আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন চা শিল্পের। শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে এক হাজার কোটি টাকা অনুদানের আর্জি জানিয়েছে টি বোর্ড। তাদের লক্ষ্য, এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র চাষিদের উন্নয়ন, উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অর্থোডক্স চা তৈরিতে ভর্তুকি, দেশ-বিদেশে চায়ের বাজার বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেওয়া-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ণ। প্রসঙ্গত, বহু দেশের তুলনায় ভারতে চা বিক্রি এখনও কম। তা ছাড়া এই শিল্পে আর্থিক সঙ্কটও বিদ্যমান। তাই কার্যকর মূলধনের ঋণে সুদের উপর ভর্তুকির আর্জি জানানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রকের কাছে। পাশাপাশি প্রস্তাব করা হয়েছে, ছোট-মাঝারি শিল্পের চা-ব্যবসায়ীদেরও সহজ ও কম সুদে ঋণের প্রকল্পে শামিল করার।
প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অধিকাংশ চা পাতার জোগান দিয়ে আসছে ছোট চা বাগানের ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য চা প্রস্তুতকারী রাজ্যগুলির চিত্রটিও প্রায় একই রকম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট চা উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি জোগান দেন এই ব্যবসায়ীরা। মুনাফার মুখ দেখতে অনেকে তাঁদের ছোট কৃষি জমিতেই অন্যান্য ফসলের বদলে চা চাষ শুরু করেন। কিন্তু কৃষি জমিতে চা চাষ করলে তা অঞ্চলের খাদ্যশৃঙ্খলা ব্যাহত করতে পারে বলে প্রশ্ন ওঠে প্রশাসন মহলেই। প্রশ্নটি আজও রয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ধান-পাটের জমিতে চা চাষ করলে চাষের জমির চরিত্র পরিবর্তন হয়। কারণ, ধান হল কৃষি। আর, চা বাণিজ্য। আইনের চোখে চা চাষ করলে জমি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়, তাই জমির চরিত্র পরিবর্তন হয় কৃষি থেকে বাণিজ্যে। এর জন্য চাই ভূমি দফতরের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’। এ ব্যাপারে বামফ্রন্ট সরকার প্রথম দিকে কোনও পাকাপোক্ত নীতি না নিলেও পরে জমির চরিত্র পরিবর্তনের অনুমোদন প্রক্রিয়া চালু করে ও কিছু সময় অন্তর বেশ কয়েক জন ছোট চা চাষির বাগানকে বৈধতা দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এঁদের জন্য তেমন কোনও নীতি প্রণীত না হওয়ায় প্রায় সব বাগানই থেকে গিয়েছে অবৈধ। ‘চাষি’-র স্বীকৃতি না পাওয়ায় কৃষকবন্ধুর অনুদান, ফসল বিমার সুরক্ষা কিংবা কিসান ক্রেডিট কার্ডের সুলভ ঋণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছেন এই চা চাষিরা। ব্যবসা বাঁচাতে ফড়েদের খপ্পরে পড়ে ঋণের বোঝা চাপছে অনেকের মাথায়। সাম্প্রতিক কালে টি বোর্ড এই চাষিদের কিছু সুযোগসুবিধা দিলেও সেগুলির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া, বর্তমানে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয় এবং ক্রমহ্রাসমাণ আয়, পরিবেশ পরিবর্তন, নেপাল থেকে সস্তার চা পাতার আগমন পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
এমতাবস্থায় অনুদান তাঁদের পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা করলেও, সঙ্কট পুরোপুরি মিটবে না। বরং এই চাষিদের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। এবং সর্বাগ্রে প্রয়োজন সরকারি বৈধতা, যার সাহায্যে তাঁরা ব্যবসা চালানোর উপযুক্ত সুযোগসুবিধা পেতে পারেন। বিশেষ করে রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। যে-হেতু চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই চাষিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তাই এই শিল্পের স্বার্থে এঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। না হলে অচিরেই নিজেদের ‘খ্যাতি’ ও ‘শিল্প’ দুই-ই হারাবে এই রাজ্য।