Lok Sabha Election

শেষ পর্যন্ত

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে অবশ্য একাধিক কারণে সর্বভারতীয় স্তরে আগ্রহ রয়েছে। তার অন্যতম, এ রাজ্যে নির্বাচনী হিংসা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৯:৩৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

দেড় মাসব্যাপী নির্বাচনপর্বের আজ সপ্তম তথা শেষ পর্ব। প্রতিটি পর্বেই পশ্চিমবঙ্গের কোনও না কোনও আসনে নির্বাচন ছিল। এবং দেখা গেল, প্রতিটি পর্বেই দেশের গড় ভোটদানের হারের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে ভোট পড়েছে বেশি হারে। কেন এ বার গোটা দেশে ভোটদানের উৎসাহ কম, তা যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাবিয়েছে; তেমনই পশ্চিমবঙ্গে কেন সেই হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি, রাজনৈতিক দলগুলি তা নিয়েও ভাবিত। নির্বাচনী অভিজ্ঞতা বলে যে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতি বিরক্তি বা রাগ থাকলে— যা ‘অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর’ নামে বহু-আলোচিত— অধিকতর সংখ্যায় মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে অধিকতর ভোটদানের হার যদি এই ‘অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি’র লক্ষণ হয়, তা হলে প্রশ্ন উঠবে, ভোটারদের বিরক্তি কার উপরে? যে-হেতু লোকসভা নির্বাচন চলছে, এই ক্ষেত্রে বিচার্য হওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকলাপ। কিন্তু, যে-হেতু অধিকাংশ মানুষই নির্বাচন অনুসারে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কার্যকলাপ বিচার করেন বলে মনে হয় না, এবং যে-হেতু দেশের অন্যত্র ভোটদানের হার রীতিমতো কম, ফলে অনেকেরই সংশয়, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের প্রতি অসন্তোষই হয়তো ভোটদাতাদের তাড়িত করছে। রাজনৈতিক দলগুলিও চিন্তিত— তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপি, কেউই ভোটের ফল নিয়ে নিশ্চিত নয়। শেষ পর্বের প্রচারেও তার ছাপ পড়েছে। গণতন্ত্রের পক্ষে এই অনিশ্চয়তাকে মন্দ বলা চলে না। নির্বাচন মানে যে প্রশ্নহীন দলীয় আনুগত্য নয়, ভাল-মন্দ বিবেচনা না-করেই কোনও একটি দলকে ভোট দেওয়া নয়, বরং নির্বাচনই রাজনৈতিক দলগুলিকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার সময়, এই কথাটি সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, উভয়েই বুঝলে ভাল।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে অবশ্য একাধিক কারণে সর্বভারতীয় স্তরে আগ্রহ রয়েছে। তার অন্যতম, এ রাজ্যে নির্বাচনী হিংসা। অস্বীকার করা যাবে না যে, গত কয়েকটি নির্বাচনের তুলনায় এ দফায় রাজ্যে হিংসাত্মক ঘটনা কম। একটি কারণ হতে পারে প্রভূতসংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি। তবুও, রক্তপাতহীন ভাবে শেষ হল না নির্বাচনপর্বটি। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রাবল্য পশ্চিমবঙ্গকে গোটা দেশে এক লজ্জার আসন দিয়েছে। এই সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় কারণ হল, রাজনৈতিক দখল রাখতে পারা এ রাজ্যে অর্থোপার্জনের নিশ্চিততম পথ। দুর্ভাগ্যের বিষয় দু’টি— এক, রাজ্যের শাসক বা বিরোধী, কোনও পক্ষই এই সন্ত্রাসের বাইরে থাকে না, ফলে রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতাবদল ঘটলেও সন্ত্রাস থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুক্তি ঘটবে, সে আশা ক্ষীণ; এবং দুই, রাজ্যবাসী এই সন্ত্রাসকে ক্রমেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছেন।

দেড় মাসের নির্বাচনপর্বের শেষ দিনে পৌঁছে যদি প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব কষা হয়, তবে কি হাতে থাকবে শুধুই ভোটদানে নাগরিক-অনিচ্ছা, নির্বাচন কমিশনের অনতিপ্রচ্ছন্ন পক্ষপাত, এবং সাংবিধানিক শীর্ষ পদের অধিকারীদের ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘৃণ্য আচরণ? ইতিবাচক বিষয় কি কিছুই নেই? অন্তত একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করতেই হবে— এ বারের নির্বাচনে কোনও সর্বভারতীয় ‘ওয়েভ’ বা তরঙ্গ ছিল না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগ্রহ এবং উত্তেজনার অভাবের সেটি একটি বড় কারণ বটে, কিন্তু একই সঙ্গে তা খুলে দিয়েছে বিভিন্ন স্থানীয় প্রশ্নের উঠে আসার পরিসর। লোকসভা নির্বাচন প্রকৃত অর্থে দেশের নীতিনির্ধারকদের বেছে নেওয়ার অবকাশ, সেখানে স্থানীয় প্রশ্নের গুরুত্ব না থাকারই কথা। কিন্তু, ভারতীয় রাজনীতির বর্তমান চলন যেমন আঞ্চলিক রাজনীতি-মুখী, তাতে এই নির্বাচনে স্থানীয় প্রশ্ন উঠে আসা সেই রাজনৈতিক বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে কেবল কেন্দ্রই নয়, প্রান্তও সমান গুরুত্বপূর্ণ, এই নির্বাচন এক বিচিত্র পথে সেই সত্যটি জানিয়ে গেল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement