিন্তু, সেই ছাড় প্রতিযোগিতার শর্ত লঙ্ঘন করে কি? অথবা, তাহাকে কি প্রেডেটরি প্রাইসিং বলা চলে, যাহাতে বাজারে অন্য প্রতিযোগীরা শেষ অবধি ব্যবসা গুটাইয়া লইতে বাধ্য হইবেন, এবং তাহার পর এই সংস্থা দুইটি ন্যায্যের অধিক মূল্যে পণ্য বেচিতে সক্ষম হইবে? তেমন দাবি করা চলে না। তাহার প্রধান কারণ, ভারতে ই-রিটেলের বাজার এখনও অতি সীমিত— দেশের মোট খুচরা লেনদেনের মাত্র ১.৬ শতাংশ। অনুমান করা চলে, বাণিজ্যমন্ত্রী কথাগুলি জানেন। তাহার পরও তিনি অ্যামাজ়নের প্রতি শিষ্টতার গণ্ডি অতিক্রম করিলেন, তাহার কারণটি রাজনৈতিক। বিজেপির সাবেক সমর্থনভিত্তির একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ খুচরা ব্যবসায়ীরা। অ্যামাজ়ন-ফ্লিপকার্টের উত্থানে তাঁহারা উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। সন্দেহ হয়, খুচরা ব্যবসায়ীদের বার্তা দিতেই বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যামাজ়নের প্রতি রূঢ় হইয়াছেন। তাহাতে ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতির আশঙ্কা কতখানি, তাহা বিবেচনা করেন নাই। অবশ্য, এই অবিবেচনাই এখন দস্তুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement