পাক হামলার যোগ্য জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনা।
সত্তরে পা দিল স্বাধীনতা। সাতটা দশক পেরিয়ে এলাম। স্নিগ্ধ সকাল একটা। একটা ফিরে দেখার সকাল। কতটা এগোলাম, কতটা বাকি রয়ে গেল, অর্জনের জমা-খরচ আজ কোথায় পৌঁছল— সবটা মিলিয়ে দেখার আর নতুন সঙ্কল্প নেওয়ার সকাল একটা।
গতকাল এই সকালটাই পা ফেলেছিল পাকিস্তানে। সেখানেও তার সত্তরতম পদক্ষেপই ছিল। কিন্তু সকালটাকে বোধ হয় ততটা স্নিগ্ধ রাখতে পারল না ইসলামাবাদ। ফিরে দেখার সকাল হয়ে উঠল না। ঘৃণা, বিদ্বেষ আর হিংসার আঁচ যে ভাবে ভেসে এল পশ্চিম দিক থেকে, তাতে স্পষ্টতই বোঝা গেল, পাকিস্তানে স্বাধীনতার সকালে রোদের তেজটা বড্ড গনগনে ছিল।
ভোরের আলো ফোটার আগে নিয়ন্ত্রণ রেখার ও পার থেকে গোলা বর্ষণ শুরু। একটু বেলা বাড়তেই দিল্লিতে নিযুক্ত পাক দূত কাশ্মীর নিয়ে প্ররোচনার গোলা ছুড়লেন। প্রত্যাশিত ভাবেই নিয়ন্ত্রণ রেখায় এবং কূটনৈতিক ময়দানে ভারতও উপযুক্ত জবাব দিল। সব মিলিয়ে দিনভর পাকিস্তান উত্তপ্ত রইল ভারত বিরোধিতার আঁচে।
প্রাক্তন পাক বিদেশ মন্ত্রী হিনা রব্বানি খার মাস কয়েক আগে একটা মন্তব্য করেছিলেন। সেই মন্তব্যটা আজ আবার খুব প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। অনেক খেদ নিয়ে হিনা বলেছিলেন, পাকিস্তান তার নাগরিকদের শৈশব থেকেই ভারত-বিদ্বেষী হতে শেখায়। কোনও রাষ্ট্রের মোক্ষ কি মূলত অন্য একটি রাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষ হতে পারে? আক্ষেপের সুর ছিল হিনার কণ্ঠে।
আরও এক বার প্রমাণিত হল, হিনা ভুল বলেননি। নাগরিকদের মধ্যে ভারত বিরোধী বিদ্বেষের শিখাকে লেলিহান করতে যে ভাবে একটা জাতীয় উৎসবের দিনকে আহুতি দিয়ে দিল ইসলামাবাদ, তা শুধু আক্ষেপের নয়, রাষ্ট্রের পক্ষে লজ্জাজনকও!
কোন লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইল পাকিস্তান? আসলে সত্তর বছর ধরে কোনও লক্ষ্যেই যে পৌঁছনো যায়নি, সেই জ্বালা ধরানো সত্যটাকেই চাপা দেওয়ার চেষ্টা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তান আজ ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রের’ সারিতে। অপরিসীম দারিদ্র। নাগরিকের বুনিয়াদি চাহিদাগুলো মেটাতে সরকার অপারগ। অর্থনীতির ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশ। রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতা সেনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় বার বার অভ্যূত্থানের ধাক্কা। তার জেরে গণতন্ত্র হতমান, হীনবল। রাষ্ট্রের অক্ষমতার বোঝা মাথায় নিয়ে রোজ পিছু হঠতে হঠতে নাগরিকের মনে প্রবল রাষ্ট্রবিরোধী ক্ষোভ। বালুচিস্তানে স্বাধীনতার চাহিদা, ওয়াজিরিস্তানে বিদ্রোহ, খাইবার-পাখতুনখোয়ায় বিচ্ছিন্নতার অকাঙ্খা। জর্জরিত পাক সরকার বুঝতে পারছে, নাগরিককে আশ্বস্ত রাখার, রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাশীল রাখার কোনও উপায়ই আর হাতে নেই।
অতএব, এখন একটু আফিম চাই। এমন আফিম চাই, যা সমস্ত জ্বালা-যন্ত্রণা জুড়িয়ে বেশ অনেকটা সময় বুঁদ করে রাখতে পারবে জাতিকে। পাকিস্তানের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা জানেন, ভারত-বিদ্বেষই সেই মোক্ষম আফিম। তাই উস্কে দেওয়া হল সেই বিদ্বেষ। জাতির গরিমার দিনে জাতীয় অর্জনের জমা-খরচের হিসেব মেলানোর কোনও চেষ্টাই হল না। ফেলে আসা সাতটা দশককে ফিরে দেখার চেষ্টাও হল না। শুধু কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে সজোরে ঘুরিয়ে দেওয়া হল ভারত-বিদ্বেষের চাকাটা।
নাগরিকদের সঙ্গে এই প্রতারণা আর কত দিন? প্রতারণার ধামা দিয়ে অপারগতার সত্যটাকে আর কত দিন চাপা দিয়ে রাখা যাবে? আফিমের প্রয়োগ কি অনন্ত কাল চলবে? ইসলামাবাদের বোঝা উচিত, সর্বক্ষণ আফিমে বুঁদ রাখলে, জাতি পঙ্গুত্বের দিকেই এগোবে।