সম্পাদকীয় ২

অখাদ্য

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা মনে করাইল, খাদ্যে ভেজাল নিবারণের কোনও সহজ উপায় নাই। ভেজালের কারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করিতে নূতন নিয়মের প্রয়োজন অবশ্যই রহিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০০:১২
Share:

বরফের রং বদলাইয়া কি খাদ্যের মান ফিরিবে? কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনের নির্দেশ, বাণিজ্যিক বরফে নীল রং মিশাইতে হইবে। খাদ্যের উপযোগী বরফ থাকিবে রংহীন, সাদা। এই নির্দেশে নূতন আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। কারণ, বাণিজ্যিক বরফ নানা খাদ্যবস্তু সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হইতে পারে। বরফ হইতে রাসায়নিক রং এই সকল খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিলে ফল কী হইবে? খাদ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাণিজ্যিক বরফে মিশাইবার জন্য কমিশন-নির্দিষ্ট নীল রংগুলি সঠিক মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করিলে ক্ষতি হয় না, কিন্তু মাত্রা অতিক্রান্ত হইলে সঙ্কট হইতে পারে। আরও বড় আশঙ্কা, অনুমোদিত রং ব্যবহার না করিয়া ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যের সিসা-মিশ্রিত নীল রং বরফে মিশাইতে পারেন। তাহা খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হইলে নানা দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করিবে। অতএব অনুমোদিত রংটিই বাণিজ্যিক বরফে ব্যবহার হইতেছে কি না, এবং সুরক্ষিত ব্যবহারের সীমা ছাড়াইয়াছে কি না, দেখিতে হইবে। ইহাতে দুগ্ধবিক্রেতার উপর পরিদর্শক, তাহারও উপরে পরিদর্শক বসাইবার পরিচিত কৌতুক-কাহিনি মনে পড়িবে। কেন্দ্র যত নির্দেশ জারি করিতেছে, ততই যেন পরিদর্শনের প্রয়োজন বাড়িতেছে।

Advertisement

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা মনে করাইল, খাদ্যে ভেজাল নিবারণের কোনও সহজ উপায় নাই। ভেজালের কারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করিতে নূতন নিয়মের প্রয়োজন অবশ্যই রহিয়াছে। কলিকাতা ও মুম্বইয়ের রাস্তায় পানীয় বিক্রেতারা যে অবাধে বাণিজ্যিক বরফ ব্যবহার করিতেছেন, তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে। মুম্বইয়ে পুরসভার সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, পানীয়ে ব্যবহৃত পঁচানব্বই শতাংশ বরফ ‘অখাদ্য।’ বরফে নীল রং ব্যবহার করিলে এই দুষ্কার্য কিছুটা প্রশমিত হইবে, সন্দেহ নাই। কিন্তু ক্রেতার চক্ষুর আড়ালে বাণিজ্যিক বরফ খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হইবে না কি? অতএব নিয়মের সঙ্গে সঙ্গে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ এবং দুষ্কৃতীর জেল-জরিমানার ব্যবস্থাটি চালু না রাখিলে ভেজাল প্রশমিত হইবার সম্ভাবনা নাই। আশার কথা, এ রাজ্যে ভাগাড়-কাণ্ডের পর এ বিষয়ে সরকার সক্রিয় হইয়াছে, এমন ইঙ্গিত মিলিতেছে। কলিকাতা পুরসভা খাদ্য পরিদর্শকের শূন্য পদগুলিতে কর্মী নিয়োগের সঙ্কল্প লইয়াছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসম্মত কসাইখানা খুলিবার পরিকল্পনাও নাকি প্রস্তুত হইতেছে। উদ্দেশ্য সাধু, তাহা কার্যে পরিণত হওয়া প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের নিরন্তর সতর্কতা, প্রাত্যহিক সক্রিয়তা ভেজাল প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

তবে নাগরিকও দায়ভাগ অস্বীকার করিতে পারেন না। ভাগাড়ের মাংস খাইয়া ফেলিবার ক্ষোভে তাঁহারা উদ্বেল, কিন্তু খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁহারা অনেকেই ‘ভাবের ঘরে চুরি’ করিতেই অভ্যস্ত। যে কোনও খাদ্যবস্তুর উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণ কী ভাবে হয়, তাহা কোনও গোপন তথ্য নয়। রাস্তায় বিক্রীত খাদ্যের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যের বিধিভঙ্গ খোলাখুলি হইতেছে। শস্য এবং আনাজপাতির ক্ষেত্রেও সার, কীটনাশক, ও সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিকের অপপ্রয়োগ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করিতে পারে। তৎসত্ত্বেও এ বিষয়গুলি ক্রেতাদের বিবেচনায় আসিতেছে না। সুরক্ষার দাবি ক্রেতা না করিলেও বিক্রেতা তাহার জোগান দিবেন, এমন দুরাশা না করাই ভাল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement