BSNL

যেতে দেওয়াই ভাল

২০১৯ সাল থেকে ৪জি স্পেকট্রামের আশ্বাস দিলেও পরিষেবার শুরুর পথে বাধা তৈরি করেছে খোদ সরকারই। এখনও সারা দেশে বিএসএনএল ৪জি পরিষেবা চালু হলো না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ০৫:৩৮
Share:

ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর পুনরুজ্জীবনের জন্য ১.৬৪ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজে সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে নগদ সাহায্যের অঙ্ক প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা, আর বাকি ১.২০ লক্ষ কোটি টাকার নগদ-বহির্ভূত সাহায্য মিলবে চার বছরে। তা ছাড়া, গ্রামাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে গড়ে তোলা ভারত ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক লিমিটেড (বিবিএনএল)-এর সঙ্গে বিএসএনএল-এর সংযুক্তির কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাতেও পড়েছে সিলমোহর। পরিষেবার মান বাড়াতে ও দেশ জুড়ে বিএসএনএল-এর ফাইবার ভিত্তিক পরিষেবা বিস্তারেও সাহায্য করতে চাইছে কেন্দ্র। প্রশ্ন হল, নরেন্দ্র মোদী সরকার যেখানে বারংবার বলে এসেছে যে, সরকারের ‘ব্যবসা করা’র কোনও কারণ নেই, সেখানে এ-হেন পদক্ষেপে প্রশ্ন জাগে, বিএসএনএল-এর মতো একটা লোকসানে চলা সংস্থায় এত সরকারি টাকা ঢেলে কোন জনস্বার্থ পূরণের কথা ভাবা হচ্ছে?

Advertisement

পরিষেবার উন্নতি, বা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের সাধ্যের মধ্যে টেলিকম ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিয়ে আসা— এ ক্ষেত্রে কোনও যুক্তিই খাটে না। এ বছর মার্চের শেষে দেশে তারযুক্ত এবং তারবিহীন টেলিফোন পরিষেবার মোট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১১০ কোটির কাছাকাছি। তার মধ্যে বিএসএনএল-এর মোট গ্রাহকসংখ্যা ১২ কোটি— সেই উপভোক্তাদের মাত্র ৩.৮ কোটি রয়েছেন গ্রামাঞ্চলে। দেশের মোট গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের সাপেক্ষে যার ভাগ ৮ শতাংশেরও কম। এ ক্ষেত্রে সিংহভাগ দখল করে আছে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি। বিশ্বে যে সব দেশে টেলিফোন ও মোবাইল ডেটার শুল্ক সবচেয়ে কম, তাদের একটি ভারত। ফলে, এই পরিষেবাকে সাধারণ মানুষের নাগালে আনার জন্য বাড়তি কোনও উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। তিন বছর আগেও সংস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ঢেলেছিল কেন্দ্র। কিন্তু লাভ হয়নি। সে বছর ৪জি পরিষেবা চালু করার জন্য সরকার থেকে মিলেছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সংস্থার প্রযুক্তি সে ভাবে উন্নত না হওয়ায় নিম্নগামী হয় তার আয়। এবং এমনও অভিযোগ উঠেছে, ২০১৯ সাল থেকে ৪জি স্পেকট্রামের আশ্বাস দিলেও পরিষেবার শুরুর পথে বাধা তৈরি করেছে খোদ সরকারই। ফলে, এখনও সারা দেশে বিএসএনএল ৪জি পরিষেবাই চালু করতে পারল না। অথচ, বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি ৫জি পরিষেবার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এমনকি গত বছর সংস্থা ৯০০ এবং ১৮০০ মেগাহার্টজ় ব্যান্ডে তার অব্যবহৃত ২জি স্পেকট্রাম আত্মসমর্পণ করে, যেখানে এই ক্ষেত্রে অন্যান্য টেলিকম সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ফলে লাভের মুখ দেখতে হলে সংস্থাকে বেশ কিছু ‘অসাধ্য’ সাধন করতে হবে— গ্রাহকসংখ্যা বহু গুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় বাড়াতে এবং ব্যয় কমাতে হবে। বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে যা রীতিমতো কঠিন কাজ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সংস্থার ক্ষতি ১৫,৫০০ কোটি থেকে ৭,৪৪১ কোটিতে নামলেও, আয় কিন্তু বাড়েনি। ফলে আশঙ্কা থেকেই যায়। কিছু দিন আগে কেন্দ্র লোকসানে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ করল। বিএসএনএল-এর ভস্মে ঘি ঢেলে এখন উল্টো পথে যাওয়ার প্রয়োজন কী?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement