এক দিকে বায়ুদূষণ, আর অন্য দিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ছেঁকা— পেট্রল-ডিজ়েলচালিত গাড়ির এই দ্বিমুখী সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়ার পথে একটি ছোট পদক্ষেপ করল কলকাতা। কসবায় সিএনজি রিফিলিং সেন্টারের উদ্বোধন হল। সরকারি উদ্যোগে এই প্রথম। শুধু এই একটিই নয়, আগামী দিনে রাজ্য পরিবহণ নিগম এবং বেঙ্গল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড-এর চুক্তি অনুযায়ী, আরও সাতটি জায়গায় সিএনজি রিফিলিং সেন্টার তৈরি করার কথা জানানো হয়েছে পরিবহণ দফতরের তরফে। এই পদক্ষেপের ফলে পরিবেশ দূষণ রোধ করার পাশাপাশি জ্বালানি খরচও প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমানো যাবে বলে পরিবহণ কর্তাদের দাবি।
এই উদ্যোগ স্বাগত। গত বছরের শেষার্ধেই এক হাজার পরিবেশবান্ধব বাস কলকাতার রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা করেছিল পরিবহণ দফতর। বেশ কিছু বাসের ডিজ়েল ইঞ্জিন সিএনজি-তে রূপান্তরিত করার কথাও বলা হয়েছিল। শহর এবং সংলগ্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই সিএনজি চালিত সরকারি ও বেসরকারি বাস পরিষেবা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিবেশবান্ধব পরিবহণের পথে হাঁটতে গেলে তদনুরূপ পরিকাঠামো নির্মাণ করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। ইতিপূর্বে গড়িয়া এবং নিউ টাউনে বেসরকারি উদ্যোগে সিএনজি পাম্প চালু হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট ছিল না। সরকারি উদ্যোগে কসবার সেন্টারটি চালু হওয়ায় এই সঙ্কট হয়তো কিছুটা মিটবে। কিন্তু অন্য সেন্টারগুলিও যাতে দ্রুত চালু করা যায়, সেই উদ্যোগ করতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ঝোঁক তখনই বাড়বে, যখন তা আর্থিক দিক থেকেও লাভজনক হবে। সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত বাসের মূল্য সাধারণ পেট্রল-ডিজ়েলচালিত বাসের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। ডিজ়েল ইঞ্জিনকে সিএনজি-তে রূপান্তরিত করার খরচও কম নয়। অতিমারিতে বিপর্যস্ত পরিবহণ শিল্পের পক্ষে এই অতিরিক্ত খরচের ভার বহন করা সম্ভব কি না, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়ে। বিকল্প পথে হাঁটতে হলে এই বিষয়গুলি নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন।
এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। দূষণের রোধে সরকারি পদক্ষেপগুলি বড় বেশি শহরকেন্দ্রিক— জেলাগুলি ব্রাত্যই থেকে যায়। যেমন, পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশবান্ধব সিএনজি অটোর পারমিট দেওয়া হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু সিএনজি ভরার পরিকাঠামো জেলাতেও তেমন গড়ে ওঠেনি। ফলে, বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাসে (এলপিজি) বেশির ভাগ অটো চলছে বলে অভিযোগ। তা ছাড়া দূষণরোধই যদি মূল লক্ষ্য হয়, তবে সিএনজি পরিকাঠামো গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে ১৫ বছরের অধিক পুরনো গাড়ি, দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র ছাড়া গাড়ি চলাচল রোধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে কাটা তেলে চলা অটোর বিরুদ্ধেও। বস্তুত দূষণ প্রতিরোধে শহরে যান চলাচলের ক্ষেত্রে যেটুকু নিয়ম মানা হয়, জেলায় কার্যত তা দেখা যায় না। এই বিভাজন দূষণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। যে দেশে ২০১৯ সালে প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ বায়ুদূষণজনিত কারণে প্রাণ হারান, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ, সেখানে দূষণ প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগে একটা সামগ্রিকতার ছাপ থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় তা চমকই থেকে যায়, কাজের কাজ কিছু হয় না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।