Offline classes

বিকল্প নহে

যে সকল শিশু উপযুক্ত সরঞ্জাম, পরিকাঠামোর অভাবে এত দিন অনলাইন ক্লাস করিবার সুবিধা পায় নাই, তাহারা ইহার ফলে উপকৃত হইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:০১
Share:

ফাইল চিত্র।

আজ হইতে পাঠশালা বন্ধ— দুই বৎসর পূর্বে অতিমারি আসিয়া যে নিদারুণ ঘোষণাটি করিয়াছিল, এত দিনেও পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যে তাহাতে বিশেষ নড়চড় হয় নাই। মাঝে কিছু দিনের জন্য নবম হইতে দ্বাদশ শ্রেণির অফলাইন পঠনপাঠন শুরু হইয়াছিল বটে, কিন্তু উচ্চ-প্রাথমিক, প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের কী হইবে, তাহা লইয়া সরকারি স্তরে বিশেষ ভাবনাচিন্তা দেখা যায় নাই। প্রায় দুইটি বৎসর শিশুগুলি বিদ্যালয়ের মুখ দেখিল না, বিদ্যালয় কী তাহা জানিল না, তাহাদের মানসিক বৃদ্ধির পর্ব হইতে দুইটি অমূল্য বৎসর নিঃশব্দে চুরি হইয়া গেল। অথচ, প্রত্যাশিত আলোড়ন জাগিল না। ইহা সবিশেষ শঙ্কার। সম্ভবত সেই বোধ হইতেই রাজ্য সরকার সম্প্রতি ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করিয়াছে। লক্ষ্য, সরকারি সাহায্যপুষ্ট ও সরকার পোষিত উচ্চ-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ের পরিবর্তে কোনও উন্মুক্ত স্থানে পাঠদানের ব্যবস্থা করা।

Advertisement

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য লইয়া সংশয়ের অবকাশ নাই। যে সকল শিশু উপযুক্ত সরঞ্জাম, পরিকাঠামোর অভাবে এত দিন অনলাইন ক্লাস করিবার সুবিধা পায় নাই, তাহারা ইহার ফলে উপকৃত হইবে। কিন্তু এই সময়, যখন সর্বস্তর হইতেই বিদ্যালয় খুলিবার উপর জোর দেওয়া হইতেছে, তখন এমন প্রকল্প গ্রহণ করা হইল কেন? ইহা তো লকডাউনের প্রথম পর্বে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। স্পষ্টতই, এই প্রকল্প বিদ্যালয়ের বিকল্প হইতে পারে না। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্য দিয়া পাঠদান এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার মান নির্ধারণ সম্ভব, সেই ব্যবস্থা পাড়ার শিক্ষালয়ে হইবার উপায় নাই। ইহা নিতান্তই এক সাময়িক ব্যবস্থা। বিদ্যালয় না খুলিবার জন্য ছাত্রছাত্রীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হইতেছে, তাহার সমাধান ইহাতে সম্ভব নহে। এত দিন পর যখন বিদেশে, এমনকি অন্য রাজ্যেও বিধি মানিয়া শিক্ষাঙ্গন খুলিয়াছে, অথবা খুলিবার তোড়জোড় চলিতেছে, তখন এ-হেন কর্মসূচি কি বিদ্যালয় খুলিবার প্রক্রিয়াটিকেই আরও পিছাইয়া দিল না?

সর্বোপরি, বিভিন্ন বোর্ডের অধীন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাধ্যম, পাঠ্যসূচি, পড়াইবার গতি, ছন্দ ভিন্ন। তাহাদের মধ্যে সংযোগসাধন সহজ কথা নহে। যদি শুধুমাত্র সরকারি, এবং সরকার-পোষিত স্কুলগুলির শিক্ষার্থীরাই এই সুযোগ পায়, তবে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কী ব্যবস্থা হইবে? শিক্ষার অধিকার বজায় রাখিতে হইলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনওরূপ বিভাজন কাম্য নহে। সেই কারণেই অবিলম্বে বিদ্যালয় খোলা প্রয়োজন। অতিমারি সম্পূর্ণ নির্মূল হইবে না, ইহা ধরিয়াই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করিতে হইবে। বিদ্যালয় খুলিলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাইতে পারে। কিন্তু নির্বাচন, উৎসবেও তো সংক্রমণ বৃদ্ধি পাইতেছে। সেইগুলি যদি নিয়মবিধি মানিয়া সম্পন্ন করা যাইতে পারে, তবে স্কুল কেন নহে? বাকি সব খোলা রাখিয়া সংক্রমণের ভয়ে শুধুমাত্র বিদ্যালয় বন্ধ রাখা বাস্তববুদ্ধির পরিচায়ক নহে। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিভিন্ন সমীক্ষাও সেই কথাই বলিতেছে। বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হউক। পাড়ায় শিক্ষালয় অবশ্যই চলুক, কিন্তু বিদ্যালয়ে পাঠদানের পরিপূরক হিসাবে, বিকল্প হিসাবে নহে। ইহা শিশুদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। অনেক ক্ষতি এই দুই বৎসরে হইয়াছে। আর পরীক্ষানিরীক্ষার সময় নাই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement