India-Kuwait

সেতুবন্ধন

মোদীর এ-হেন কুয়েত সফরটি সম্পন্ন হল এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে— গাজ়ায় এখনও তাদের সামরিক হানা অব্যাহত রেখেছে ইজ়রায়েল। একই সঙ্গে তারা আক্রমণ চালাচ্ছে ইয়েমেনেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৫৭
Share:

সংযোগের বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা বিলক্ষণ জানেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে কারণে ‘ভারত থেকে কুয়েত পৌঁছতে চার ঘণ্টা লাগে, কিন্তু (ভারতীয়) প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে লেগে গেল চার দশক’ উক্তিটি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল, উপসাগরীয় ভূরাজনীতিতে এত কাল দিল্লির কোন ফাঁকটি থেকে গিয়েছে। গত এক দশকে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে নরেন্দ্র মোদী গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিল-এর (জিসিসি) অন্যান্য দেশে একাধিক বার সফর করলেও, বাদ ছিল কুয়েত। পূর্বে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে নৈকট্য এবং অন্য দিকে সাদ্দাম হুসেন-এর প্রতি মস্কোর সমর্থনের কারণে, দিল্লির পক্ষে দ্ব্যর্থহীন ভাবে কুয়েতের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি, যখন নব্বইয়ের দশকে ইরাকের রাষ্ট্রনেতা এই ক্ষুদ্র উপসাগরীয় রাষ্ট্রটিকে আক্রমণ করেন। আসলে, তৎকালীন ভূরাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা খুব বেশি বিকল্প খোলা রাখেনি দিল্লির কাছে। সমস্যা হল, এই ব্যবধান মেটাতে তেমন প্রচেষ্টা করা হয়নি। তবে, গত এক দশকে পশ্চিম এশিয়া এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তুলনামূলক ভাবে গাঢ় হয়েছে দিল্লির। এ বার সময় এসেছে এই পারস্পরিক সৌহার্দকে জাতীয় স্বার্থের কাজে লাগানোর।

Advertisement

পারস্য উপসাগরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্রটি হল এই অঞ্চলে একমাত্র রাজতন্ত্র, যারা সফল ভাবে গণতন্ত্রের সঙ্গে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তা-ই নয়, আঞ্চলিক বিষয়েও কুয়েত সাধারণত নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এসেছে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাদ মেটাতে মধ্যস্থতাকারী দেশেরও কাজ করেছে। অন্য দিকে, বিশ্বের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল অধিকারীদের অন্যতম হল কুয়েত, যা পরিচালিত হয় কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (কিয়া) দ্বারা। লক্ষণীয়, এই সম্পদ সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ-যাবৎ ধারাবাহিক ভাবে কুয়েতের প্রথম সারির বাণিজ্য-সঙ্গীদের অন্যতম থেকে এসেছে ভারত— গত অর্থবর্ষেই উপসাগরীয় রাষ্ট্রটির সঙ্গে ভারতের মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অঙ্ক ছিল ১০৪৭ কোটি ডলার। এই একই সময়ে কুয়েত ছিল দিল্লির ষষ্ঠ বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী রাষ্ট্র। তা ছাড়া, সাম্প্রতিক কালে কিয়া-ও ভারতের বাজারে আনুমানিক এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। কুয়েতে আজ প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই সর্বাধিক।

বলা বাহুল্য, মোদীর এ-হেন কুয়েত সফরটি সম্পন্ন হল এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে— গাজ়ায় এখনও তাদের সামরিক হানা অব্যাহত রেখেছে ইজ়রায়েল। একই সঙ্গে তারা আক্রমণ চালাচ্ছে ইয়েমেনেও। এমতাবস্থায় পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি পরিস্থিতি সুদূরপরাহত বলেই ধরে নেওয়া যায়। এর মাঝে সিরিয়ায় আসাদের পতন এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এ-হেন পরিস্থিতি ভারতের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে তার শক্তি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কুয়েতের মতো জিসিসি-র রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কিয়া-র তরফে দেশে বিনিয়োগের পথ সুগম করতে হবে দিল্লিকে। সুযোগ যখন মিলেছে, তার সদ্ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement