West Bengal Medical Council

নির্বাচনের নিয়তি

চার বছর নির্বাচন বন্ধ থাকার পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন হল মেডিক্যাল কাউন্সিলে। সেই প্রক্রিয়ার অনিয়ম সব সীমা ছাড়িয়ে গেল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৩৯
Share:

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। ফাইল চিত্র।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনে শাসক দলের চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষকরা জয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে সভ্যতা ও সৌজন্য। চার বছর নির্বাচন বন্ধ থাকার পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন হল মেডিক্যাল কাউন্সিলে। সেই প্রক্রিয়ার অনিয়ম সব সীমা ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য ভবন নিযুক্ত অস্থায়ী কমিটির দায়িত্ব ছিল নির্বাচন পরিচালনার। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সেই কমিটির অধিকাংশ সদস্যই শাসক দলের প্রার্থী হয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। স্বভাবতই নির্বাচন পরিচালনায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নির্বাচন প্রক্রিয়া করার কথা বলেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সংবাদে প্রকাশ, অস্থায়ী কমিটির সদস্যদের সুপারিশে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার তথা নির্বাচন আধিকারিক সেই শর্ত খারিজ করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, যথেচ্ছ বিধিভঙ্গ করেছেন শাসক দলের চিকিৎসকেরা। ড্রপ বক্সে গোছা গোছা ব্যালট ফেলার ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। ব্যালটপত্রে বিস্তর গোলমাল মিলেছে— কোনওটায় বিরোধী প্রার্থীর নাম পাওয়া যায়নি, কোনওটায় শাসক দলের প্রার্থীর নাম একাধিক বার উল্লিখিত হয়েছে। অপ্রত্যাশিত ভাবে গণনা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে, দীর্ঘায়িত হয়েছে। গণনার সময়ে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিলেন না। দু’পক্ষের প্রার্থীরাই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিধিভঙ্গের নালিশ দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

Advertisement

আদালত কী রায় দেবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু দলীয় আকচা-আকচির বাইরে যে একটিও নির্বাচন সম্পন্ন হতে পারে না পশ্চিমবঙ্গে, তা আবার বোঝা গেল। পুরসভা, পঞ্চায়েত বা বিধানসভা নির্বাচনে ‘ছাপ্পা ভোট’, ভোটারদের ভীতিপ্রদর্শন, বিরোধী প্রার্থীদের মারধর, রাস্তায় উন্মুক্ত হিংসাও এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। বিহার বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন অনেক বেশি হিংস্র, তা গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠিত। শাসক দল যে নির্বাচনের দিনগুলিতে পুলিশ-প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহার করবে, তা-ও এখন প্রত্যাশিত। তাই পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও মাত্র আটাশ হাজার ভোট গ্রহণে এবং ভোট গণনায় ব্যাপক অরাজকতা কাউকে আশ্চর্য করে না।

তবু এই নির্বাচনী গোলযোগের সংবাদ আঘাত না করে পারে না। তার কারণ, এতে সম্পৃক্ত সকলেই চিকিৎসক, অনেকে চিকিৎসক-অধ্যাপক। সমাজ যাঁদের এক বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে। দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত মানুষ সামান্য কিছু টাকা বা সুবিধার প্রলোভনে ক্ষমতাসীনের হয়ে নির্বাচনী সন্ত্রাস করে, এই ধারণাই প্রচলিত। আইএমএ, এমসিআই-এর মতো সংগঠনের নির্বাচনে হিংস্রতা দেখাচ্ছে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত, উচ্চশিক্ষিত মানুষরাও নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে একই রকম রুচি-বিবর্জিত কাজ করছেন। ফলে গণতন্ত্রে ভরসা হারিয়ে যেতে চায়। প্রতারণা, গা-জোয়ারি, প্রকাশ্যে আইনের প্রতি তাচ্ছিল্য, নির্বাচন আধিকারিকদের দলদাসে পরিণত করা, বিরোধীর প্রতি অপরিমিত হিংসা এবং সত্যের শবদেহের উপরে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাভাষণ, এই হল আজ সর্বস্তরে ‘ভোট করানোর’ রীতি। জনমত গঠনের দ্বারা, সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে ন্যায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন অতীত। গণতন্ত্রের এই গলিত, স্থবির রূপ নিয়ে বাঁচাই কি বাঙালির নিয়তি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement