দুর্ঘটনাস্থলের সামনে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উদ্ধারকারীরা।—ছবি এএফপি।
সুদুর তাইল্যান্ডের দুর্গম গুহায় আটকে পড়া ফুটবলারদের উদ্ধারের জন্য সরঞ্জাম তথা বিশেষজ্ঞ পাঠাতে পেরেছিল আমাদের দেশ। এ দেশেরই এক খনিগর্ভে যখন ১৫ জন শ্রমিক আটকে পড়লেন, তখন উদ্ধারকাজের উপযুক্ত আয়োজন করতে প্রায় দু’সপ্তাহ লেগে গেল। দুর্ভাগ্যজনক!
মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড়ে যে খনিগর্ভে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা, সেই খনি থেকে এবার দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করেছে। আশঙ্কাটা কি বাস্তবে রূপ নিয়েছে তাহলে? ভাবলেই ছ্যাঁৎ করে উঠছে বুকের ভিতরটা। খনিগর্ভ থেকে শ্রমিকদের বার করে আনা যাবে তো? নাকি পূর্ব জয়ন্তিয়ার গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে ১৫টা প্রাণ ইতিমধ্যেই? খনিমুখ ঘিরে এখন মুখ চাওয়াচাওয়ির পরিস্থিতি।
কর্তব্যে গাফিলতি? অবহেলা? খনিশ্রমিকদের বিপদকে গুরুত্ব না দেওয়া? নাকি বড়সড় বিপর্যয় চেপে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা? ঠিক কী কারণে এত বড় দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের, তা চিহ্নিত হওয়া দরকার। মেঘালয়ের ওই কয়লা খনিতে শ্রমিকরা যদি ১৩ই ডিসেম্বর থেকে আটকে থেকে থাকেন, তাহলে খনি থেকে দ্রুত জল বার করার জন্য বড় পাম্প পাঠাতে ডিসেম্বর প্রায় শেষ হওয়ার উপক্রম হল কেন? বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলকেই বা অনেকটা দেরিতে ডাকা হল কেন? খনিগর্ভে বিপর্যয়ের আঁচ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন পদক্ষেপ করা হল না? কেন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হতে দেওয়া হল? কেন ওই শ্রমিকদের জীবনে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করে দেওয়া হল? এই প্রশ্নগুলোর জবাব তো দিতেই হবে। জবাব স্থানীয় প্রশাসন দেবে, নাকি মেঘালয়ের সরকার অথবা দেশের সরকার, তা এই মুহূর্তে কারও জানা নেই। কিন্তু কোনও না কোনও স্তরের প্রশাসন বা কোনও না কোনও সরকারকেই জবাবটা দিতে হবে। কারণ, খনিতে নেমে বিপন্ন হয়ে পড়া প্রাণগুলো এদেশের নাগরিকদের এবং নাগরিকের সুরক্ষার দায় প্রশাসন তথা সরকারের উপরেই বর্তায়।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যে খনিতে বিপর্যয়টা ঘটেছে, সেটা অবৈধ খনি বলেই জানতে পারছি। পরিবেশ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তৈরি হওয়া অবৈধ খাদানে বিপর্যয়ের খবর ছড়ালে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে— এই আশঙ্কা করেই পুলিশ প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছনো আটকে রাখা হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন খবরটা পাওয়ার পরে যে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ এগনোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল, এমনটা বলা যাচ্ছে না। ১৫ জন নাগরিক জীবন-মৃত্যুর মাঝের সুতো ধরে ঝুলছেন যখন, তখন প্রশাসন তথা সরকারের তরফে এই দীর্ঘসূত্রিতা অমার্জনীয় অপরাধ।
আরও পড়ুন: এখনও খনির সুড়ঙ্গে আটক ১৫ শ্রমিক, উদ্ধারে গাফিলতি নিয়ে কাঠগড়ায় প্রশাসন
অবৈধ খাদান মেঘালয় জুড়ে এ ভাবে রমরম করে চলছেই বা কী করে? আইনকে শিকেয় তুলে দিয়ে অবাধে চলছে পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ, আর সরকার কিছুই বুঝছে না? শোনা যাচ্ছে, পুলিশ এবং প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতেই অবৈধ কার্যকলাপের রমরমা। সূতরাং পুলিশ-প্রশাসন তথা সরকারের কাছে জবাব চাইতেই হবে।
এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কি কোনও শিক্ষা দিল আমাদের? এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে শিক্ষা আসাও খুব একটা কাজের কথা নয়।