India- Canada

পালাবদলের হাওয়া

দেশে মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব হ্রাস করতে না পারার কারণে অতিমারি-পরবর্তী সময় থেকেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলেন ট্রুডো।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:৩০
Share:

বছরের শুরুতেই পালাবদলের হাওয়া কানাডায়। ঘরে ও বাইরে দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপড়েনের মাঝে শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জাস্টিন ট্রুডো। তাঁর এই পদত্যাগের পাশাপাশি জল্পনা দিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি নিয়ে। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে যখন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন কানাডা সরকার তাদের মাটিতে বিশিষ্ট খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যার অভিযোগ তোলে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। এই হত্যার সঙ্গে দিল্লির যোগসাজশের কোনও পোক্ত প্রমাণ অদ্যাবধি জনসমক্ষে তুলে ধরতে না পারা গেলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, খলিস্তানি গোষ্ঠীদের তুষ্ট করে ভোট পাওয়ার আশায় ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জলাঞ্জলি দেন ট্রুডো। নিরাপত্তা সংস্থাগুলির নরম মনোভাব চরমপন্থীদের সাহসী করে তোলে। তবে ট্রুডো যে দলে তাঁর ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে জনগণের চোখ সরানোর প্রচেষ্টা করেছিলেন, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দেশে মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব হ্রাস করতে না পারার কারণে অতিমারি-পরবর্তী সময় থেকেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলেন ট্রুডো। তাঁর আমলে ‘সাস্টেনেবল ডেভলপমেন্ট টেকনোলজি কানাডা’ নামক সরকারি অর্থ সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছিল ট্রুডোর নেতৃত্ব নিয়েও। গত নভেম্বরে আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন কানাডার পণ্যের উপরে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দেন এবং পরবর্তী কালে কৌতুকছলে কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম প্রদেশ বানানোর আহ্বান করেন, তখন তার যোগ্য জবাব দিতে পারেননি ট্রুডো। ঘটনাগুলি দলীয় স্তরে উষ্মা বাড়িয়েছে। এ ছাড়াও, তাঁর সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতি নিয়ে অসন্তোষ, নবনির্বাচিত আমেরিকান প্রেসিডেন্টের শুল্ক-হুমকির জেরে দেশের আসন্ন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের দোহাই দিয়ে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সতীর্থ উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের ইস্তফা তাঁকে নেতৃত্ব ছাড়তে বাধ্য করে।

নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দলের নেতৃত্বভার আপাতত নিজের হাতেই রাখছেন ট্রুডো। তবে এর মাঝে কনজ়ারভেটিভ দলের উত্থান ভারত-কানাডা সম্পর্কে এক নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিচ্ছে। লক্ষণীয়, ভারত-কানাডার বিবাদের বিষয়টি যে ভাবে সামলেছেন ট্রুডো, তা নিয়ে এ-যাবৎ বেশ সরব থেকেছেন কনজ়ারভেটিভ নেতা পিয়ের পলিয়েভ্রা। পিয়ের স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার সুবাদে আগামী দিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের সঙ্গে পুনরায় পেশাদার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। বদল আনতে চান অভিবাসন নীতিতেও, যেখানে প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রী এবং কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে ২০২২ সালে তিনি যে ভাবে একটি ভারতীয় অনুষ্ঠান থেকে সরে এসেছিলেন, সেখানে আগামী দিনে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে তিনি কতখানি অগ্রসর হবেন, প্রশ্ন থাকছে। আগামী অক্টোবরে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচনের ফলাফল ঠিক করে দেবে কানাডার রাজনীতির পালের হাওয়া কোন দিকে বইতে চলেছে। বিশেষত দিল্লির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী ভাবে এগোয় অটোয়া, সময় তা বলবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement