প্রতীকী ছবি।
সমস্ত পড়ুয়ার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়া স্কুল খুলিবার একমাত্র শর্ত হইতে পারে না। বরং এই ক্ষেত্রে সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী এবং শিশুর মা-বাবার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়া অধিক জরুরি। সম্প্রতি এমনটাই জানাইয়াছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেশ কিছু রাজ্যে ধাপে ধাপে স্কুল খুলিবার প্রয়াস লওয়া হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্য উৎসবের মরসুম অন্তে পরিস্থিতি বিচার করিয়া স্কুল খুলিবার পক্ষপাতী। অর্থাৎ, গত দেড় বৎসরের অধিক সময় ধরিয়া অতিমারির কারণে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যে নিদারুণ অচলাবস্থা চলিতেছে, সেই জগদ্দল নড়িবার কিছু সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে। অন্তত, কেন্দ্র-রাজ্য, উভয় সরকারই উপলব্ধি করিয়াছে, একটি গোটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ এইরূপ অন্ধকারাচ্ছন্ন রাখিয়া দেওয়া চলিবে না। অবিলম্বে একটি সমাধানসূত্র প্রয়োজন।
এই উদ্যোগ আশাব্যঞ্জক। আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় সরকারের মূল বক্তব্যটি ঘিরিয়া। পড়ুয়াদের টিকাকরণ ছাড়াই স্কুল খোলা যাইতে পারে— এই কথাগুলির মধ্যে এক চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আছে। টিকাকরণ ভিন্ন অতিমারি আটকাইবার বিকল্প পথ যখন নাই, তখন প্রত্যেক নাগরিকের টিকাকরণ নিশ্চিত করিবার দায়িত্বটি কেন্দ্রীয় সরকারেরই। শিশুরাও ব্যতিক্রম নহে। জুলাই মাস হইতে শিশুদের ভ্যাকসিনের আগমনী-বার্তা শোনা যাইতেছে। অথচ, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় অর্ধেও তাহার দেখা নাই। দেশে যদি সময়মতো তাহা উৎপন্ন না হয়, তবে বিদেশ হইতে আমদানি করা জরুরি ছিল। তাহা হয় নাই। ঠিক কবে শিশুদের প্রতিষেধক দানের কাজ শুরু হইবে, স্পষ্ট উত্তর নাই। উপরন্তু স্কুল খুলিবার তাড়নায় সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন অবস্থায় শিশুগুলিকে বিপদের মুখে ঠেলিয়া দিবার কথা শোনা গেল। কেন্দ্র কি জানে না, তৃতীয় তরঙ্গের মুখে শিশুদের প্রতিষেধক ছাড়া স্কুলে পাঠাইবার পরিণাম কী? শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক বলিয়া তাহাদের কোনও ক্ষতি হইবে না, এইরূপ বিজ্ঞানসম্মত তথ্য কি তাহাদের হাতে আছে?
প্রশ্ন উঠিতে পারে, তবে কি স্কুল খুলিবে না? অবশ্যই খুলিবে। গত দেড় বৎসরে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক যে ক্ষতি হইয়াছে, তাহা অপূরণীয়। পরিকাঠামোর অভাবে অনলাইন ক্লাস করিতে পারে নাই দরিদ্র শিশুরা। তাহাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক পড়াশোনায় চিরতরে ইতি টানিতে বাধ্য হইয়াছে। ইহা আর চলিতে দেওয়া যায় না। সরকারকে অবিলম্বে স্বচ্ছতার সঙ্গে জানাইতে হইবে, প্রতিষেধকের কী ব্যবস্থা হইল। প্রতিষেধকে কেন এত বিলম্ব, ইহাও নাগরিকের জানিবার অধিকার আছে। স্কুল খুলিবার বিষয়টি এই প্রশ্নগুলির সঙ্গেই জড়িত। যদি অবিলম্বে স্কুল খুলিতেই হয়, তবে ‘স্বাভাবিক’ পঠনপাঠন সেখানে চলিবে না। অল্প সংখ্যক পড়ুয়া লইয়া বিদ্যালয় চালাইতে হইবে। সেই সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানিয়া সরকারকেই দিতে হইবে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পৃথক কমিটি গঠন করিতে হইবে। ইতিপূর্বে পঞ্জাব, তামিলনাড়ু-সহ বেশ কিছু রাজ্য স্কুল খুলিয়াও পরে বন্ধ করিতে বাধ্য হইয়াছিল। সুতরাং, কোন কোন রাজ্যে পরিস্থিতি বিচারে স্কুল খুলিতে পারে, সেই বিষয়েও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। পরিকল্পনা ছাড়াই স্কুল খোলা সংক্রান্ত মন্তব্য অত্যন্ত অনুচিত। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ এবং জীবনের প্রশ্ন যেখানে জড়িত, সেখানে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার স্থান নাই।