—প্রতীকী ছবি।
যক্ষ্মা হারবে, জিতবে দেশ— এই স্লোগান সামনে রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মা-মুক্ত করে তোলার প্রয়াস করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সেই উদ্দেশ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী টিবি মুক্ত ভারত অভিযান’ শুরু হয়। সম্প্রতি সেই সুরেই আগামী দু’বছরের মধ্যে বাংলাকে যক্ষ্মা-মুক্ত করার কাজে তৎপরতা বাড়াল পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরও, সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই। লক্ষ্য, আগামী দু’বছরের সময়সীমার মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ পঞ্চায়েত এলাকা যক্ষ্মা-মুক্ত করা। জানানো হয়েছে, কর্মসূচির শেষে পঞ্চায়েতগুলি স্বয়ং নিজেদের টিবি-মুক্ত ঘোষণা করবে। সেই দাবি খতিয়ে দেখার পরেই স্বাস্থ্য এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে ‘যক্ষ্মা-মুক্ত’ তকমা দেবে।
যক্ষ্মা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির কাছে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এখনও এক গভীর সমস্যা। বস্তুত, বিশ্বে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যার নিরিখে ভারতের স্থান শীর্ষে। ফলে, শুধুমাত্র প্রকল্প রূপায়ণই নয়, তা সুসম্পন্ন করার বিষয়েও উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক। ভারতের মতো দেশে অন্যতম সমস্যা ‘নিখোঁজ’ যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা। হয় তাঁদের রোগনির্ণয় করা যায়নি, নয়তো চিকিৎসা শুরু হয়নি, অথবা সরকারি খাতায় তথ্য অনুপস্থিত। এই অচিকিৎসিত রোগীরাই সামগ্রিক ভাবে যক্ষ্মা দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক। তদুপরি, ভারতীয় জনস্বাস্থ্যে রক্তাল্পতা এবং অপুষ্টি প্রায় মহামারিসম। প্রমাণিত, দারিদ্র, অস্বাস্থ্যকর বসবাস, অপুষ্টি, এবং তামাকসেবন ভারতে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির প্রধানতম কারণ। অথচ, এই দিকগুলিতে পর্যাপ্ত নজরদারি কই? উপরন্তু জনস্বাস্থ্যে সরকারি বিনিয়োগ এখনও আশ্চর্য রকম কম। ফলে, দেশে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা কমছে, বা যক্ষ্মা দূরীকরণে সরকার সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে বলে যতই দাবি করা হোক— ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা এখনও বহু দূরে।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও চিত্রটি উজ্জ্বল বলে দাবি করা মুশকিল। নিঃসন্দেহে রোগ চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে রোগীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে সরকার বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপও করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তার স্বীকৃতিও মিলেছে। তবে, প্রশ্ন এখনও অনেক। ৭০ শতাংশ পঞ্চায়েতকে যক্ষ্মা-মুক্ত করার ক্ষেত্রে তৎপরতা বাড়াতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল কেন? ইতিপূর্বে অতিমারির কারণে সারা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও যক্ষ্মা-মুক্তি অভিযান সবিশেষ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। অনেক জায়গায় সময়ে রোগ পরীক্ষা করা যায়নি। যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে এই বিলম্বগুলি যে সম্পূর্ণ উদ্যোগকে অনেকখানি পিছিয়ে দেয়, তা কি সরকার জানে না? তা ছাড়া এই রাজ্যেও সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রের সমন্বয়ের মধ্যে বিস্তর ফাঁক বর্তমান। ফলে, বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসাধীনদের সমস্ত তথ্য সরকারের ঘর পর্যন্ত পৌঁছয় না। এই দূরত্ব মুছতে সরকার কতখানি তৎপর? সর্বোপরি, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের একটি বড় বাধা রোগীর উদাসীনতা। ওষুধের মেয়াদ সম্পূর্ণ না করলে ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মার সৃষ্টি হতে পারে, যা ইতিমধ্যেই দেশের অন্যত্র বিপদ ডেকে এনেছে। এই বিপদ রুখতে সরকার কী উদ্যোগ করছে, সে বিষয়টিও জানাতে হবে বইকি। যক্ষ্মা এমনই এক রোগ, যা নির্মূল হয়েও ফের আঘাত হানতে পারে। সুতরাং, যে কোনও প্রকার ঢিলেমি সম্পূর্ণ বর্জনীয়।