Duare sarkar

সফল

‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের উপচাইয়া পড়া ভিড় এই দায়িত্বগ্রহণেরই স্বীকৃতি। প্রকল্পটির সাফল্য স্বীকার করাই বিধেয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪৬
Share:

মাত্র এক মাসে আবেদনের সংখ্যা ছাড়াইয়া গেল তিন কোটি। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির জনপ্রিয়তা লইয়া, অতএব, সংশয়ের অবকাশ নাই। এই শিবিরে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘স্বাস্থ্য সাথী’-তে নাম নথিভুক্ত করা হইতেছে। সংবাদে প্রকাশ, এই দুইটি প্রকল্পেরই চাহিদা সর্বাধিক। প্রকল্পগুলিতে নাম নথিভুক্ত করাইবার তাগিদে স্পষ্ট যে, নাগরিকের প্রতি সাহায্যের এই হাতটুকু বাড়াইয়া দিবার কতখানি প্রয়োজন ছিল। অর্থশাস্ত্রীরা বারে বারেই মনে করাইয়া দিয়াছেন যে, অতিমারির ফলে যাঁহাদের আয় তলানিতে ঠেকিয়াছে, তাঁহাদের হাতে নগদের ব্যবস্থা করিবার কর্তব্যটি রাষ্ট্রের উপর বর্তায়। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সেই দায় লয় নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকার, তাহার সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, দায়িত্বটি লইয়াছে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের উপচাইয়া পড়া ভিড় এই দায়িত্বগ্রহণেরই স্বীকৃতি। প্রকল্পটির সাফল্য স্বীকার করাই বিধেয়।

Advertisement

তবু, কেহ চাহিলে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করিতে পারেন। যেমন, প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত হওয়া আর প্রকল্পের সুফল হাতে পাওয়া, এই দুইটি যে কোনও অবস্থাতেই এক নহে, রাজ্যবাসী তাহা অভিজ্ঞতায় জানেন। নাম উঠা হইতে টাকা পাইবার মধ্যে সরকারি দীর্ঘসূত্রতা আছে, দলতন্ত্র আছে, স্থানীয় স্তরের নেতার ‘কাট মানি’ আছে। বহু ঘাট ঘুরিয়া সাহায্যের নদীটি যখন ন্যায্য প্রাপকের দুয়ারে পৌঁছাইবে, তখন তাহাতে এক আঁজলা জলও থাকিবে কি না, কেহ সেই সংশয় প্রকাশ করিতে পারেন। অন্য একটি প্রশ্নও উঠা সম্ভব— ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের মূল কথা হইল, প্রশাসনিক দফতরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মানুষের যে কাজ হয় নাই, এই শিবিরে তাহাই হইবে। অর্থাৎ, শিবিরের বাহিরে যে দীর্ঘ লাইন পড়িতেছে, তাহার অন্তত একাংশের কাজ প্রশাসনিক দফতরেই হইয়া যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয় নাই। কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, এই কথাটি মাথায় রাখিলেও কি ‘দুয়ারে সরকার’-এর ‘সাফল্য’ লইয়া গর্বিত হওয়া চলে? আরও একটি সম্ভাব্য আপত্তি ইহাও হইতে পারে যে, ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পকে সফল করিতে যে মনোযোগ দেওয়া হইতেছে, যত সরকারি কর্মী নিয়োগ করা হইতেছে, তাহা অন্যান্য প্রকল্পের ভাগ হইতে আসিতেছে। অতএব, এই প্রকল্পের সাফল্যের সহিত অন্যান্য প্রকল্পে রক্তাল্পতার প্রত্যক্ষ যোগ থাকা সম্ভব।

আপত্তিগুলির কোনওটিই উড়াইয়া দিবার মতো নহে। কিন্তু, প্রশ্নগুলিকে প্রতিপ্রশ্ন করা বিধেয়। সরকারি প্রকল্পের টাকা বা সুবিধা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে তাহার বারো আনাই খোয়া যায়, ইহা শুধু বর্তমান জমানার সমস্যা নহে। ইহা সর্বভারতীয় সমস্যা, সর্বকালীনও বটে। সরকারি দফতরে জুতার সুখতলা ক্ষয়াইয়া ফেলিলেও কাজের সুরাহা হয় না, এই অভিযোগও আজিকার নহে। ছত্রিশ মাসে বৎসর, এহেন বাক্যাংশটির উৎপত্তি সম্ভবত সরকারি কর্মচারীদের রকমসকম দেখিয়াই। বস্তুত, ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের সূচনাতেই এই স্বীকারোক্তি নিহিত আছে যে, সরকারি দফতরে যে পরিষেবা সাধারণ মানুষের প্রাপ্য, বহু ক্ষেত্রেই তাহা মিলে না। বর্তমান প্রশাসন যে এই দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতির ব্যূহ ভাঙিতে চাহিতেছে, তাহাই বরং নূতন। এবং, রাজ্যে উন্নয়নের যে নূতন পথসন্ধানের সচেতন প্রচেষ্টা চলিতেছে— অর্থাৎ, যে প্রক্রিয়ায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ ও ঘনিষ্ঠ— তাহার সহিত প্রশাসনকে নাগরিকের দুয়ারে লইয়া আসিবার নীতির সাযুজ্য রহিয়াছে। পূর্বতন কোনও জমানাতে উন্নয়নপ্রক্রিয়া ও প্রশাসনিকতার এই সম্পর্কের কথা এই ভাবে ভাবা হয় নাই। সমস্যা বিলক্ষণ আছে, কিন্তু তাহাতে এই প্রচেষ্টার গুরুত্ব লাঘব হয় না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement