রোজ এক মিলিয়ন ডলার জেতার সুযোগ! বেশি কিছু করতে হবে না, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে সাত রাজ্যকে ‘সুইং স্টেট’ তথা ভাগ্যনিয়ন্তা বলে ধরা হয়, তার যে কোনওটির নথিভুক্ত ভোটার হলেই চলবে। আর সই করতে হবে পিটিশনে: আমেরিকার সংবিধানে বলা বাক্স্বাধীনতা ও অস্ত্র রাখার অধিকারের সমর্থনে। নামমাত্র এই শর্তে আমেরিকা তথা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ ইলন মাস্কের পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (পিএসি) নাগরিকদের লটারিতে লক্ষ্মীলাভের পাকা বন্দোবস্ত করায় দেশ জুড়ে হইচই পড়েছে। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ভোটারদের লুকিয়েচুরিয়ে প্রভাবিত করার চক্ষুলজ্জাটুকুও ঝেড়ে ফেলে, এ হল সরাসরি উৎকোচের রাজনীতি। সংবিধান, বাক্স্বাধীনতার সমর্থনে সই জোগাড়, এ সব লোক-দেখানো, কেননা এরই মধ্যে ঘোষিত লটারি-জয়ীদের দেখা গিয়েছে ট্রাম্পপন্থী ভিডিয়ো-বার্তা প্রচারে। এক মিলিয়ন ডলার তো সবাই পাবে না, তবে পেনসিলভেনিয়ায় পিটিশনে নাম লেখালেই পাওয়া যাচ্ছে একশো ডলার, বন্ধুকে নিয়ে এলে আরও একশো, অন্য রাজ্যগুলিতেও কম-বেশি।
রিপাবলিকান দল তথা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক যে মানুষটি, একাধারে বিশ্বের অন্যতম ধনীও, তাঁর এ-হেন রাখঢাকহীন বেপরোয়া কাজে বিস্ময়ের অবকাশ নেই। তবে আশ্চর্য লাগে দেশটি গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের ‘পীঠস্থান’ আমেরিকা বলেই, যে দেশের আইনমতে কোনও ভোটারকে কোনও রকম আর্থিক বা অন্য সুবিধা দেওয়া বা তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া, এবং উল্টো দিকে তা নেওয়াও কঠোর অপরাধ, হতে পারে দশ হাজার ডলার জরিমানা বা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। অর্থের জোরে দেশের আইনকেও রেওয়াত না করা মাস্কের জন্য নতুন কিছু নয়, তবে যে স্পর্ধা ও কৌশলে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটিকে তিনি নিজের পছন্দের প্রার্থীর সুবিধায় কাজে লাগালেন তাতে তাজ্জব বনতে হয়। মনে পড়তে পারে ভারতের কথাও: যেখানে প্রতিটি নির্বাচনের আগে ভোটারদের নগদ টাকা থেকে শুরু করে ঢালাও মদ, পেট ভরে মাংস-ভাত বা বিরিয়ানির দানসত্র খোলার অভিযোগ ওঠে খোদ প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র গেল-গেল রব ওঠে জনপরিসরে। মাস্কের ডলারের গাজরও কাজে এক, চেহারাটি শুধু আলাদা। তিনি শুধু সংবিধান, পিটিশন ইত্যাদির ধুয়ো তুলে সহানুভূতি থেকে ভোট সব কিছু কেনার কায়দাকে একটা পেশাদার, ধোপদুরস্ত কাঠামো দিয়েছেন।
আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস নির্বাচনী আইন ভঙ্গের কথা বলে মাস্ককে সতর্ক করেছে। সেই চেতাবনিতে তিনি নিরস্ত হন কি না তা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে আশঙ্কা হয়, অর্থমূল্যে জনমত কেনার এই টোপ ভবিষ্যতে আমেরিকার নির্বাচনী গণতন্ত্রে একটা সর্বগ্রাহ্য মডেল না হয়ে দাঁড়ায়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট রাজ্যগুলির সুস্পষ্ট বিভাজন আমেরিকার ফেডারাল কাঠামোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, ‘সুইং স্টেট’ নয় এমন কোনও রাজ্য যদি ভবিষ্যতে হাতে-গরম ডলারের লোভে বেসুরো গাইতে শুরু করে, তা রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, রোজকার জীবনযাত্রার খরচ ইত্যাদি সামলাতে ব্যতিব্যস্ত আমেরিকাবাসীর পক্ষে সেই প্রলোভন এড়ানো সহজ নয়। নাগরিকের সচেতন রাজনৈতিক বোধকে ডলারের টোপের সঙ্গে আপস করতে হলে, ক্ষতি গণতন্ত্রেরই।