Poor Conditions of Road

কাঁটাপথ

প্রায় সারা বছরই শহরের অধিকাংশ রাস্তার কঙ্কালসার চেহারাগুলি বজায় থাকে। শারদোৎসব বা ভোটপর্বের মতো বিশেষ উপলক্ষে তাতে খানিক প্রলেপ পড়ে মাত্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৭
Share:

শারদোৎসব উপলক্ষে সেজে উঠেছে কলকাতা। কিন্তু শহরের রাজপথ মহানগরের সেই তিলোত্তমা রূপের ছোঁয়া যে পায়নি, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের একাধিক রাস্তার বেহাল দশায় সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহনের গতি কমে যাওয়ায় বাড়ছে যানজট, সমস্যায় পড়ছেন পুজোর বাজারমুখী নাগরিকরা। অনেক জায়গায় জোড়াতালি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের জেরে তা আরও এবড়োখেবড়ো হয়ে যাওয়ায় যন্ত্রণা বেড়েছে যাত্রী-সহ চালকদের। শুধু তা-ই নয়, ভাঙাচোরা পথ থেকে ধুলোবালি উড়ে এলাকায় পরিবেশ দূষণও ঘটাচ্ছে। প্রসঙ্গত মাসখানেক আগেই রাস্তা ও যানজট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে গুরুত্ব পেয়েছিল দুর্ঘটনা হ্রাস ও মানুষের প্রাণের দামের প্রসঙ্গও। মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনা সত্ত্বেও যে সংশ্লিষ্ট দফতর বা আধিকারিকদের টনক নড়েনি তার অন্যতম উদাহরণ বাঁশদ্রোণী থানা এলাকায় এক মর্মান্তিক মৃত্যু। ওই এলাকার বহুকাল ধরে একটি খানাখন্দপূর্ণ হয়ে থাকা রাস্তার গর্তে বেসামাল হয়ে পড়া অতিকায় পেলোডারের ধাক্কায় সম্প্রতি মৃত্যু হল এক কিশোরের।

Advertisement

প্রায় সারা বছরই শহরের অধিকাংশ রাস্তার কঙ্কালসার চেহারাগুলি বজায় থাকে। শারদোৎসব বা ভোটপর্বের মতো বিশেষ উপলক্ষে তাতে খানিক প্রলেপ পড়ে মাত্র। তাতে বাইরের চাকচিক্যের লক্ষণীয় বৃদ্ধি হয় বটে, তবে ভিতরের চেহারাগুলি পাল্টায় কি? কেননা প্রতি বছরই যে ভাবে সারাই করা হয়, তাতে কিছু দিনের মধ্যেই সেগুলি ফিরে যায় পুরনো অবস্থায়। এ দিকে বর্ষার একটানা বৃষ্টিতে দুর্বল রাস্তা আরও দুর্বল হয়, যত্রতত্র জল জমে ইতি-উতি খানাখন্দ আরও স্পষ্ট হয়। অথচ, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি বছরভরের দায়িত্ব। সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগও আছে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। ভরা বর্ষায় রাস্তার যথেষ্ট ক্ষতি হয় ঠিকই, কিন্তু অত্যাধুনিক উপায়ে রাস্তার নির্মাণ ও তার মেরামতের কাজটি সুসম্পন্ন হলে এত সহজে রাস্তা বেহাল অবস্থায় পুনরায় আসত কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে সুস্থায়ী ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে রাস্তা নির্মিত হলে তা ঘন ঘন সারানোর প্রয়োজন পড়ে না। এতে নেতা ও তাঁদের স্নেহভাজনদের নির্দিষ্ট সময় অন্তত লক্ষ্মীলাভের বন্দোবস্তে টান পড়ার আশঙ্কা। সেই ভয়েই কি তবে কিছু সময় বাদে সারা বছরই রাস্তার এ-হেন জরাজীর্ণ অবস্থা দেখেও নির্বিকার থাকে পুর-প্রশাসন?

কোনও সভ্য শহরের লক্ষণ হতে পারে কি অপরিষ্কার, অসমান রাস্তা, বেহাল পরিবহণ ব্যবস্থা? অথচ, সেই সব লক্ষণই এই মহানগরে বিরাজমান। রাস্তার পাশের ফুটপাতগুলির অবস্থাও তথৈবচ। কিছু দিন অন্তরই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে সেগুলি। পুনরায় সেগুলি সারানো হয়। কিন্তু অচিরেই সেই টালি ভেঙে বা নড়বড়ে হয়ে ফুটপাতগুলি চলাফেরার অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীকে নামতে হয় রাস্তাতেই। এতে আরও যানজটে আক্রান্ত হয় গাড়ির ভারে ইতিমধ্যেই ন্যুব্জ রাস্তা। এই অশুভ চক্র চলতে থাকে ক্রমাগত। প্রতি বছরই তাই রাস্তার বেহাল অবস্থা জনজীবনে বয়ে আনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। নাগরিকের স্বার্থ রক্ষা যে জনপ্রতিনিধিদের অন্যতম দায়িত্ব, সেটা বার বার তাঁদের মনে করিয়ে দিতে হয় কেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement