coronavirus

তথ্যের দায়

তৃণমূল স্তর হইতে তথ্যভান্ডার নির্মাণ ও রক্ষণ হইলে অতিমারির গতিপ্রকৃতি বুঝিতে ও আগাম প্রস্তুতি লইতে সুবিধা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ০৫:৫৫
Share:

ফাইল চিত্র।

নির্দেশ নহে, পরামর্শ। তবে তাহার গুরুত্ব এমনই, নির্দেশের ন্যায় গণ্য করিয়া না মানিলে পরে বিপাকে পড়িবার প্রভূত আশঙ্কা। চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিয়োলজির বিশেষজ্ঞ-গবেষকরা দেশ জুড়িয়া সমস্ত জেলাকে কোভিড তথ্যভান্ডার তৈরির পরামর্শ দিয়াছেন। বলিয়াছেন: কোভিড পজ়িটিভিটির হার, সংক্রমণের সংখ্যার উত্থান-পতন ও হাসপাতালে বেড সম্পর্কে প্রতিটি জেলা স্তরে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ ও নথিভুক্ত করা দরকার। শুধু তাহাই নহে, প্রয়োজন, প্রতিটি সপ্তাহ ধরিয়া ধরিয়া তথ্য সংগ্রহ, কারণ-নির্বিশেষে প্রতিটি মৃত্যুর তথ্যের নথিভুক্তি এবং বয়স, লিঙ্গ, গ্রাম বা শহরভিত্তিক অবস্থান অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ। প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য যাচাই করিবার পরামর্শও দিয়াছেন তাঁহারা, যাহাতে বুঝা যায় যে, কোভিডের পরীক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহণ বা সার্বিক ভাবে কোভিড সংক্রান্ত নজরদারিতে সরকারের কোনও খামতি থাকিয়া যাইতেছে কি না।

Advertisement

রাজ্য সরকারগুলি যখন নিয়মিত কোভিড সংক্রান্ত তথ্য দিতেছে, তখন বিশেষজ্ঞদের জেলা স্তরে এহেন নিখুঁত ও সুবিন্যস্ত তথ্যভান্ডার তৈরি করিবার পরামর্শ কেন? অনেক রাজ্য আসলে ঠিক তথ্য দিতেছে না, তথ্য গোপন করিতেছে— এই সন্দেহে। সন্দেহটিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলা যাইবে না। অতি সম্প্রতি বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র কোভিডে মৃত্যুর ‘সংশোধিত’ সংখ্যা প্রকাশ করিয়াছে— বিপুল তথ্য-কারচুপির অভিযোগ উঠিয়াছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে উপচাইয়া পড়া শ্মশান, দাহকার্য বা শেষকৃত্যস্থল, নদীতে ফেলিয়া দেওয়া মৃতদেহের অগণিত ঘটনার তথ্যপ্রমাণ ও তত্ত্ব-পরিসংখ্যান দেখাইয়া অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলিয়াছেন যে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া কোভিড-মৃত্যুর তথ্যেও ফাঁকি রহিয়াছে, প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। রাজ্য বা কেন্দ্র সংক্রমণ বা মৃত্যুর তথ্য কম করিয়া দেখাইলে সাময়িক লাভ যাহাই হউক, আখেরে কোভিড-প্রতিরোধী ব্যবস্থারই ক্ষতি। বরং সব তথ্য যথাযথ নথিভুক্ত হইলে, তথ্যের স্বচ্ছতা থাকিলে অতিমারি মোকাবিলায় সুবিধা হইত, সংক্রমণ হইতে মৃত্যুর প্রকৃত ও সুসংবদ্ধ তথ্য পাইলে এক-একটি রাজ্য বা অঞ্চলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার ও নিখুঁত করা যাইত। বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, কোভিডের দুইটি তরঙ্গেরই সংগৃহীত বা প্রকাশিত তথ্যের মান ও পরিমাণ খারাপ, তাহার জোরে এই ক্রমবিবর্তনশীল অতিমারি রোধের রূপরেখা নির্ধারণ দুঃসাধ্য।

তৃণমূল স্তর হইতে তথ্যভান্ডার নির্মাণ ও রক্ষণ হইলে অতিমারির গতিপ্রকৃতি বুঝিতে ও আগাম প্রস্তুতি লইতে সুবিধা, এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা জেলা স্তরে তথ্যভান্ডারের কথা বলিয়াছেন। কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ প্রতিহত করিতে অবিলম্বে তাহা করা প্রয়োজন। জেলা স্তরে ও অঞ্চলভিত্তিক ক্ষুদ্রতর বিকেন্দ্রিত ব্যবস্থায় তথ্য সংগ্রহ ও নিয়মিত তাহা প্রকাশ করা, বিশেষজ্ঞদের কাছে পৌঁছানোও দরকার। তথ্যের জোগাড়, তাহার বিশ্লেষণ বা মূল্যায়নে সরকারের নজর থাকুক, তথ্য প্রকাশে কোনও রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বাধা না আসে, তাহা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তথ্য সংগ্রহের দক্ষতা, তৎপরতা ও প্রকাশের স্বচ্ছতার কোনও বিকল্প নাই। শুধু কোভিডের ন্যায় অতিমারিকালেই নহে, সর্বাবস্থায়— জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement