দ্রুত সবুজ কমছে ঝাড়গ্রাম শহরে। নগর বাড়ছে দ্রুত। নগরবাসীদের স্বাস্থ্য-খাদ্য রক্ষার জন্যই সবুজ শহরের ভাবনা। নিজস্ব চিত্র
শহর সবুজ। সুতরাং স্বাস্থ্যকর। এমন একমুখীন ভাবনার দিন আর নেই। দ্রুত নগরায়িত জনপদগুলোয় গাছপালা লাগিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে না বলেই মত আধুনিক জনজীবন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা বিদ্বানদের। শহরে গাছপালা বাড়ালে শুধু পরিবেশগত সুবিধে হবে। আর বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি। নির্মল বাতাসে নাগরিকদের প্রাণবায়ু আরও সতেজ হবে। কিন্তু খাদ্য? তার জোগান আসবে কোথা থেকে! খাদ্য সঙ্কট যে এখনও বিশ্বের বড় সমস্যা। সেই জন্যই ভাবনার বদল করা হয়েছে সম্প্রতি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’ (এফএও) সম্প্রতি একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই উদ্যোগ হল নগরগুলোকে ‘গ্রিন সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলা। এই উদ্যোগে শহরে শুধু সবুজ বৃদ্ধি করা হবে না। একই সঙ্গে কৃষি-খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্যোগ শহর সংলগ্ন এলাকাতেও করা হবে। ইতালির রোমে ইতিমধ্যেই শহরের বাগানে ফসল ফলাচ্ছেন শ্রমিকেরা।
কেন এই উদ্যোগ? একটা কারণ অবশ্যই করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী প্রভাব। মানব স্বাস্থ্যের উপরে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যাবে এই রোগ। আক্রান্ত না হলেও। কারণ বন্দি-জীবনে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পরিচ্ছন্নতায় জোর দেওয়া চলছে। ফলে নাগরিকদের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে দরকার হবে দূষণ মুক্ত পরিবেশ। তার জন্য সবুজ দরকার। শহরে খাদ্যের জোগান আসে বাইরে থেকে। সবুজ শহরে থাকবে খাদ্যের উৎপাদন ব্যবস্থা। বিশ্বে এখনও খিদে নিয়ে, আধপেটা খেয়ে থাকেন কয়েক কোটি মানুষ। তাঁদের খিদেও কিছুটা মিটবে।
প্রাথমিক ভাবে এফএও বিশ্বের ১০০টি শহরকে সবুজ শহর করার কথা ঘোষণা করেছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১৫টি মহানগর, ৪০টি মাঝারি এবং ৪৫টি ছোট শহরকে ‘গ্রিন সিটি’ তৈরি করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এইরকম শহরের সংখ্যা হবে এক হাজারটি। ছোট, বড়, মাঝারি সব ধরনের শহর পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকার আদানপ্রদান জোরদার করা হবে। আর এই কাজে লাগানো হবে রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরকে। দেশের সরকার থেকে পুরসভা, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনও সবুজ শহর গড়ার কাজে যুক্ত হবে। কাজে লাগানো হবে যুব সম্প্রদায় এবং মহিলাদেরও।
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বের বড় সমস্যা। এর জন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে স্বাস্থ্য, সবদিক থেকেই বিপদ আসতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন আটকাতে নানা উদ্যোগ করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। সমুদ্রের জলেরও। এর মধ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে, নগরায়ন হচ্ছে দ্রুত। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৭০ শতাংশ জনগণ নগরবাসী হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা। আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলোতে ৯০ শতাংশই শহরবাসী হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা। আরেকট বিপদ হল, বিশ্বের মোট খাদ্যের ৭০ শতাংশই লেগে যাবে শহরবাসীর খিদে মেটাতে। আর এই পরিমাণটা দিন দিন বাড়বে। এমনিতেই বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত শক্তির ৮০ শতাংশ গ্রহণ করে শহরবাসী। আবার বিশ্বে যা আবর্জনা জমে তার ৭০ শতাংশ এই শহরবাসীর অবদান। বিশ্বে শক্তি সংক্রান্ত গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদন যা হয় তার ৭০ শতাংশই শহরের দান। করোনা-কালে কাজ হারিয়েছেন বহুজন। সবুজ শহরের উৎপাদন ব্যবস্থা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করবে।
আমাদের তিন জেলা, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামেও দ্রুত নগরায়নের সমস্যা কম নেই। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরে সাতটি, পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁচটি এবং ঝাড়গ্রামে একটি পুরসভা রয়েছে। দ্রুত নগরায়নের দিকে এগোচ্ছে পূর্বের মহিষাদল, রামনগর, দিঘা, কোলাঘাট। পশ্চিমের বেলদা ও চন্দ্রকোনা রোড। ফলে সবুজের ঘাটতি বাড়ছে। ঝাড়গ্রামে জঙ্গল কেটে বসতি হয়েছে প্রচুর। শহরে দ্রুত সবুজ কমছে। এইসব এলাকায় সবুজ শহর একযোগে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। দরকার শুধু উদ্যোগের।