Higher Secondary Examination

দুই ভাগে

শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকই নয়, সিমেস্টার পদ্ধতির আওতায় পড়বে একাদশ শ্রেণিও। অর্থাৎ, এই বছর যারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চলেছে, একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে সর্বমোট চারটি পরীক্ষা তাদের দিতে হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:২১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বৎসরান্তে একটি নয়, পরীক্ষা হবে দুই ভাগে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সিমেস্টার পদ্ধতি চালু হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছর যারা মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে, ২০২৬ সালে তারা নতুন পদ্ধতিতে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। সংসদ পূর্বেই উচ্চ মাধ্যমিকে সিমেস্টার চালুর প্রস্তাব শিক্ষা দফতরকে পাঠিয়েছিল। কিছু দিন পূর্বে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ২০২৪ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন এবং সিমেস্টার চালুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সম্প্রতি সংসদের সেই প্রস্তাবে শিক্ষা দফতরের সিলমোহর পড়েছে, তদনুযায়ী ১১ বছর পর উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির দু’টি সিমেস্টারের একটি হবে ২০২৫-এর নভেম্বরে, অন্যটি ২০২৬-এর মার্চে। শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকই নয়, সিমেস্টার পদ্ধতির আওতায় পড়বে একাদশ শ্রেণিও। অর্থাৎ, এই বছর যারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চলেছে, একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে সর্বমোট চারটি পরীক্ষা তাদের দিতে হবে। একাদশ শ্রেণির সিমেস্টার দু’টির পরিচালনা করবে সংশ্লিষ্ট স্কুল, দ্বাদশের সিমেস্টার পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে সংসদ।

Advertisement

এই পরিবর্তন অপ্রত্যাশিত নয়। তবে ধোঁয়াশা ছিল পরিবর্তনের সময়কাল, এবং পাঠ্যসূচি নিয়ে। পরীক্ষা পদ্ধতি হিসাবে সিমেস্টারের উপযোগিতার কথা বহু আলোচিত। সবচেয়ে বড় সুবিধা, জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটিতে কোনও একটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা আশানুরূপ না হলে অন্য পর্যায়টিতে তা মেরামতের সুযোগ থাকবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তেও বোর্ড পরীক্ষাগুলির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উপর থেকে বাড়তি চাপ দূর করতে এবং কোচিং-সংস্কৃতির অবসানে সিমেস্টার পদ্ধতির কথা ভাবার প্রস্তাব ছিল। সেখানেও কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে দু’ধরনের প্রশ্নপত্রের প্রস্তাবনা ছিল। প্রথম অংশে এমসিকিউ ধাঁচের প্রশ্ন থাকবে এবং দ্বিতীয় অংশের প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত ভাবে লিখতে হবে। প্রস্তাবে জাতীয় শিক্ষানীতির ছায়া। বস্তুত সংসদ সভাপতি নিজেও দাবি করেছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে তাঁরাই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সিমেস্টার চালু করলেন।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে সার্বিক ভাবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘ দিন দুরারোগ্য রোগে ভুগছে, সেখানে এই নতুন পদ্ধতির প্রয়োগগত দিকটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষাব্যবস্থায় পঠনপাঠনের সময় কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। এই সঙ্কুচিত সময়ে নতুন পাঠ্যক্রম শেষ করে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার গুরুদায়িত্বটি শিক্ষকদের উপর বর্তায়। অথচ, বর্তমানে বহু সরকারি এবং সরকারপোষিত স্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন কে? বিভিন্ন অজুহাতে স্কুল ছুটির ধাক্কায় পর্যাপ্ত শিক্ষাদিবস মিলবে তো? আশঙ্কা অমূলক নয়, যে কোচিং-সংস্কৃতির অবসানের লক্ষ্যে সিমেস্টার পদ্ধতির অবতারণা, শিক্ষকের অভাব এবং বিদ্যালয়গুলির অব্যবস্থা সেই রেওয়াজকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। পরিবর্তনের কৃতিত্বটি নিয়ে ঢাক পেটানোর আগে এই সমস্যাগুলির প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। অবিলম্বে শিক্ষাবিদ, শিক্ষকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে সম্ভাব্য অসুবিধাগুলি নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো শিক্ষাব্যবস্থার ইতিমধ্যেই জরাজীর্ণ পরিকাঠামো এই নতুন পদ্ধতির ধাক্কা সইতে পারবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement