GD Birla School

পাঠশালা বন্ধ

এ কথা সত্য যে, বেসরকারি স্কুলের ফি কখন বৃদ্ধি পাবে, কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা সম্পূর্ণতই স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৫১
Share:

অতিমারির আগমন যে ভারতের শিক্ষাজগৎকে গত দু’বছরে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করেছে, তা নিয়ে তিলমাত্র সংশয় নেই। সম্প্রতি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও সরকারি-বেসরকারি স্কুলের দরজা খুলতে শুরু করেছিল। ছন্দে ফিরছিল ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকের চিরায়ত সম্পর্ক। এই অবস্থায় কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি স্কুলে এমন ঘটনা ঘটল, যার প্রভাব শুধুমাত্র সেই স্কুলগুলির চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ফলে, সেই স্কুলগুলির ঘটনাক্রম বৃহত্তর সমাজের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। স্কুল ফি বৃদ্ধি এবং সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরে অভিভাবকদের একাংশের বিক্ষোভের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতির যুক্তি দেখিয়ে দিনকয়েক স্কুলগুলি বন্ধ রাখা হয়। অতঃপর স্কুলের দরজা খুললেও সকল পড়ুয়ার জন্য খোলা হয়নি। বকেয়া বেতন সম্পূর্ণ মেটানো পড়ুয়ারাই শুধুমাত্র স্কুলে ঢোকার অনুমতি পেয়েছে।

Advertisement

এ কথা সত্য যে, বেসরকারি স্কুলের ফি কখন বৃদ্ধি পাবে, কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা সম্পূর্ণতই স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। স্বাভাবিক সময়ে এ নিয়ে অভিভাবকদের আপত্তি থাকলে তাঁদের বলা যেত যে, পছন্দসই বেতনের স্কুলে সন্তানকে সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিটিকে স্বাভাবিক বলা চলে না। অতিমারি এখনও শেষ হয়নি, এবং অতিমারির কারণে বহু পরিবার যে আর্থিক দুরবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল, তা তারা সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, এমনও নয়। এই অবস্থায় স্কুলগুলি ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে অভিভাবকদের আর্থিক সঙ্গতির কথা বিবেচনা করবে, এমন দাবি করা অন্যায্য নয়। বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করলে তা যথাযথ হত। যাঁরা বর্ধিত ফি দিতে অপারগ, তাঁদের কিছু সুবিধার ব্যবস্থা করা যেত। বিদ্যালয় নিছক কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। বিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষার অধিকারের প্রশ্নটি জড়িয়ে। সুতরাং, এই ক্ষেত্রে তার কাছে সহানুভূতিশীল আচরণ, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করা অন্যায় নয়। যে শিশুগুলিকে স্কুল এক বার নিজেদের ছাত্রছাত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছে, তাদের প্রতি স্কুলেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। অতিমারির কারণে অভিভাবক আর্থিক সঙ্গতি হারিয়েছেন, তার শাস্তি ছেলেমেয়েদের উপর বর্ষিত হলে বিদ্যালয়ের পরিসরটির গৌরব ক্ষুণ্ণ হয়। দেশের সংবিধান যে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে, স্কুলের সিদ্ধান্ত তারও পরিপন্থী।

এই প্রসঙ্গে কলকাতা হাই কোর্টের স্কুল ফি সংক্রান্ত নির্দেশটি উল্লেখযোগ্য— বেতন বকেয়া থাকলেও কোনও বেসরকারি স্কুল পড়ুয়াদের উত্তীর্ণ হওয়া আটকাতে পারবে না; আটকে রাখা যাবে না মার্কশিটও। এই নির্দেশের পশ্চাতেও লুকিয়ে রয়েছে সমস্ত শিশুর শিক্ষার অধিকারের প্রশ্নটি। দুর্ভাগ্য, এই ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বয়ং সেই অধিকারের কথা মনে রাখল না। বস্তুত, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের মধ্যকার সম্পর্কটি পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে এক অবিশ্বাসের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। যেখানে স্কুল এবং অভিভাবক— কোনও পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে পারে না। বরং বিক্ষোভ-আন্দোলন, এমনকি আদালতের হস্তক্ষেপেরও প্রয়োজন পড়ে। শিক্ষার এই ঘোর দুর্দিনে পারস্পরিক সম্পর্কের এ-হেন অবক্ষয় দুর্ভাগ্যজনক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement