Priyanka Gandhi

একটি সম্ভাবনার জন্ম

আবার সেই কারণেই মনে রাখিতে হইবে, এই সিদ্ধান্ত একটি পদক্ষেপমাত্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১ ০৯:১৭
Share:

ফাইল চিত্র।

উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীদের ৪০ শতাংশ হইবেন মহিলা— প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর এই ঘোষণার পরে বিভিন্ন শিবির হইতে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া মিলিয়াছে। কংগ্রেসের সদস্য বা অনুরাগীরা বলিয়াছেন, এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিক। বিজেপির প্রবক্তারা রায় দিয়াছেন, ইহা অন্তঃসারশূন্য চমক। তৃণমূল কংগ্রেসের সমাচার: তাহারাই এই পথের পথিকৃৎ। নির্বাচনী রাজনীতির পরিচিত বিশারদরা কেহ কেহ উচ্চাঙ্গের হাসি সহযোগে জানাইয়াছেন, যে দল গত বিধানসভা নির্বাচনে সাকুল্যে ৬ শতাংশ ভোট এবং শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়া সাত জন বিধায়ক পাইয়াছিল, তাহার প্রার্থীদের কয় জন পুরুষ আর কয় জন মহিলা, সেই হিসাব কষিয়া লাভ কী? মহিলা প্রার্থীর অনুপাত ১০ হইতে ৪০ শতাংশ করিয়া দিলেই উত্তরপ্রদেশে দলের তিন দশকের মরা গাঙে সহসা জোয়ার আসিবে, এমন প্রত্যাশা নিশ্চয়ই প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বা তাঁহার সতীর্থদেরও নাই। এই বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়াও দিয়াছেন যে, এই পদক্ষেপ কেবল বর্তমান নির্বাচনের কথা ভাবিয়া নহে, ভবিষ্যতের দিকে চাহিয়াও।

Advertisement

ভবিষ্যতের প্রশ্নটিই মুখ্য। নিছক দলের ভবিষ্যৎ নহে, রাজনীতির ভবিষ্যৎ। সমাজেরও। কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত হইতে নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট বা কয়টি আসন সংগ্রহ করিতে পারিবে, তাহা প্রিয়ঙ্কা গাঁধীদের ভাবনা। কিন্তু এই ধরনের পদক্ষেপ যদি তাহার আশু পরিপ্রেক্ষিত বা উদ্দেশ্যকে অতিক্রম করিয়া বৃহত্তর, গভীরতর এবং সুদূরতর তাৎপর্য সৃষ্টি করিতে পারে, সেখানেই তাহার যথার্থ গুরুত্ব। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে মেয়েদের অনুপাত এই দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই কম, অনেক ক্ষেত্রেই ভয়ানক রকমের কম। উত্তরপ্রদেশ তাহাদের অন্যতম। এই ঘাটতি সামাজিক বাস্তবের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন— সমাজে মেয়েরা সর্বক্ষেত্রেই বৈষম্য এবং সুযোগবঞ্চনার শিকার, রাজনীতিও তাহার প্রতিবিম্ব। কিন্তু তাহার অর্থ এমন নহে যে, রাজনীতির পরিসরটিতে সরাসরি কিছুই করিবার নাই, সমাজ পরিবর্তনের মুখ চাহিয়া বসিয়া থাকিতে হইবে। রাজনীতিতে সমাজের ছাপ পড়ে, আবার সমাজও রাজনীতির তরঙ্গে আন্দোলিত হয়, দুইয়ের সম্পর্ক একমুখী কার্যকারণসূত্রে গ্রথিত নহে, পারস্পরিক প্রভাবে প্রভাবিত। প্রার্থী মেয়েরা কে কত ভোট পাইবেন, তাহা কেবল একটি হিসাব। যে সমাজে মেয়েরা সাধারণ ভাবে পশ্চাৎপদ, সেখানে বহু মহিলা প্রার্থী নির্বাচনী ময়দানে সক্রিয় এবং সরব হইবার দৃশ্যটির অভিঘাতই তুচ্ছ করিবার নহে।

আবার সেই কারণেই মনে রাখিতে হইবে, এই সিদ্ধান্ত একটি পদক্ষেপমাত্র। স্বাধীন দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সাত দশক পরে সর্বাধিক জনবহুল রাজ্যটির ভোটে একটি দল ৪০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী মনোনয়ন দিবে— এই ঘোষণা লইয়া এত আলোচনা চলিতেছে, ইহা গৌরবের বিষয় নহে, লজ্জার কারণ। কেবল উত্তরপ্রদেশ নহে, দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মেয়েরা এখনও সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সমস্ত স্তরে পশ্চাৎপদ। এবং সেই পশ্চাৎপদতাকে সচরাচর স্বাভাবিক বলিয়াই গণ্য করা হয়, অগণন নারী নিজেরাও তাহাই মনে করেন। আজও কত শিশুকন্যাকে জন্মের আগেই বিদায় দেওয়া হয়, তাহার প্রকৃত হিসাব কাহারও জানা নাই। আজও পশ্চিমবঙ্গের মতো সংস্কৃতি-গর্বিত রাজ্যে বহু শিশুকন্যা পাচার হইয়া যায়, বিপুল হারে বাল্যবিবাহ চলে, জননী হাসপাতালের শয্যায় সদ্যোজাত কন্যাকে মারিয়া ফেলিবার অভিযোগে খবর হয়। আজও এই দেশের শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক প্রসাদপুষ্ট স্বঘোষিত ধর্মগুরুরা জোর গলায় মেয়েদের অধীনতা এবং বঞ্চনার পক্ষে সওয়াল করেন, প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেন। এই ঘনতমসায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর প্রস্তাব একটি আলোকরেখা নিশ্চয়ই, কিন্তু আলোকরেখার অধিক কিছু নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement